১০ জুলাই ২০২১, শনিবার, ৭:৪৬

করোনাকালেও দোষারোপের রাজনীতি-কাদা ছোড়াছুড়ি

বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের মারাত্মক প্রভাব পড়েছে সামাজিক, অর্থনৈতিক, পারিবারিক, সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ প্রায় সব ক্ষেত্রেই। বদলে দিয়েছে নিয়ম-কানুন, পৃথিবীর গতি-প্রকৃতিকেও। শুধু ব্যতিক্রম রাজনীতির ক্ষেত্রে। করোনা সব কিছুকে বদলাতে পারলেও দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে খুব একটা প্রভাব ফেলেছে বলে মনে হয়না। এখনো চলছে দোষারোপের রাজনীতি বা ‘কাদা ছোড়াছুড়ি’। করোনাকালে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যেখানে রাজনীতিতে ঐক্য তৈরী হয়েছে সেখানে বাংলাদেশে বেড়েছে দূরত্ব। বিরোধী পক্ষ থেকেই করোনা মোকাবেলায় যতই পরামর্শ আসুক না কেন সেটিকে আমলে নিতে নারাজ সরকারি দল। উল্টো ঘটছে একে অন্যের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ। করোনা মহামারির এ সময়ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের এমন বিভেদের রাজনীতিতে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। মহামারির এই সময়েও রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন না হওয়াকে দুঃখজনক বলছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, সরকারের উচিৎ হবে, বিরোধীদের পরামর্শকে যথাসম্ভব আমলে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে করোনা মোকাবেলায় কাজ করা। তাতে করে একদিকে দোষারোপের রাজনীতিও বন্ধ হবে অন্যদিকে জনসচেতনতাও বৃদ্ধি পাবে।

সূত্র মতে, বিশ্বের প্রায় দেশের রাজনৈতিক দলগুলো করোনা প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের সমালোচনায় মুখর থাকলেও করোনা ইস্যুতে তারা ঐক্যবদ্ধ। করোনা মোকাবেলায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিরোধী সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেছেন। দেশের এ সংকট মোকাবেলায় সবার মতামত নিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, দেশটির পশ্চিমবঙ্গ সরকারও একই পথ অনুসরণ করেছে। বিশ্বের অনেক দেশই করোনা মোকাবেলায় প্রতিপক্ষকে সাথে নিয়ে একসাথে কাজ করছে। তাদের পরামর্শকে আমলে নিয়ে মহামারি মোকাবেলা করছে। অথচ বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যের পরিবর্তে দোষারোপে ব্যস্ত।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নানা কারণে কঠিন অবস্থার মুখোমুখী দেশ। সারাদেশে কঠোর লকডাউনের মধ্যেই হু হু করে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার। প্রতিদিনই নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে। করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর আতঙ্কের মধ্যেই রাজধানী ঢাকায় বাড়ছে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ। প্রতিদিন ৩০/৪০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এরই মধ্যে বর্ষায় অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের বিভিন্ন জনপদ তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে বন্যার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। লাখ লাখ মানুষের বাড়িঘর ও ফসলি জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বেড়েছে নদী-ভাঙ্গনের তীব্রতা। বন্যা ও ভাঙ্গনকবলিত অনেক মানুষ নিজেদের ফসলি জমি, ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। বন্যা ও নদীভাঙ্গনে প্রতিবছর হাজার হাজার পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়ার মতো সামাজিক-অর্থনৈতিক সমস্যা নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের তাকিদ ও পরিকল্পনার কথা হয়েছে অনেক। প্রতিবছরই এসব খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করা হলেও কাজের কাজ তেমন কিছুই হচ্ছে না। সবক্ষেত্রেই আমলাতান্ত্রিক দক্ষতার অভাব, দুর্নীতি, লুটপাট ও সমন্বয়হীনতার চিত্র উঠে আসে। এসব কারণেই নদীভাঙ্গন, টেকসই বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণের মতো উদ্যোগগুলো ফলপ্রসূ হচ্ছে না। লকডাউনে কর্মহীন লাখ লাখ মানুষের সাথে যোগ হচ্ছে বন্যা ও নদীভাঙ্গনের শিকার আরো হাজার হাজার পরিবার। সামগ্রিক বাস্তবতায় দেশ এখন এক চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে।

