৮ জুলাই ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৭:১৫

অর্থনৈতিক সংকটসহ জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হবার আশংকা

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ঘোষিত চলমান শাটডাউন বা লকডাউনের কঠোর নজরদারির মধ্যেও বাইরের উপস্থিতি দিনদিন বাড়ছেই। জেল জরিমানা উপেক্ষা করে রাস্তায় নামছে মানুষ। অনেকে মানছে না স্বাস্থ্যবিধি, নেই মাস্ক। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মূলত জীবিকার তাগিদেই সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হতে বাধ্য হচ্ছে। তবে প্রয়োজন ছাড়াও বের হচ্ছেন এমন লোকের সংখ্যাও কম নয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের জন্য জীবিকার ব্যবস্থা করা না হলে আগামী কয়েকদিনে এই উপস্থিতি বহগুণ বাড়বে। একইসাথে অর্থনৈতিক সংকটসহ মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হবার আশংকা করা হচ্ছে।

করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় সরকারের ঘোষিত ফের লকডাউনকে তামাশা বলে মন্তব্য করেছিলেন মির্জা ফখরুল। গত ২৭ জুন এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, সরকার পুনরায় লকডাউন ঘোষণা করেছে যা এখন তামাশায় পরিণত হয়েছে। সরকারের অযোগ্যতা এবং জবাবদিহিহীনতার কারণে লকডাউন সম্পূর্ণ অকার্যকর হয়ে পড়েছে। গরীব সাধারণ মানুষ দিন আনে দিন খায় শ্রেণীর মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা না করে অপ্রাতিষ্ঠানিক সেক্টরের শ্রমিক ও কর্মরত ব্যক্তিদের নগদ টাকা ট্রান্সফারের ব্যবস্থা না করে লকডাউন কখনোই কার্যকর হতে পারে না।
গতকাল কঠোর লকডাউনের ৭ম দিনে নগরীতে ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে ট্রাফিক পুলিশকে। অনেক স্থানে রীতিমত যানজটও দেখা গেছে। শেরে ই বাংলা নগর ট্রাফিক জোনের মিরপুর ও দারুসসালামে দায়িত্বরত সার্জেন্ট সুলতান জানান, লকডাউনের মধ্যেই অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা প্রতিষ্ঠান খুলেছে। কিছু কিছু দোকনপাটও খুলছে। তাই ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ বেশি। তারপরেও আমরা বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে কাজ করছি। শহর জুড়ে রয়েছে সেনাবাহিনীর তৎপরতা। টহলের পাশাপাশি মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে কাজ করছে সেনাবাহিনী। রাজধানীর দারুস সালামে দায়িত্বরত সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন রাসেল জানান, ঘরের বাইরে বের হওয়া মানুষগুলো কেন বের হচ্ছেন এর কারণ যদি যুক্তিগত ও মানবিক হচ্ছে তাদের আমরা সহযোগিতা করছি, যেন ভোগান্তিতে না পড়েন। পাশাপাশি যাদের কারণ যৌক্তিক না তাদের আমরা জরিমানার আওতায় আনছি। করোনা সংক্রমণ কমাতে যে লকডাউন চলছে তা থেকে কার্যকর ফলাফল পেতে সাধারণ মানুষের সচেতনতার ওপর সবচে বেশি জোর দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরকার ঘোষিত কঠোর বিধি-নিষেধ ও বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে পেটের দায়ে রিকশা নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন পারভীন আক্তার। অসুস্থ স্বামী ও সন্তানের মুখে দু-মুঠো খাবার তুলে দেয়ার জন্য প্রতিদিনই রিকশা চালান এই নারী। কিন্তু বিধি-নিষেধের কারণে পথে পথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বাধার মুখে পড়তে হয় তাকে। পারভীন বলেন, আমার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। প্রায় এক বছর ধরে আমি রিকশা চালাচ্ছি। আমার আয়ে সংসারে রুটি-রুজির ব্যবস্থা হয়। তিনি বলেন, এই করোনার মধ্যে সরকার লকডাউন দিয়েছে। আমরা কীভাবে খাব, কীভাবে চলবে? রাস্তা-ঘাটে পুলিশ। তারা পথে পথে আমাদের হয়রানি করে। রিকশা উল্টাইয়ে থুয়ে দেয়। এখন তো আমার না খেয়ে মরার দশা। তিনি আরও বলেন, অনেক এলাকায় কমিশনার আছে, অনেক এলাকায় মতব্বর আছে। কিন্তু থাকলে কী হবে, আমাদের তো তারা দেয়নি। আমাদের মোবাইল নম্বর আছে। আমাদের বাড়ির ঠিকানা আছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত আমরা একমুঠো চালও পাইনি।

