১২ জুলাই ২০২১, সোমবার, ৮:১৫

চট্টগ্রামে আবার বেড়েছে চাল ও মসলার দাম

নেপথ্যে মিলারদের কারসাজি ও পরিবহণ ব্যয়

চট্টগ্রামে মিলারদের কারসাজিতে আবার বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম। প্রতি বস্তা চালে ১০০ থেকে ২০০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন মিলাররা। আড়তদাররা বলছেন, ঢাকা ও উত্তরবঙ্গের মিলাররা আগের দামে কোনো ধরনের চাল বিক্রি করছেন না। তারা চালের প্রতি আইটেমের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। উত্তরবঙ্গ থেকে চাল আনতে আগের চেয়ে খরচও বেশি পড়ছে। ট্রাক ভাড়া আগের চেয়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ফলে চট্টগ্রামে চালের বাজার লাগামহীন।

এদিকে কুরবানিকে সামনে রেখে মসলার বাজারও সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে। কুরবানির সময় ব্যবহৃত সব মসলার দাম ঊর্ধ্বমুখী। জেলার উপজেলাগুলোয় চাল ও মসলার দাম নগরীর চেয়ে আরও একধাপ এগিয়ে। পাহাড়তলী, চাকতাই ও খাতুনগঞ্জের চাল ব্যবসায়ীরা জানান, মিল মালিকরা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এছাড়া বর্তমানে লকডাউনে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে চাল আনতে খরচও আগের চেয়ে বেশি পড়ছে। চাল আনতে ট্রাক ভাড়া ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। উত্তরবঙ্গ থেকে চট্টগ্রামে চাল আনতে ট্রাক ভাড়া ছিল ২৫ হাজার থেকে ২৮ হাজার টাকা। এখন এই ট্রাক ভাড়া দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা। ঢাকা থেকে প্রতি ট্রাক চাল আনতে ভাড়া লাগত ১৮ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা।

এখন ট্রাক ভাড়া ২২ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা। এছাড়া শ্রমিকের মজুরিও বেড়ে গেছে। আগের মূল্যে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে এখন চালের দাম বাড়ছে। বাজারে আতপ চালের মধ্যে মোটা আতপ ৫০ কেজি বস্তা ২০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ২০০ টাকা, বেতি আতপ ৫০ কেজি বস্তা ১০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২৮ নম্বর বেতি প্রতি ৫০ কেজি বস্তা ১০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৬০০ টাকা, কাটারি আতপ ২৫ কেজি বস্তা ৩০০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৭০০ টাকা, নাজিরশাইল (২৫ কেজি) ১০০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৬০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে সিদ্ধ চালের মধ্যে পারি সিদ্ধ বস্তা ৫০ কেজি ১০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৭০০ টাকা, জিরাশাইল সিদ্ধ ২০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৭৫০ টাকা, কাটারি সিদ্ধ (২৫ কেজি) ২০০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৮০০ টাকা এবং স্বর্ণা সিদ্ধ ৫০ কেজি প্রতি বস্তা ২০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৪৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। পাহাড়তলীর খুচরা চাল ব্যবসায়ীরা জানান, রোববার প্রতি কেজি চিকন চাল বিক্রি হয়েছে ৬২-৬৫ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ৫৬ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়। পাশাপাশি প্রতি কেজি মাঝারি আকারের চাল বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ৫০-৫২ টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া মোটা চাল প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৪৬-৫০ টাকা, যা সাত দিন আগে ৪৪-৪৮ টাকা বিক্রি হয়।

চাকতাইয়ের চাল ব্যবসায়ী আলমগীর আলম যুগান্তরকে বলেন, মিলাররা চালের দাম বাড়াচ্ছে। এখানে আমাদের করার কিছু নেই। মিলাররা ধাপে ধাপে মিল পর্যায় থেকে চালের দাম বাড়িয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে আরেক দফা বাড়ানোর কারণে পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম বেড়েছে। যদিও মিল পর্যায়ে চালের সংকট নেই। আমরা চাহিদামতো চাল আনতে পারছি, তবে বাড়তি দর গুনতে হচ্ছে। সেই বাড়তি দরের দায় ভোক্তাকে টানতে হচ্ছে। কারণ বেশি দরে এনে আমাদের বেশি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। এখানে আমাদের কোনো বাড়তি লাভ নেই। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী গোলাম ফারুক যুগান্তরকে বলেন, পাইকারি বাজারে জিরা বিক্রি হয়েছে মানভেদে কেজি ২৮০-৩০৫ টাকা, এলাচ প্রতি কেজি ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে ২ হাজার ২৫০ টাকা, দারুচিনি ২৮০ থেকে ২৬০ টাকা, গোলমরিচ ৪০০ ও লবঙ্গ ১ হাজার টাকা। প্রতিটি আইটেমে এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতা ও ভোক্তারা। খাতুনগঞ্জে কেজিপ্রতি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৮ থেকে ৩০ টাকা। আর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩২ টাকা থেকে ৩৬ টাকায়। পেঁয়াজের দামও কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/news/441991/