১২ জুলাই ২০২১, সোমবার, ৮:২০

মৃত্যু ২৩০, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাল বার্তা, সরকারি অফিসের কার্যক্রম ভার্চ্যুয়ালি চালানোর নির্দেশ

করোনায় করুণ পরিস্থিতির শঙ্কা

দেশে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। প্রতিদিনই আগের রেকর্ড ভেঙে নয়া রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ও শনাক্তে দুটোতেই নতুন রেকর্ড হয়েছে। একদিনে করোনায় আরও ২৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনায় মৃত্যুতে এ যাবৎকালে এটাই সর্বোচ্চ। একই দিনে দেশে সর্বোচ্চ ১১ হাজার ৮৭৪ জন শনাক্তেরও খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের তাণ্ডব নিয়ন্ত্রণে না এলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি করুণ হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ওদিকে গতকাল এক প্রজ্ঞাপনে সরকারি অফিসের কার্যক্রম ভার্চ্যুয়ালি চালানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এদিকে মৃত্যু সাড়ে ১৬ হাজার ছাড়িয়েছে।
শনাক্তও ১০ লাখ অতিক্রম করেছে। করোনার উপসর্গ নিয়ে প্রতিদিন শনাক্ত হওয়া রোগীর মৃত্যুর চেয়ে বেশি মৃত্যু হচ্ছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক তথ্য জানা গেছে, উপসর্গে প্রায় ৬৪ শতাংশ এবং করোনায় ৩৬ শতাংশ লোক মারা যাচ্ছেন। এ অবস্থায় ভাইরাসটি প্রতিরোধে চলতি মাসের শুরু থেকে চলমান কঠোর লকডাউনেও কমছে না মৃত্যু ও শনাক্তের হার। মানুষও লকডাউন মানছে না খুব একটা। এ অবস্থায় ভাইরাসটির ঊর্ধ্বগতি থামাতে প্রয়োজনে কারফিউ জারির কথা গণমাধ্যমকে বলছেন অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন। তিনি মনে করেন এমন পরিস্থিতিতে করোনা নিয়ন্ত্রণে দেশে চলমান লকডাউনের পরিবর্তে কারফিউ বা ১৪৪ ধারার মতো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা প্রয়োজন। এদিকে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে কারফিউ জারি করা হলে দেশে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। খেটে খাওয়া আড়াই কোটি মানুষের খাবার নিশ্চিত না করে এ কথা চিন্তাও করা যাবে না বলে মত তাদের। একই সঙ্গে করোনা থেকে সুরক্ষায় যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি নাগরিকদের ভ্যাকসিন প্রদানের ওপর জোর দিয়েছেন তারা। এ ছাড়া শনাক্ত রোগীদের আইসোলেশনের ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন। এগুলো নিশ্চিতের মাধ্যমেই করোনা থেকে সুরক্ষা পাওয়া যাবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ও শনাক্তে দুটোতেই নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। আগের রেকর্ড ভেঙে একদিনে করোনায় আরও ২৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনায় মৃত্যুতে এ যাবৎকালে এটাই সর্বোচ্চ। এর আগে গত ৯ই জুলাই দেশে ২১২ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য বিভাগ। এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৬ হাজার ৪১৯ জনে। পুরনো রেকর্ড ভেঙে নতুন করে ১১ হাজার ৮৭৪ জন শনাক্ত হয়েছেন। এর আগে সর্বোচ্চ শনাক্ত ছিল ৮ই জুলাই ১১ হাজার ৬৫১ জন। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত ১০ লাখ ২১ হাজার ১৮৯ জন। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় ৬ হাজার ৩৬২ জন এবং এখন পর্যন্ত ৮ লাখ ৭৪ হাজার ৫০১ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ৬১৩টি পরীক্ষাগারে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৯ হাজার ৮৬০টি নমুনা সংগ্রহ এবং ৪০ হাজার ১৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৬৯ লাখ ৭১ হাজার ১৬৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬১ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ২৩০ জনের মধ্যে পুরুষ ১৩৩ জন আর নারী ৯৭ জন। দেশে এখন পর্যন্ত করোনাতে আক্রান্ত হয়ে পুরুষ মারা গেলেন ১১ হাজার ৫০৮ জন এবং নারী মারা গেলেন ৪ হাজার ৯১১ জন। তাদের মধ্যে বয়স বিবেচনায় ৬০ বছরের উপরে রয়েছেন ১১১ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৫১ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৪২ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১৯ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে রয়েছেন ৭ জন। তাদের মধ্যে বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগের আছেন ৫৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ৩৯ জন, রাজশাহী বিভাগের ২৬ জন, খুলনা বিভাগের ৬৬ জন, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের ৮ জন করে, রংপুর বিভাগের ২২ জন আর ময়মনসিংহ বিভাগের রয়েছেন ৫ জন। মারা যাওয়া ২৩০ জনের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন ১৬৯ জন, বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন ৪২ জন, বাসায় মারা গেছেন ১৯ জন।