গুলিস্তানে রাকিব নামে এক ব্যক্তি বলেন, কিছু কিছু অফিস ছাড়া অন্যগুলো খোলা আছে, তাহলে তো সড়কে মানুষ বের হয়েছে। আমাদের অফিস খোলা, না গেলে কি চাকরি থাকবে? তাহলে আমাদের মতো মানুষদের তো বের হতেই হবে। এখন যেহেতু অফিস যেতে হবে তাই কেউ হেঁটে যাচ্ছ। কেউ রিকশায় যাচ্ছে। এছাড়া কর্মজীবী মানুষও বের হয়েছে কাজের আশায়।

সিএনজিচালক মোহম্মাদ রহমতুল্লাহ বলেন, গতকয়েকদিন ধরে ঘরে বসেছিলাম। আবার বাইরে বের হলেও ট্রাফিক পুলিশের মামলায় পড়তে হচ্ছে। এমন করে ঘরে বসে থাকলে খাবার যোগাড় করতে পারবো না। তবুও জীবিকার তাগিদে ঝুঁকি নিয়ে বের হয়েছি। রাজধানীর বিজয় সরণী এলাকার রিকশাচালক সাদমান বলেন, প্রথম দুই-তিন দিন লকডাউনের কার্যকারিতা ছিল সড়কে। এরপর থেকে মানুষ কাজে বের হচ্ছে। প্রথম দুই-তিনদিন তো তেমন ট্রিপই পাইনি। এরপর থেকে ট্রিপ পাচ্ছি ভালোই।
গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও প্রাইভেট কারে চলাচল বেশি। রাস্তায় সিএনজি ও রিকশার সংখ্যাও বেড়েছে। সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ অনুযায়ী বিধিনিষেধ কার্যকরের প্রথম দিন থেকে গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু একই সঙ্গে দেখা গেছে শহর জুড়ে প্রাইভেট কার চলছে। এ ব্যবস্থাকে একটি বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন পরিবহন খাত সংশ্লিষ্টরা। গার্মেন্টস কারখানাগুলো বরাবরই অন্যসব সরকারি বিধিনিষেধের আওতার বাইরে ছিল। ২০২০ সালের লকডাউনেও যখন সবকিছু বন্ধ ছিল, তখন গার্মেন্টস কারখানাগুলো খোলা রাখা হয়। এবারও শুরু থেকেই গার্মেন্টসসহ শিল্প-কারখানাগুলো বিধিনিষেধের বাইরে ছিল। দেশের বিভিন্ন জায়গায় দোকানের কর্মচারীরা যে বিক্ষোভ করেছে সেখানে তাদের অন্যতম যুক্তি ছিল, যেখানে সব শিল্প-কারখানা খোলা আছে সেখানে শুধু মার্কেট-শপিংমল বন্ধ করে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কীভাবে থামানো যাবে? এবারের কঠোর লকডাউনেও গার্মেন্টস খোলা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক আব্দুল হামিদ বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত সাংঘর্ষিক। তিনি বলেন, কিছু খোলা রেখে কিছু বন্ধ রেখে তো হয় না। এটা তো পুরোপুরি বৈপরীত্য। সবকিছু বন্ধ থাকলে মানুষ তখন উদাহরণ দেখাত না, অজুহাত খুঁজত না।
সূত্র মতে, কিছুদিন আগে সরকার অনুমোদিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে আসে, মহামারি মোকাবিলায় বিধিনিষেধের কারণে ২০২০ সালের মাঝামাঝিতে এক কোটি ৬৪ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্রের কাতারে যুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থার (বি আইডিএস) গবেষকদের একটি দল এই প্রতিবেদনটি তৈরি করে। পোভার্টি ইন দ্য টাইম অব করোনা: ট্রেন্ডস, ড্রাইভারস, ভার্নারেবিলিটি অ্যান্ড পলিসি রেসপনস ইন বাংলাদেশ শীর্ষক এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে বিদ্যমান ২০ দশমিক ৫ শতাংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সঙ্গে নতুন দরিদ্র মানুষগুলো যুক্ত হবে। প্রতিবেদনটির তৈরিতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বিআইডিএস-এর মহাপরিচালক বিনায়ক সেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশে মানবিক এবং অর্থনৈতিক সংকট আরও প্রকট হবে। সরকার ঘোষিত লকডাউনে মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হতে পারে এবং দারিদ্র্যের হার আরও বেড়ে যেতে পারে।

