১০ জুলাই ২০২১, শনিবার, ৭:৫০

বৈধকরণ মেয়াদ বাড়লেও মালয়েশিয়ায় ধরপাকড় চলছে

বৈধকরণ মেয়াদ বাড়লেও মালয়েশিয়ায় ধরপাকড় চলছে

করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় অবৈধ বিদেশি কর্মীদের বৈধকরণ কর্মসূচির মেয়াদ বাড়লেও মালয়েশিয়ায় ধরপাকড় থেমে নেই। গত এক মাসে অন্তত চারটি বড় অভিযানে হাজার খানেক বিদেশি কর্মীকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৭০ জন বাংলাদেশি রয়েছেন। বিদেশি কর্মীদের আটক বিষয়ে দেশটির ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টের বক্তব্য হচ্ছে- গাদাগাদি করে গণবিছানায় থাকা ডকুমেন্টহীন ওই কর্মীদের কারণে দেশটিতে করোনা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। যদিও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো সরকারের এ বক্তব্য মানতে নারাজ। তারা বলছে, অভিযান বন্ধ না হলে অবৈধকর্মীরা এখন যে অবস্থায় রয়েছে তা ছেড়ে বনে-জঙ্গলে পালাতে বা নিজেদের যথা সম্ভব লুকিয়ে রাখতে বাধ্য হবে। তারা করোনাকালে আটক অভিযান বন্ধ রাখতে এবং কোভিড নিয়ন্ত্রণে বৈষম্যহীনভাবে বৈধ-অবৈধ এবং শরণার্থীদের দ্রুত ভ্যাকসিন প্রদানের তাগিদ দিয়ে চলেছে। বাংলাদেশিদের আটক বিষয়ে কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তারা সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় এক কর্মকর্তা করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা এবং বৈধকরণ কর্মসূচি চলমান থাকা অবস্থায় আটক অভিযানের যৌক্তিকতা পর্যালোচনা করতে কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। মিশন বলছে, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় এরইমধ্যে মালয়েশিয়া সরকার অবৈধ বিদেশি কর্মীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ আরও ছয় মাস বাড়িয়েছে। চলতি বছরের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সময়সীমা বলবৎ থাকছে। মিশন মনে করে এতে দেড় লাখ অবৈধ অভিবাসীর বৈধ হওয়ার পথ প্রশস্ত হয়েছে। বৈধতার এই সুযোগ নিতে হবে কোম্পানির মালিকদের মাধ্যমে। তবে বাংলাদেশ কমিউনিটি মনে করে বৈধতার আবেদনের মেয়াদ বাড়লেও সবাই সুযোগটি কাজে লাগাতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ আবেদনের পর পাঁচ-ছয় মাস পার হলেও প্রবাসীদের অনেকে এখনো নতুন পাসপোর্ট পাননি। যথা সময়ে পাসপোর্ট এবং কোনো একটি কোম্পানিতে অ্যানরোল না হলে বৈধতার সুযোগটি তাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে। অবশ্য বাংলাদেশ মিশনের একটি সূত্র দাবি করেছে, করোনাকালে (গত বছরের নভেম্বর থেকে গেল ৩০শে জুন পর্যন্ত) প্রায় দু’ লাখ পাসপোর্টের আবেদন জমা পড়েছে। করোনার ঝুঁকি নিয়েও প্রায় দেড় লাখ পাসপোর্ট বিতরণ করা হয়েছে। বাকিগুলোও ঢাকায় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সার্ভার সংক্রান্ত জটিলতায় কিছু পাসপোর্ট প্রিন্টের অপেক্ষায় রয়েছে জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, সার্ভার ঠিক হলে আগামী দু’এক মাসের মধ্যে তা বিতরণ সম্ভব হবে। বাংলাদেশ মিশন সূত্র এবং মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের বরাতে বারনামা ও মালয়েশিয়ান

দ্য স্টার জানিয়েছে, গত চার সপ্তাহে মালয়েশিয়ায় চারটি বড় আটক অভিযান পরিচালিত হয়েছে। ৬ই জুন থেকে ৬ই জুলাই পর্যন্ত পরিচালিত সমন্বিত ও সাঁড়াশি ওই অভিযানে মোট ৯৩৮ জন অবৈধ অভিবাসীতে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে ইমিগ্রেশন পুলিশ। যেখানে ২৭০ জন বাংলাদেশি রয়েছেন। কাগজপত্র না থাকার অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো ওই গ্রেপ্তার বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলেছে, করোনার কারণে একদিকে কাজ হারানো, অন্যদিকে গ্রেপ্তার আতঙ্ক অবৈধ অভিবাসীদের বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হবে। মানবাধিকার কর্মীদের উদ্বেগের মুখেও মালয়েশিয়া সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামজাহ জয়নুদিন সম্প্রতি দাবি করেছেন- যথাযথ ডকুমেন্টহীন অভিবাসীদের চিহ্নিত করার জন্য অভিযানের বিকল্প নেই। এক সাক্ষাৎকারে হামজা বলেন, যথাযথ ডকুমেন্টেশন থাকলে তাদের লুকিয়ে থাকতে হবে কেন? ওই অভিযান নিয়ে বিরোধী আইনপ্রণেতারাও প্রশ্ন তুলেছেন। মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং আইনপ্রণেতারা অবৈধদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ এবং জাতীয় কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচির সুষ্ঠু বাস্তবায়নে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। মানবাধিকার কর্মীরা আটক অভিযান দুর্বল লোকদের আত্মগোপনে ঠেলে দিতে পারে এবং কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে যে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তা-ও নাকচ করেছেন। এ বিষয়ে মন্ত্রী হামজা বলেন, অভিযান না হলে অবৈধ অভিবাসীরা বেরিয়ে আসার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তিনি পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনি যখন এই লোকদের অবস্থা জানেন না, তখন কেন তাদের সাধারণ ক্ষমা দিতে বলছেন? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খোলাসা করেই বলেন, দেশ এবং মানুষের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে অভিযান চলবে। কারণ অবৈধদের নিয়ে মালয়েশিয়ায় সমস্যাটি অনেক পুরনো। বছরের পর বছর ধরে তা চলছে। স্মরণ করা যায়, মালয়েশিয়ায় প্রায় ৫-৭ লাখ আনডকুমেন্টেড লোকের বাস। তাদের এক তৃতীয়াংশ অভিবাসী কর্মী। যারা কর্মের সন্ধানে দেশটিতে রয়েছেন। এর বাইরে বিশাল একটি সংখ্যা রয়েছে শরণার্থী কিংবা আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে। যাদের গ্রহণে মালয়েশিয়া সরকারের রিজারভেশন রয়েছে। তবে অবৈধ কর্মীদের সাময়িক বসবাস এবং কর্মের সুযোগ প্রদানে চলমান কর্মসূচির (রিক্যালিব্রেশন প্ল্যান) আওতায় ৩০শে জুন পর্যন্ত দুই লাখ ৪৮ হাজার ৮৩ বিদেশি কর্মী নিবন্ধন করেছেন। যার মধ্যে প্রায় ১ লাখ অভিবাসী জেল-জরিমানা ছাড়া নিজ নিজ দেশে ফিরছেন।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=282839&cat=3