১১ জুলাই ২০২১, রবিবার, ৮:০৪

বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস আজ

দেশে লোকসংখ্যার হিসাবে জগাখিচুড়ি

দেশের মোট জনসংখ্যার হিসাব নিয়ে সরকারি-বেসরকারি তথ্যে জগাখিচুড়ি চিত্র। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুসারে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯১ লাখ। অন্যদিকে জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের তথ্য বলছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৬৩ লাখ। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের তথ্য পোর্টালে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৭ কোটি ১০ লাখ উল্লেখ করা হয়েছে। সঠিক সংখ্যাটি কত—সেই প্রশ্নের কোনো সুরাহা নেই।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর অতিরিক্ত মহাপরিচালক আশরাফুল হক অবশ্য কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেই বলেন, ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি দেশের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৯১ লাখ ১০ হাজার (১৬৯১১ মিলিয়ন)।

সরকারের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, দেশে বছরে ২৩ লাখ শিশু জীবিত জন্ম দেয়। আর একই সময়কালে মারা যায় গড়ে ১০ লাখের মতো মানুষ। অর্থাৎ দেশে মোট জনসংখ্যার হিসাবে বছরে যুক্ত হয় ১৩ লাখ মানুষ। অধিদপ্তরের পরিচালক (মা ও শিশু) ডা. মোহাম্মদ শরীফ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জনসংখ্যার পরিসংখ্যান একেবারে নিশ্চিত করে বলা কঠিন। তবে গড় হিসাবে খুব একটা ব্যবধান নেই।’

এদিকে চলমান করোনা মহামারিতে প্রতিনিয়ত অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর খবরে বাতাস ভারি হচ্ছে। একইভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ ও শিশু জন্মের তালিকাও ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে। আবার লকডাউন, হোম অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধসহ সার্বিক বিষয় বিবেচনায় অনেক পরিবার সন্তান জন্মদানের এটাই সঠিক সময় ধরে নিচ্ছে। তাই প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যুহার এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই মহামারি।

এমনই বাস্তবতায় আজ ১১ জুলাই পালিত হচ্ছে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। করোনা মহামারির চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় রেখে এবারের প্রতিপাদ্য—‘অধিকার ও পছন্দই মূল কথা : প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার প্রাধান্য পেলে কাঙ্ক্ষিত জন্মহারে সমাধান মেলে।’ করোনাকালে জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ ও শিশুর জন্ম এবং শিশু ও মাতৃমৃত্যু বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা থেকেই এই প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালের শুরুর দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার একাধিক প্রতিবেদনে এই সময়ে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের ফলে শিশু ও মাতৃমৃত্যু বেড়ে যাওয়াসহ বেশ কিছু শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। বাল্যবিয়ে বৃদ্ধির শঙ্কার কথাও উঠে এসেছে। বর্তমান সময়ে এসে সেসব শঙ্কার সত্যতা মিলছে।

ইউনিসেফের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে ২০২১ সালের প্রথম দিন জন্ম নিয়েছে ৯ হাজার ২৩৬ শিশু। আর বিশ্বজুড়ে প্রথম দিন ভূমিষ্ঠ হয়েছে তিন লাখ ৭১ হাজার ৫০৪ শিশু। এ বছর গোটা বিশ্বে ১৪ কোটি শিশু জন্ম নিতে পারে। আর বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে আট হাজারের বেশি শিশু জন্ম নেয়। এই অবস্থা চলতে থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে জন্ম নিয়ন্ত্রণে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য, মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যুহার কমানো, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা রোধের মতো সূচকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হবে বলে মতামত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ শরীফ বলেন, ‘করোনার প্রথম দফায় আমাদের কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। এরই মধ্যে এর নেতিবাচক কিছু প্রভাব পড়েছে। তবে এ কারণে জন্মহার ঠিক কত শতাংশ বেড়েছে সেটা এখনো সঠিকভাবে জানা যায়নি। সে লক্ষ্যে একটি জরিপ চলছে।

দেশে করোনা সংক্রমণের হার ক্রমশ বেড়ে চলেছে। বাড়তি সংক্রমণ ও অপ্রতুল চিকিৎসাসেবা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্য খাত। এ অবস্থায় জনসংখ্যা দিবস উদযাপন বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক কাজী আ খ ম মহিউল ইসলাম। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পরিবার পরিকল্পনা সেবার মান উন্নয়নে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।

মেরী স্টোপস বাংলাদেশের অ্যাডভোকেসি ও কমিউনেশন বিভাগের প্রধান মনজুন নাহার বলেন, করোনাকালে প্রজনন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে অল্প বয়সে গর্ভধারণ, গর্ভপাত ও অনিরাপদ সন্তান প্রসবের মতো ঘটনা তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। প্রায় প্রতিটি দুর্যোগকালেই অবশ্য এটি একটি সাধারণ প্রবণতা। সে কারণেই করোনা মহামারির প্রথম দুই-তিন মাস পরিস্থিতি বুঝতে সময় নিলেও পরবর্তী সময়ে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সহযোগিতায় মেরী স্টোপস নিরাপদ মাতৃত্ব, পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারসহ এসংক্রান্ত যাবতীয় কর্মসূচি ও তথ্যসেবা প্রদানে কাজ করে যাচ্ছে।

টিম অ্যাসোসিয়েটের টিম লিডার পুলক রাহা এ বিষয়ে বলেন, করোনাকালে স্বাস্থ্য খাতের দুর্বলতা পুরো বিশ্বের নীতিনির্ধারকদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে সব উন্নয়ন একে অন্যের পরিপূরক। পরিবার পরিকল্পনায় এখনই যথাযথ উদ্যোগ না নিলে বর্ধিত জনসংখ্যার চাপে দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে। তাই এখনই সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে। অ্যাপভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে স্বাস্থ্যকর্মীদের দক্ষ করে তুলতে যথাযথ পদক্ষেপ দরকার। বিশেষ করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সুখী পরিবার নামের কল সেন্টার ‘১৬৭৬৭’ নম্বরে কল করে চিকিৎসকের কাছ থেকে সরাসরি সেবা গ্রহণে গ্রামীণ নারীদের আগ্রহী করে তুলতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানান তিনি।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2021/07/11/1052221