সরকারি বিধি-নিষেধের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সব সরকারি-বেসরকারি অফিস শুধু জরুরি কাজ সম্পাদনের জন্য সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে। প্রয়োজনীয় জনবলকে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় অফিসে আনা-নেওয়া করতে পারবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশে বেশির ভাগ অফিসের নিজস্ব কোনো পরিবহন ব্যবস্থা নেই। একদিকে অফিস খোলা এবং অন্যদিকে রাস্তায় গণপরিবহন নেই। এ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ। প্রতিদিন অফিসে যাতায়াতে বহু টাকা খরচ হওয়ায় মানুষের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভও তৈরি হয়। ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা শারমিন আহমেদ বলেন, অফিস খোলা রাখল কেন? পরিবহন যখন বন্ধ করেছিল তখন তো অফিসও বন্ধ রাখা উচিত ছিল।
সূত্র মতে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি তো হচ্ছেই না, বরং দিন দিন অবনতি হচ্ছে। প্রতিদিনই মৃত্যু ও সংক্রমণের হার রেকর্ড ভাঙছে। কঠোর বিধিনিষেধের (লকডাউন) মেয়াদ আরও এক দফা বাড়ানো হয়েছে। আগামী ১৪ জুলাই বিধিনিষেধের এই মেয়াদ শেষ হবে ১৪ জুলাই। এর মধ্যে গতকাল মৃত্যুর সংখ্যা এই প্রথম দুই শতাধিক অতিক্রম করলো।
দেশের করোনা পরিস্থিতি দিনকে দিন ভয়াবহ রূপ লাভ করছে, এ যেন অপ্রতিরোধ্য। করোনার প্রথম ঢেউ মোটামুটি ঢাকা ও চট্টগ্রামের ওপর দিয়েই বেশিরভাগ প্রবাহিত হয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ রাজধানীর বাইরের অঞ্চলগুলোতেই বেশি। শুধু বেশি বলার মধ্যেই সীমিত থাকলে হবে না, বরং বলা যায় তা অতি উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। গেল মাস থেকৈই চিত্রটি বেশি দেখা যায়। গত ২৪ জুন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা চুয়াডাঙ্গায় এ শনাক্তের হার ছিল ১০০ শতাংশ, ৪১টি নমুনা পরীক্ষার সবই পজিটিভ। গাণিতিকভাবে যেহেতু শনাক্তের হার ১০০ শতাংশের বেশি হতে পারে না, তাই নিশ্চিত করেই বলা যায়, আমরা করোনার সর্বোচ্চ আঘাতে বিপর্যস্ত। এখন দেশের এমন কোনো অঞ্চল নেই যেখানে করোনার ঝুঁকি নেই। তবে রকমফের আছে-মধ্যম ঝুঁকি, উচ্চঝুঁকি এবং অতি উচ্চ মাত্রার ঝুঁকি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৪০টি জেলাই আছে অতি উচ্চ ঝুঁকিতে। সে হিসাবে প্রায় ৬৩ শতাংশ জেলা ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন। যেখানে ৬৩ শতাংশই অতি উচ্চ ঝুঁকিতে, সেখানে বাদবাকি ৩৪ শতাংশ জেলা সংক্রমিত হয়ে অতি উচ্চ ঝুঁকির মাত্রায় আসা সময়ের ব্যাপার মাত্র। তাই দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্যই ‘লকডাউন’ আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা দেখে প্রকৃত লকডাউনের অর্থই যেন মানুষ ভুলে গেছে। কারণ শ্রেণিভেদে বিভিন্ন সময় লকডাউন, বিশেষ লকডাউন, আংশিক লকডাউন, কঠোর লকডাউন, সর্বাত্মক লকডাউন ইত্যাদি চলেছে। লকডাউনকে যে নামেই বিশেষায়িত করা হোক না কেন, তা থেকে কার্যকর কিছুই মিলছে না। লকডাউন কার্যকর না হওয়ার ফলে আজ সারা দেশে করোনা ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। অকার্যকর হওয়ার কারণগুলো অনুসন্ধান না করে অধিকতর কঠোর হলেও কোনো ফল মিলবে বলে মনে করেন না সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে সেনা, বিজিবিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীদের দিয়ে লকডাউন দিয়ে জনগণকে নজরদারিতে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। জেল-জরিমানা উপেক্ষা করে কেন মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে সেটিরই আগে সমাধান করা উচিৎ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা অনুসন্ধান করে বলছেন, কঠোর লকডাউনের পরও মানুষ বের হবার প্রথম কারণ হলো জীবিকা। লকডাউন কার্যকর করার প্রথম শর্তই হলো ন্যূনতম খাদ্য চাহিদা নিশ্চিত করা। এটা কঠিন কাজ কিন্তু অসম্ভব নয়। প্রয়োজন জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একজন ওয়ার্ড কমিশনার খুব ভালো করেই জানেন তার ওয়ার্ডে কোন কোন মানুষের লকডাউনকালীন খাবারের প্রয়োজন হবে। সেই খাদ্যের জোগানে প্রয়োজনীয় অর্থ নিজ নিজ এলাকা থেকেই সংগ্রহ করা সম্ভব। গত বছর অনেকেই রাতের আঁধারে মানুষের বাড়ি বাড়ি খাদ্যপণ্য সরবরাহ করেছে। কিন্তু এবারে তা পরিলক্ষিত হয়নি।