এদিকে বিভাগভিত্তিক শনাক্তের হার বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের মোট শনাক্তের ৪১ দশমিক ৭৮ শতাংশ রোগী রয়েছেন ঢাকা বিভাগে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে শনাক্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৯৬১ জন। এই বিভাগে শনাক্তের হার ২৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে শনাক্তের হার সামান্য কমেছে। ঢাকা জেলায় (মহানগরসহ) শনাক্তের হার ২৫ দশমিক ১১ শতাংশ। ময়মনসিংহ বিভাগে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫৫৬ জন। শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ৩১ শতাংশ। চট্টগ্রামে বিভাগে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৫৫৩ জন। শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। রাজশাহীতে শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ১৫৩ জন। শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ। রংপুর বিভাগে শনাক্তের সংখ্যা ৭৪৮ জন। শনাক্তের হার ৩৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ। খুলনা বিভাগে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৫৯১ জন। শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ। বরিশাল বিভাগে শনাক্তের সংখ্যা ৭১০ জন। শনাক্তের হার ৩৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ। একই সময়ে সিলেট বিভাগে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৬০২ জন। শনাক্তের হার ৪১ দশমিক ৯২ শতাংশ।

করোনা নিয়ন্ত্রণে না এলে ১ সপ্তাহে পরিস্থিতি করুণ হয়ে যাবে: করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না এলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি করুণ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ভার্চ্যুয়াল বুলেটিনে অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন এই আশঙ্কার কথা জানান। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এর যে ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন আছে তার মাধ্যমে মৃত্যু শুধু বয়স্ক মানুষের হচ্ছে না, তরুণদেরও হচ্ছে। বিভাগ ওয়ারী বিভিন্ন স্থানে আমরা দেখেছি, সব জেলাতেই কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়েছে এবং সংক্রমণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় রোগীর চাপ বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে এক দিনে ১৫ হাজার শনাক্ত হতে বেশি সময় লাগবে না। ডা. রোবেদ আমিন আরও বলেন, গত মাসে সারা দেশে সংক্রমণের হার অনেক বেশি ছিল। জুন মাসে ১ লাখ ১২ হাজার ৭১৮ জন রোগী সংক্রমিত হয়েছেন। শুধু জুলাইয়ের প্রথম ১০ দিনে প্রায় ১ লাখ রোগীকে সংক্রমিত হতে দেখতে পেয়েছি। আমরা যেভাবে সংক্রমিত হচ্ছি, হাসপাতালে রোগীর চাপ যদি বাড়তেই থাকে আগামী সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে হাসপাতালের শয্যা আর খালি থাকবে না। সারা দেশে গত মাসেও অসংখ্য বেড খালি ছিল, আইসিইউ বেড খালি ছিল। সেই খালি বেডের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। সারা দেশে মাত্র ৩০০’র মতো কোভিড-১৯ আইসিইউ বেড খালি আছে। আমরা লক্ষ করেছি, জরুরি প্রয়োজন ছাড়াও অনেকে বাইরে বের হচ্ছেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে যদি আমরা করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি, পরিস্থিতি অত্যন্ত করুণ হয়ে যাবে বলে মনে করেন ডা. রোবেদ আমিন।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=283205&cat=2