নানাবিধ সংকট মোকাবেলা করে দেশকে এগিয়ে নিতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মতামত ও পরামর্শগুলো গণমাধ্যমের মাধ্যমে সরকারের সামনে তুলে ধরছে। কিন্তু সরকার সেগুলো আমলে নিচ্ছেনা। এ মুহূর্তে করোনা লকডাউনে কোটি মানুষের অর্থনৈতিক সংকট মোচন, ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ মোকাবেলায় দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে যথার্থভাবে কার্যকর রাখার বিষয়কেই বেশী গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে সরকারের কাছে পাঁচটি প্রস্তাব তুলে ধরে বিএনপি। সাংবাদিক সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই পাঁচটি জিনিস করোনা নিয়ন্ত্রণে প্রধান টার্গেট হিসেবে নির্ধারণ করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের জিডিপি’র ৬-৭ শতাংশ অর্থাৎ বর্তমান ৬ লাখ কোটি টাকার বিরাট বাজেটের একটি সামান্য অংশ এ খাতে বরাদ্দ করলেই দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে মানবিক সহায়তা দেওয়া সম্ভব। যা দরকার, সেটা হলো সরকারের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা। ঐক্যবদ্ধভাবে এ মহাসংকট মোকাবিলার জন্য আমাদের দলের পক্ষ থেকে পুনরায় উদাত্ত আহ্বান জানাই। বাকি ৪টি প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে দরিদ্র মানুষকে ঘরে রাখার জন্য তাদের ঘরে নগদ অন্তত এককালীন ১৫ হাজার টাকা এবং খাদ্য পৌঁছে দেয়া, মানুষকে বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং মাস্ক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা, ৮০ ভাগ মানুষকে অতি দ্রুত টিকার আওতায় আনতে একটি সমন্বিত ও সুনির্দিষ্ট রোড-ম্যাপ প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন করা এবং বর্তমানে সারাদেশে করোনা আক্রান্ত রোগীদের সর্বাত্মক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। এর আগে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সরকারের বড় প্রকল্পগুলো থেকে কিছু টাকা দিয়ে করোনার টিকা কেনার দাবি জানান। তিনি বলেছিলেন, এই মুহূর্তে জনগণকে বাঁচিয়ে রাখাই হলো মূল কাজ। এজন্য বড় প্রকল্পগুলোর অর্থ থেকে করোনার টিকার ব্যবস্থা করা হোক।

মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা কোনো ভাবেই কাম্য নয় বলে মন্তব্য করে বাজেটের অন্য খাতের টাকা কেটে হলেও সব মানুষের টিকা নিশ্চিত করার দাবি জানান গণফোরাম সভাপতি ড.কামাল হোসেন। গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, দেশের ভয়াবহ ও আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি তে আমরা গভীর উদ্বিগ্ন । এই মুহূর্তে প্রয়োজন মানুষের জীবন রক্ষায় সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, করোনার ভয়াবহতা এবং জীবনহানি বহুগুণ বেড়ে যাবে,যার দায়িত্ব বর্তাবে সরকারের ওপর। সব নাগরিকের জন্য করোনার ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করতে হবে। বাজেটের অন্য খাতের টাকা কেটে হলেও,পৃথিবীর যে কোনো দেশ থেকেই হোক অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে করোনার টিকা আমদানি করতে হবে। ড. কামাল আরও বলেন, পরিস্থিতি আরও ভয়াবহতার দিকে যাওয়ার আগেই অক্সিজেন, ভেন্টিলেশনসহ সব চিকিৎসা সামগ্রীর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করতে হবে। করোনা মোকাবিলায় লকডাউন দিলে লকডাউনের উদ্দেশ্য সফল করতে হলে, দিন আনে দিন খায় এমন মানুষের খাদ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের নিশ্চয়তা দিতে হবে। গার্মেন্ট কল-কারখানা যেভাবে চালু আছে, শ্রমিক কর্মচারী রা দূর থেকে দলবদ্ধ ভাবে গিয়ে কাজ করে, এই অবস্থা বহাল রেখে করোনা মোকাবিলায় সুফল আসবেনা। এমতাবস্থায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞদের সুষ্ঠু মতামত নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি করছি। দুর্নীতিকে জিরো টলারেন্সে নিয়ে আসতে হবে। মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

