রাজধানীতে কোরবানির পশুর হাট ১৬ জুলাই থেকে বসার কথা। তবে এরই মধ্যে আসতে শুরু করেছে পশুবাহী ট্রাক। গতকাল গেণ্ডারিয়ার ধূপখোলা মাঠ থেকে তোলা। ছবি : কালের কণ্ঠ
১২ জুলাই ২০২১, সোমবার, ১০:২৫

শর্ত ভেঙে পশুর হাট রাজধানীতে

শর্তানুসারে ১৬ জুলাই থেকে ইজারাদাররা হাট বসাতে পারবেন

রাজধানীর ধূপখোলা ইস্ট এন্ড ক্লাব সংলগ্ন পশুর হাটে ইজারার শর্ত ভেঙে এরই মধ্যে বসানো হয়েছে কোরবানির পশুর হাট। আরো বেশ কয়েকটি এলাকায় জোরকদমে চলছে হাটের প্রস্তুতিমূলক কাজ। অথচ হাটের ইজারা দেওয়ার সময় রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের অন্যতম শর্ত ছিল, কোরবানির পাঁচ দিন আগে বসানো যাবে হাট। এ ছাড়া হাট বসার দুই দিন আগে ইজারাদাররা প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করবেন। তবে সেই শর্ত মানছেন না ঢাকার বেশির ভাগ ইজারাদার। এ বছর কোরবানির ঈদ হবে ২১ জুলাই। ফলে শর্তানুসারে ১৪ জুলাই থেকে প্রস্তুতির কাজ শুরু করে ইজারাদাররা হাট বসাতে পারবেন ১৬ জুলাই থেকে।

করোনা সংক্রমণ বাড়ার কারণে দেশে চলছে কঠোর লকডাউন। সংক্রমণ আরো বাড়লে রাজধানীতে আদৌ কোরবানির পশুর হাট বসবে কি না সেটা নিয়ে দোটানায় রয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। তারা অপেক্ষা করছে সরকারি সিদ্ধান্তের।

গতকাল রবিবার রাজধানীর ধূপখোলা পশুর হাটে ট্রাক থেকে নামাতে দেখা গেছে শখানেক গরু।

এরই মধ্যে সেখানে জমা হয়েছে কয়েক শ গরু। করোনার উচ্চ সংক্রমণ উপেক্ষা করে হাট দেখতে ভিড় জমিয়েছে উত্সুক জনতাও। শুধু তা-ই নয়, এরই মধ্যে হাটে আসতে শুরু করেছে ক্রেতাও। মাস্ক ছাড়াই পাঁচ বছরের নাতি রাহাতকে সঙ্গে নিয়ে হাটে গরু দেখতে এসেছেন পুরান ঢাকার বাসিন্দা সোবহান মালেক। তিনি বলেন, ‘গরু কিনতে না, দেখতে আসছি। আগেভাগে একটু দরদাম কেমন খোঁজখবর নিতাছি। পরে কিনব।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই হাটে আসা বেশির ভাগ গরু বিক্রেতার বাড়ি খুলনা বিভাগে। দেশে করোনার ডেল্টা ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম একটি হটস্পট খুলনা। এ ছাড়া এখনো করোনায় মৃত্যুঝুঁকির উচ্চ তালিকায় রয়েছে বিভাগটি। গতকাল ১৯টি গরু নিয়ে ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু থেকে ধূপখোলা হাটে আসেন হাকিম নামের এক ব্যবসায়ী। এত আগে কেন হাটে এসেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরে পথের ভিতর যানজট হইবে। তার জন্য আগে আসছি।’ ঢাকায় পশুর হাট তো এখনো শুরু হয়নি। ইজারাদার আপনাদের ঢুকতে দিয়েছে? উত্তরে হাকিম বলেন, ‘আমরা আসছি, তারা ঢুকতে দিছে। কিছু বলে নাই।’ মুখের মাস্ক কোথায় জানতে চাইলে হেসে উত্তর, ‘পকেটে।’

এই হাটে গরু নিয়ে আসা অন্তত ১০ ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁদের বেশির ভাগেরই বাড়ি খুলনা বিভাগে। ঝিনাইদহ থেকে গরু নিয়ে চাচার সঙ্গে এই হাটে এসেছেন মোহাম্মদ খোকন। তাঁর চাচার গরুর সংখ্যা ১৯। এত আগে কেন এসেছেন জানতে চাইলে খোকন বলেন, ‘ভালো জায়গা ধরতে আগে আসছি। তা ছাড়া রাস্তাঘাটের ব্যাপার, বলা তো যায় না। তাই আগে আসছি।’ মুখে মাস্ক নেই কেন জিজ্ঞেস করতেই তাঁর সহজ স্বীকারোক্তি, ‘গরুকে ঘাস খাওয়াচ্ছি তো তাই।’

ধূপখোলা পশুর হাটের ইজারাদার মনিরুল হক রবি। কিভাবে শর্ত ভেঙে হাট বসালেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনার কথাগুলো বুঝছি, আপু। আসেন সরাসরি কথা বলব। এটা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।’

করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সারুলিয়ায় একটি স্থায়ী হাটসহ মোট ১১টি হাটের ইজারা দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এর মধ্যে হাজারীবাগের ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজ সংলগ্ন হাট, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট সংলগ্ন হাট, আফতাবনগরের ব্লক ই/এফ/জি/এইচ-এর সেকশন ১ ও ২-এর হাটে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে প্রস্তুতিমূলক কাজ। অন্যদিকে গাবতলীর একটি স্থায়ী পশুর হাটসহ এখন পর্যন্ত মোট ১০টি হাটের ইজারার কাজ শেষ করেছে ঢাকা উত্তর। এর মধ্যে আফতাবনগরের বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং সংলগ্ন হাট, কাওলা-শিয়ালডাঙ্গার হাট, ডুমনি পশুর হাট, ভাটারা-সাঈদনগর পশুর হাট এবং মোহাম্মদপুর-বছিলা পশুর হাটের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। বর্তমানে এসব হাটে চলছে বাঁশ-খুঁটি পোঁতার কাজ। অনেক হাটে প্রস্তুতির কাজও সেরে ফেলা হয়েছে। দূর থেকেই চোখে পড়ে এসব হাটের প্রধান ফটক।

কোরবানির এত আগে রাজধানীতে কিভাবে পশুর হাট বসল—এমন প্রশ্নে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা তাদের সতর্ক করেছি, লিখিত নির্দেশ দিয়েছি। না মানলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। আমরা বুধবারের আগে কোনো হাট বসতে দেব না।’

এ ব্যাপারে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, ‘শর্ত ভাঙার সুযোগ নেই। আমাদের টিম কাজ করছে। কেউ শর্ত ভাঙলে আমরা তার ইজারা বাতিল করে দেব।’

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2021/07/12/1052611