১ আগস্ট ২০২১, রবিবার, ১১:৪৩

বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে সাড়ে ৪২ হাজার কোটি টাকা

চলতি অর্থবছরে ঘাটতি ২ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়াতে পারে; ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে চলতি হিসাবের ভারসাম্যও

করোনাভাইরাসের প্রভাবে বছরজুড়ে মন্দাভাব গেছে রফতানি আয়ে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে যাওয়ায় পণ্য আমদানিও কমে গেছে। কিন্তু রফতানি আয়ের চেয়ে সামগ্রিক আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বিদায়ী বছরে পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। এ ঘাটতি আগের বছরের চেয়ে প্রায় ২৮ শতাংশ বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষিত নতুন মুদ্রানীতিতে এ ঘাটতি আরো বেড়ে চলতি অর্থবছর শেষে দুই হাজার ৬০৬ কোটি মার্কিন ডলার বা দুই লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়াতে পারে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরে পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে চলতি হিসাবের ভারসাম্যও।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী বিদায়ী অর্থবছরে (২০২০-২১) চলতি হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ ৩৮০ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। যদিও সেটি আগের অর্থবছরের ৪৭২ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলারের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত অর্থবছরের মুদ্রানীতি অর্থনীতির বহিঃখাতের গতি পুনরুদ্ধার ও বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের চলতি হিসাবে ঘাটতি হ্রাস এবং সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে উদ্বৃত্ত লাভের পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল রাখতে ব্যাপকভাবে সহায়ক ছিল। চলতি হিসাবে এরূপ ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও দেশে সরাসরি নিট বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহসহ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রাপ্তির ফলে সামগ্রিকভাবে লেনদেন ভারসাম্যে উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯২৭ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার। অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে যাওয়ায় বাজারে ডলার উদ্বৃত্ত থাকে। এতে টাকার অবমূল্যায়নের চাপ ছিল। আর এ অবমূল্যায়ন ঠেকানো সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক বিদায়ী অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রা বাজার হতে নিট ৭৭০ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার কেনার কারণে। স্থানীয় মূল্যে যা ৬৫ হাজার কোটি টাকার ওপরে। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে ৬৫ হাজার কোটি টাকার সমমূল্যের উদ্বৃত্ত ডলার কেনার কারণে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন থেকে রক্ষা পেয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতিতে চলতি অর্থবছর শেষে রফতানি আয়ে ১৩ শতাংশ এবং আমদানি ব্যয়ে সাড়ে ১৩ শতাংশ বৃদ্ধির প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। একই সাথে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ প্রক্ষেপণ অর্জন হলে বাণিজ্য ঘাটতি গিয়ে দাঁড়াবে দুই হাজার ৬০৬ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলারে। একই সাথে চলতি হিসাবে ২৫৭ কোটি মার্কিন ডলার ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর পরেও আর্থিক হিসাবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ উদ্বৃত্তের সূত্রে সার্বিক লেনদেন ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত ৫১০ কোটি মার্কিন ডলার হতে পারে। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পাঁচ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে, যা বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী দেশের সাত মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মিটাতে সক্ষম হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, করোনার প্রভাবে বহির্বিশ্বের মতো দেশের অভ্যন্তরেও ভোগ ব্যয় কমে গেছে। কমে যায় পণ্যের চাহিদাও। লকডাউন, অবরোধের কারণে দেশীয় কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হয়। এতে কমে যায় পণ্যের কাঁচামাল আমদানি। আগে থেকেই সামগ্রিক বিনিয়োগ স্থবির ছিল। এর সাথে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব যুক্ত হওয়ায় পণ্যের কাঁচামাল আমদানি বেশি হারে কমে যায়। এতে রফতানি আয়ের মতো আমদানি ব্যয়ও কমে যায়।

তবে আমদানি ব্যয় যে হারে কমেছে, রফতানি আয় কমেছে তার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হারে। আয়ের তুলনায় ব্যয় কমে যাওয়ায় পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যায়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি ছিল যেখানে এক হাজার ৭৮৫ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার, বিদায়ী অর্থবছর শেষে তা প্রায় ২৮ শতাংশ বেড়ে হয়েছে দুই হাজার ৭৮০ কোটি মার্কিন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় চলতি হিসাবের ভারসাম্যও ঋণাত্মক হয়ে গেছে। কারণ আমদানির তুলনায় রফতানি আয় কমে গেলে চলতি হিসাবের ভারসাম্য ঋণাত্মক হয়ে যায়। চলতি হিসাবের ভারসাম্য ঋণাত্মক হওয়ার অর্থই হলো বিদেশী বিনিয়োগ কমে যাওয়া। কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কোনো দেশের বাণিজ্য ঘাটতি বেশি হলে এবং সেই সাথে চলতি হিসাবের ভারসাম্য ঋণাত্মক হলে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়ে যায়। কারণ তাদের বিনিয়োগ ফিরে পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এ কারণেই চলতি হিসাবের ভারসাম্য ঋণাত্মক হলে বিদেশী বিনিয়োগের ওপর ঋণাত্মক প্রভাব পড়ে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/598446