বিএনপিসহ বিরোধী রাজনীতিক নেতারা যখন করোনা মোকাবেলায় সরকারকে পরামর্শ দিচ্ছে তখন তার উল্টো ব্যাখ্যা আসছে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে। গতকাল সরকারি বাসভবনে ব্রিফিংকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় বিএনপির দেওয়া ৫ দফা প্রস্তাব চর্বিতচর্বণ। এতে সংকট উত্তরণের জন্য নতুন কিছু নেই। ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রস্তাবে সরকারকে পরামর্শ দিলেও একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব কী তা নিয়ে একটি কথাও বলা হয়নি। বিএনপি দেশের এই সংকটে মানুষের পাশে তো দাঁড়ায়ইনি, স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে তাদের ন্যূনতম কোনো সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করতেও দেখা যায়নি। তিনি বলেন, বিএনপি লোক দেখানো প্রস্তাব দিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে। দুর্যোগ কিংবা সংকটে জনগণ থেকে দূরে সরে উট পাখির মত বালিতে মাথা গুঁজে রাখার নীতিই বিএনপির রাজনীতি। করোনাকালেও তারা সেই নীতি অনুসরণ করছে। তিনি বলেন, বিএনপির অপপ্রচার ও মিথ্যাচারের জবাব অনিচ্ছাসত্ত্বেও দিতে হয়। তা নাহলে জনগণ তাদের মিথ্যাচারকেই সত্য বলে ধরে নেবে। শেখ হাসিনা সরকার দিনরাত জনকল্যাণে কাজ করছে আর বিএনপি দেশ ও জাতির দুর্যোগকালে তাদের দায়িত্বশীলতা ভুলে প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার করছে। আওয়ামী লীগ দোষারোপের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দেওয়ার মানসিকতাও আওয়ামী লীগ পোষণ করে না। তিনি আরও বলেন, বিএনপি, আওয়ামী লীগ বিরোধী সব শক্তির অভিন্ন প্ল্যাটফর্ম। তারা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও উন্নয়নবিরোধী সব অপশক্তির মোহনা।

করোনা শুরুর দিকে এক সাংবাদিক সম্মেলনে করোনা ভাইরাসজনিত দুর্যোগ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সহায়তায় ৮৭ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনে সরকারের কাছে প্রস্তাব করে বিএনপি। দুর্যোগ মোকাবেলায় সুনির্দিষ্ট ২৫টি প্রস্তাব তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একইদিন বিএনপির প্রস্তাবকে ‘দায়িত্ব ও কাণ্ডজ্ঞানহীন’ বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, সারা বিশ্বে সব মানুষ যখন একযোগে এই সংকট মোকাবেলায় এক প্লাটফর্মে দাঁড়িয়েছে, তখন অর্বাচীনের মতো মির্জা ফখরুলের বক্তব্য জাতিকে বিভ্রান্ত করে। ২৫ জুন জাতীয় করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সেলের সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, ত্রাণ চুরির যে চিত্র দেশবাসী গণমাধ্যমে দেখেছে তাতে লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায়। কিন্তু আওয়ামী লীগারদের যেন কিছুতেই চরিত্রের পরিবর্তন হয়নি। এর জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, করোনার সমস্যা থেকে উত্তরণের কোনো সাজেশন তো বিএনপি রাখছে না, শুধু অন্ধ সমালোচনাকে রুটিন ওয়ার্কে পরিণত করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতির জন্য সময়টা খুবই চ্যালেঞ্জিং। করোনা মহামারির কারণে সৃষ্ট মানুষের জীবনের হুমকি, অর্থনৈতিক সংটের পাশাপাশি ডেঙ্গুসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে সংকট উত্তরণে যে ধরনের ত্বরিৎ উদ্যোগ, প্রশাসনিক ও আমলাতান্ত্রিক দক্ষতা থাকা দরকার তা নিশ্চিত করতে সরকারকেই মূল ভুমিকা রাখতে হবে। পরামর্শকে সমালোচনা বা রাজনৈতিক দিক থেকে দেখলে হবেনা। রাজনৈতিক দলগুলোর সাম্প্রতিক সময়ের কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার ও বিরোধী দল কাদা ছোড়াছুড়িতেই ব্যস্ত। বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ করা হলে পরের দিন কিংবা ওইদিনই পাল্টা জবাব দিচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। বিরোধী দলের সমালোচনা ইতিবাচকভাবে নিচ্ছে না সরকার। পক্ষান্তরে সরকারের অনেক ভালো উদ্যোগের প্রশংসা না করে সবকিছুতেই ভুল ধরছে বিএনপি। তাদের কার্যক্রমের বড় একটি অংশজুড়েই থাকছে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার কৌশল।

সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমকে বলেন, করোনাকালে সবার প্রত্যাশা ছিল আমাদের রাজনৈতিক রীতিনীতির পরিবর্তন ঘটবে। অতীতের দূরত্ব কিছুটা হলেও মিটবে। দলগুলোর মধ্যে একটা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হবে। কিন্তু বাস্তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে করোনার প্রভাব খুব একটা পড়েনি। রাজনৈতিক দলগুলো অতীতের মতোই ব্যস্ত বিষোদ্গারে। করোনাই যখন তাদের ঐক্যবদ্ধ করতে পারেনি, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে দেশের রাজনীতিতে ভালো কিছু আশা করা যায় না। আমাদের কপালে দুঃখ আছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান একটি গণমাধ্যমকে বলেন, দেশের প্রধান দুটি দলের মধ্যে বিপরীতমুখী অবস্থানটা নিবিড়। জাতীয় স্বার্থকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্যের প্রয়োজন বা দায়িত্ব রয়েছে সেটাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে বিভাজন নয়। বিভাজনটা হল ক্ষমতাকেন্দ্রিক। কীভাবে ক্ষমতাকে আঁকড়ে থাকা যায় এবং কীভাবে ক্ষমতায় আসা যায়। মুখে মুখে জাতীয় ঐক্যের কথা বলা হলে বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি দেখা যাচ্ছে না। উল্টো চলছে বাহাস। এটা হতাশাব্যঞ্জক। তিনি বলেন, করোনাকালেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব না কমায় আমি অবাক হইনি। আমাদের রাজনীতিতে এটাই স্বাভাবিক। বরং বিভাজনের রাজনীতি না হলে তাতে আমি অবাক হতাম। যদি চট করে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি হয়ে যেত তাহলে অবাক হতাম। রাজনৈতিক দলের এমন কর্মকাণ্ডে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে রাজনীতি নিয়ে একটা ভুল বার্তা যাচ্ছে। রাজনীতিতে তারা নিজেদের খুঁজে পাচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিএনপি বারবার সতর্ক করবার পরও সরকার সংক্রমণ প্রতিরোধের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। সরকারের উদাসীনতা, অযোগ্যতা ও দুর্নীতির কারণেই আজকে এ অবস্থা। তিনি আরও বলেন, একদিকে চিকিৎসা ব্যবস্থায় নৈরাজ্য ও দুর্নীতি, অন্যদিকে করোনা টিকার দুষ্প্রাপ্যতা কোটি কোটি মানুষের জীবন অনিশ্চিত করেছে। প্রায় ১৫ মাস সময় নিয়েও সমস্যাগুলো সমাধান করতে না পারার ব্যর্থতা নিয়ে সরকারের পদত্যাগ করা উচিত। মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের অপরিকল্পিত লকডাউন, সাধারণ ছুটি, সীমিত লকডাউন, কঠোর লকডাউনের ফলে মানুষ দরিদ্র হয়েছে। কর্মচ্যুত হয়েছে লাখ লাখ শ্রমিক। দেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক ৮৫ শতাংশ, সংখ্যায় ৫ কোটিরও বেশি প্রকৃত অর্থে কর্মহীন। দরিদ্র ও কর্মহীন মানুষের জন্য সরকার কোনো পরিকল্পিত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।

https://dailysangram.com/post/458164