লকডাউন অকার্যকর হওয়ার দ্বিতীয় কারণটি হলো অসচেতনতা ও উদাসীনতা। করোনার মতো একটি ভয়াবহ পরিস্থিতিকে অনেকে আমলেই নিচ্ছেন না। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষজনও এ কাজটি করছেন। বিশেষজ্ঞরা বরাবরই বলেছেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা। সেক্ষেত্রে একটি মামুলি মাস্ক পরিধান করাটাকেই অনেকে খুব কঠিন কাজ মনে করছেন। একটু নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখাকে অনেকেই একবারেই যেন অসম্ভব বলছেন। জনগণের এমন মূর্খতা ও উদাসীনতা এখানে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অপরাধের ব্যবস্থা নিতে না পারা হলো লকডাউন অকার্যকর হওয়ার আরেকটি কারণ। জীবিকার প্রয়োজনের বাইরেও প্রচুর মানুষ আছে যারা অকারণেই ঘুরে বেড়ায়। তাদের আইনের আওতায় আনা যায়নি। যদি এলাকাভিত্তিক, সমাজভিত্তিক মোটিভেশনের কাজটি করা যেত তাহলে মানুষকে অন্তত উদাসীনতা থেকে বিরত রাখা সম্ভব হতো।

লকডাউন অকার্যকর হবার আরেকটি কারণ হচ্ছে নীতিনির্ধারকদের নিজেদের মধ্যকার অস্পষ্টতা। লকডাউনে অফিস খোলা রাখলে যানবাহন খোলা রাখতে হবে। কিন্তু কার্যত যানবাহন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, অথচ অফিস চালু থাকছে। এটি এক ধরনের বৈপরীত্য। লকডাউন যখন নানা কারণে তার কার্যকারিতা হারাল এবং করোনা পরিস্থিতিকে নাজুক অবস্থার মধ্যে ফেলে দিল তখন তা অন্য নাম নিয়ে হাজির হয়েছে-নাম তার ‘শাটডাউন’। উদ্দেশ্য একটাই-সবাইকে ঘরের মধ্যে রাখা। কিন্তু লকডাউনের মতো ঢিলেঢালা কর্মসূচি ও সরকারের দ্বিমুখী নীতির কারণে শাটডাউনেও জনগণকে আটকে রাখা যাচ্ছেনা। তারা বলছেন, এমনভাবে শাটডাউন দিতে হবে যাতে জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছুই বন্ধ থাকে। অফিস-আদালত-পরিবহণ-লোক চলাচল-সবছিুই ১৪ দিন কার্যকরভাবে বন্ধ রাখতে হবে। সেই সঙ্গে দেশের অন্তত ৮০ শতাংশ মানুষকে করোনার টিকার আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মুঈদ রহমান বলেন, আমরা চাই যে কোনো ধরনের কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকার করোনা পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনুক, সেক্ষেত্রে নাম তার ‘লকডাউন’ হোক বা ‘শাটডাউন’। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, যে কারণগুলোর জন্য লকডাউন সফলতা পায়নি, সে কারণগুলোর সুরাহা না করে শাটডাউনকে সফল করা যাবে কি? আমরা মনে করি, এখানে জনপ্রতিনিধিদের এবং সব মতের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের অধিকতর যুক্ত করতে পারলে কিছুটা হলেও সুফল পাওয়া যাবে।

https://dailysangram.com/post/457945