৭ জুলাই ২০২১, বুধবার, ৭:১৩

টিসিবির ট্রাক সেলের লাইনে মধ্যবিত্তরাও

দীর্ঘ হচ্ছে লাইন

গোপীবাগ সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে বেলা ১১টার দিকে দীর্ঘ লাইন। অনেকে ১০টা থেকেই অপেক্ষা করছেন। উদ্দেশ্য ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য কিনবেন। এদের মধ্যে অনেকে আছেন, যারা আগের দিন ঘুরে গেছেন। কিন্তু পণ্য কিনতে পারেননি। অনেকের অভিযোগ মুখ চিনে পণ্য সরবরাহ করা হয়। যে কারণে অনেক ক্রেতা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও পণ্য না নিয়ে ঘরে ফিরে যান। লাইনে যে শুধু নি¤œ আয়ের মানুষ রয়েছেন তা নয়; মধ্যবিত্তরা আছেন। করোনার কারণে যাদের আয় কমেছে; তারাও ভিড় করছেন টিসিবির ট্রাকের কাছে।
রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে চলছে টিসিবির ট্রাক সেল। সাধারণ আয়ের মানুষকে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য সরবরাহ করতেই টিসিবির এই আয়োজন বলে জানিয়েছে সংস্থাটির কর্তারা। রাজধানীর অন্তত ৮০টি স্পটে ট্রাক সেলের কথা রয়েছে। গত ৫ জুলাই থেকে এই বিক্রি শুরু হয়েছে। চলবে আগামী ২৯ জুলাই পর্যন্ত। এর মধ্যে প্রতি ট্রাকে ৫০০-৮০০ কেজি চিনি, ৩০০-৬০০ কেজি মসুর ডাল এবং ৮০০-১২০০ লিটার সয়াবিন তেল সরবরাহের কথা রয়েছে। চিনি ও মসুর ডালের কেজি ৫৫ টাকা এবং তেল ১০০ টাকা লিটার বিক্রি হচ্ছে। প্রতিজন ক্রেতা ২-৪ কেজি চিনি, ২ কেজি ডাল ও ২-৫ লিটার তেল কিনতে পারবেন।
কম দামে পণ্য কেনার জন্য প্রতিটি ট্রাকের কাছেই ভিড় করছেন অসংখ্য মানুষ। গতকাল বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর গোপীবাগ সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারের কাছে দেখা যায় কয়েক শ’ মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের কেউ কেউ জানালেন, তারা সকাল ১০টা থেকে অপেক্ষা করে আছেন। কিন্তু ট্রাক নির্ধারিত সময়ে আসেনি। শামসুল আলম নামের এক ক্রেতা জানালেন, আগের দিন পণ্য কিনতে এসে ব্যর্থ হয়েছেন। পণ্য শেষ হয়ে গেছে বলে পণ্য কিনতে পারেননি। আবার এসেছেন। তবে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও পণ্য পাননি। পণ্য পাবেন কি না তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন। ট্রাকে বসে যারা সেল করছেন তাদের একজন জানালেন, যে পরিমাণ পণ্য দেয়া হয় তার চেয়ে ক্রেতা বেশি। যে কারণে অল্প সময়ের মধ্যে সেল হয়ে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রেতা জানালেন, করোনায় সব তছনছ হয়ে গেছে। চাকরি চলে গেছে। প্রায় ৬ মাস। যে কারণে উচ্চশিক্ষিত হয়েও টিসিবির ট্রাকের সামনে লাইন দিতে হয়েছে পণ্যের জন্য। কর্ম হারিয়ে, ব্যবসাবাণিজ্য হারিয়ে অনেকেই এখন সাধারণ আয়ের মানুষের কাতারে এসে দাঁড়িয়েছেন।
সেল নিয়ে অনেক অভিযোগই রয়েছে। নির্ধারিত স্থান থেকে ট্রাক আশপাশে রাখার অভিযোগ রয়েছে। মুখ চিনে পণ্য সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে। তেল আগেভাগে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা বলা হয় ট্রাক থেকে। একাধিক ক্রেতা বলেন, তাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় পণ্যই হলো তেল। বাকি দুটোর অতো প্রয়োজন পড়ে না।
এ দিকে, টিসিবির পণ্য কেনাবেচায় স্বাস্থ্যবিধি না মানার অভিযোগ উঠেছে। যারা লাইনে অপেক্ষা করছেন, তারাও স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। গায়ে গায়ে লেগে দাঁড়িয়ে পণ্য কেনার জন্য অপেক্ষা করেন ক্রেতারা। তবে একাধিক ক্রেতা বলেছেন, যেভাবে আস্তে আস্তে পণ্য সরবরাহ করা হয়, মুখ চিনে চিনে পণ্য সরবরাহ করা হয় তাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাঁড়িয়ে থাকা অনেকটাই কষ্টের ব্যাপার।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/593174