১১ জুলাই ২০২১, রবিবার, ৭:৫৯

১৮৫ মৃত্যু, শনাক্ত ৮৭৭২,পাড়া-মহল্লার দোকানপাট সবই খোলা

করোনার রক্তচক্ষু

করোনার রক্তচক্ষুতে তটস্থ পুরো দেশ। বাড়ছে প্রাণহানি-সংক্রমণ। আক্রান্ত মানুষদের চিকিৎসায় হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেয়া সরকারের কঠোর বিধিনিষেধ মানা হচ্ছে না অনেক ক্ষেত্রে। সড়কে মানুষ অবাধে চলাচল করছে। পাড়া-মহল্লায় এখন দোকানপাট সবই খোলা দেখা যাচ্ছে। দেশে গত সপ্তাহের তুলনায় করোনা রোগী শনাক্ত প্রায় ৩৮ শতাংশ বেড়েছে। সংক্রমণের কারণে আগের সপ্তাহের চেয়ে মৃত্যু বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরও ১৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৬ হাজার ১৮৯ জনে। নতুন করে রোগী শনাক্ত হয়েছে ৮ হাজার ৭৭২ জন। মোট শনাক্ত ১০ লাখ ৯ হাজার ৩১৫ জনে দাঁড়িয়েছে। শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ হাজার ৭৫৫ জন এবং এখন পর্যন্ত ৮ লাখ ৬৮ হাজার ১৩৯ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনার নিয়মিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এতে আরও জানানো হয়, ৬১৩টি পরীক্ষাগারে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৬ হাজার ২৩১টি নমুনা সংগ্রহ এবং ২৭ হাজার ৮৮৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৬৯ লাখ ৩১ হাজার ১৫২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬০ শতাংশ।

২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১৮৫ জনের মধ্যে ১২১ জন পুরুষ এবং ৬৪ জন নারী রয়েছেন। এ পর্যন্ত পুরুষ মারা গেছেন ১১ হাজার ৩৭৫ জন এবং নারী ৪ হাজার ৮১৪ জন। বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬০ বছরের উপরে রয়েছেন ৯২ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৫১ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ২২ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১৩ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৫ জন, ১১ থেকে ২০ বছরের ১ জন, শূন্য থেকে ১০ বছরের ১ জন। বিভাগ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগে ৭০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ২০ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৩ জন, খুলনা বিভাগে ৫১ জন, বরিশাল বিভাগে ১০ জন, সিলেটে ৭ জন, রংপুর বিভাগে ১১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩ জন রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় সরকারি হাসপাতালে ১৪৪ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ২৮ জন, বাসায় ১২ জন এবং হাসপাতালে আনার পথে ১ জন মারা গেছেন।

পাড়া-মহল্লায় দোকানপাট সবই খোলা: মহামারি করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ঘোষিত দ্বিতীয় দফার কঠোর লকডাউনে গতকাল মূল সড়কের পাশাপাশি পাড়া- মহল্লার অনেক দোকানপাট খোলা দেখা গেছে। অনেক দোকানি শাটার অর্ধেক খোলা রেখে পণ্য বিক্রি করছেন। কোনো কোনো দোকানে স্বাস্থ্যবিধির বালাই ছিল না। ভিড়ও লক্ষ্য করা গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর টহল কমে যাওয়ার কারণে বিধি লঙ্ঘন করে এক শ্রেণির দোকানি এমন কর্মকাণ্ড করছেন।

গতকালও ঢাকার সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। অনেক স্থানে গাড়ির চাপে ট্রাফিক পুলিশ সিগন্যাল দিতে বাধ্য হয়েছেন। কিছু অসাধু চালক পুলিশি চেকপোস্ট এড়াতে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করেছেন। নানা অজুহাতে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে বিভিন্ন পেশার লোকজন। তবে পুলিশের চেকপোস্টে গাড়ির চালকদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়েছে। যারা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের কোনো উত্তর দিতে পারেননি তাদের জরিমানা করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ছাড়াও ভ্রাম্যমাণ আদালতেরও তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। পুলিশ, র‌্যাব ছাড়াও বিজিবি’র ভ্রাম্যমাণ আদালতের তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে।

গতকাল সড়কে বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার লোকজনের আনাগোনা দেখা গেছে। যে যার মতো ব্যক্তিগত কাজে বেরিয়েছেন। ঢাকার সড়ক ছিল রিকশার দখলে। রাজধানীর বিজয় সরণি, মহাখালী, কাকরাইল ও শাহবাগ এলাকায় সরজমিন ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

গতকাল ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, করোনায় বিধি লঙ্ঘন করে বাইরে বের হওয়ার কারণে পুলিশ ৭৯১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত ২১২ জনকে ১৬ লাখ ৬ হাজার ৪৫০ টাকা আর্থিক জরিমানা করেছে। এ ছাড়াও লকডাউন অমান্য করে যারা বাইরে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছেন এমন ৩৬১টি গাড়িকে ৯ লাখ ৪ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। লকডাউনের প্রথমদিন থেকে এ জরিমানার হার দিন দিন বাড়ছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সরকারি ছুটির দিনে জরিমানার সংখ্যা বেশি। পুলিশ জানিয়েছে, যারাই সড়কে গাড়ি নিয়ে বের হচ্ছে তারা কোনো যৌক্তিক উত্তর দিতে না পারলে তাদের জরিমানা করা হচ্ছে।

গতকাল দুপুর ১২টার দিকে সরজমিন মহাখালীর আমতলী এলাকায় দেখা যায়, একাধিক দোকান খোলা রয়েছে। ক্রেতারা সেখান থেকে বিভিন্ন পণ্য কিনছেন। কোনো কোনো দোকানিকে মাস্ক পরতে দেখা যায়। শরিফ নামে এক কাপড়ের দোকানিকে দোকান খোলা রাখার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে কোনো উত্তর দেননি। যখনই তারা লোকমুখে পুলিশ আসার কথা শুনতে পান তখনই দোকানের দরজা লাগিয়ে দেন। কোনো কোনো দোকানের শাটার অর্ধেক খোলা দেখতে পাওয়া গেছে। গতকাল দুপুরে মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচে লকডাউনের মধ্যেও সিগন্যালে আটকা ছিল কিছু যানবাহন। গাড়ির চাপে সিগন্যাল দিতে বাধ্য হয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। গাড়িগুলো অধিকাংশই প্রাইভেট গাড়ি। তবে কিছু গাড়িকে পুলিশ থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা গেছে।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=283050&cat=2