৬ এপ্রিল ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:০১

সঙ্কট উত্তরণ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় বিশিষ্ট নাগরিকদের বিবৃতি

দেশের বিদ্যমান সঙ্কট উত্তরণ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার জন্য দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা যুক্ত বিবৃতি দিয়েছেন। গতকাল দেয়া এই বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ আজ কঠিন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত গণতন্ত্র আজ নির্বাসিত। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নেই। গুম-খুন-অপহরণ-ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতন এবং হত্যা দেশের মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের ব্যর্থতার কারণেই জনগণ আজ আতঙ্কগ্রস্ত। দেশের এ সঙ্কটকালে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।
বিবৃতিতে তারা বলেন, আমরা আরো লক্ষ্য করছি, আগামীকাল ৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে প্রতিরক্ষা চুক্তি কিংবা সমঝোতা স্মারকসহ নানা বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সাথে বাংলাদেশের বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধান না হওয়ায় জনগণ উদ্বিগ্ন ও হতাশ। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি অনুযায়ী দুই দেশের মধ্যে স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে চুক্তি হতে পারে। তবে ভারতের সাথে অতীতের চুক্তির অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। ১৯৭৪ সালে তিন বিঘা করিডোরের বিনিময়ে বাংলাদেশ ভারতকে বেরুবাড়ি দিয়ে দেয়। কিন্তু ৪৩ বছর পার হলেও ভারত বাংলাদেশকে চুক্তি অনুযায়ী তিন বিঘা করিডোর হস্তান্তর করেনি। ফারাক্কাসহ ভারত-বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ৫৪টি অভিন্ন নদীর ওপরে বাঁধ দিয়ে ভারত বাংলাদেশকে প্রাপ্য পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করছে।
বাংলাদেশের পূর্ব, পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলে ভারত, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সীমান্তের অল্প অংশে মিয়ানমার এবং বঙ্গোপসাগর। তিন দিকের সীমান্তে বন্ধু রাষ্ট্র ভারত থাকার কারণে অন্য কোনো দেশের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের নিরাপত্তার ঝুঁকি নেই। তাই বাংলাদেশের জনগণ মনে করে ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি কিংবা সমঝোতা স্মারকের প্রয়োজন নেই। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে বাংলাদেশের জনগণ তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন চুক্তি, সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা বন্ধ, বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস প্রভৃতির ওপর গুরুত্ব দিয়ে দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর ও কার্যকর দেখতে চায়।
তারা বলেন, আমরা মনে করি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি কিংবা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হলে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যাবে এবং স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়বে। তাই দেশবাসীর সাথে আমরাও আশা করি বর্তমান সরকার ও সরকারপ্রধান জনগণকে অন্ধকারে রেখে ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি কিংবা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী যেকোনো চুক্তি কিংবা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা থেকে বিরত থাকবেন। এর ব্যতিক্রম হলে জনমনে ক্ষোভ বৃদ্ধি পাবে। সরকার দেশ ও জাতির স্বার্থে কাজ করলে জনগণ সরকারকে সহযোগিতা করবে। অন্যথায় দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তিসহ যেকোনো দায়-দায়িত্ব সরকারের ওপর বর্তাবে।’
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেনÑ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী, দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, কবি আল মাহমুদ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান ও বীর প্রতীক মেজর জেনারেল (অব:) সৈয়দ মো: ইবরাহিম, দৈনিক সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদ, নয়া দিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সেক্রেটারি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ভাষাসৈনিক মো: আবদুল গফুর, সর্বধর্মীয় সম্প্রীতি সভার কোচেয়ারম্যান সুকোমল বড়–য়া, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো: খোরশেদ আলম, বিএফইউজে সভাপতি শওকত মাহমুদ, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমীন গাজী, বিশিষ্ট কলামিস্ট এরশাদ মজুমদার, বিএফইউজের সহসভাপতি মুন্সী আবদুল মাননান, বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, দৈনিক ইনকিলাবের সিনিয়র সহকারী সম্পাদক আবদুল আওয়াল ঠাকুর, জাতীয় প্রেস কাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, বিএফইউজের সহকারী মহাসচিব মোদাব্বের হোসেন, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, বিশিষ্ট কবি মোশাররফ হোসেন খান। বিজ্ঞপ্তি।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/210007