৭ জুলাই ২০২১, বুধবার, ৭:১৩

করোনায় দৈনিক মৃত্যুতে শীর্ষ দশে বাংলাদেশ

রেকর্ড সাড়ে ১১ হাজার শনাক্ত মৃত্যু ১৬৩

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপটে দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু উভয় সূচকই ঊর্ধ্বমুখী। বিশ্বের বিভিন্ন আক্রান্ত অঞ্চলে করোনার প্রভাব যেখানে কমে আসছে, সেখানে বাংলাদেশে চিত্র পুরোটাই বিপরীত। ফলে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু উভয় সূচকে বাংলাদেশ খুব দ্রুত শীর্ষ তালিকায় চলে যাচ্ছে। গত কয়েক দিনের পরিসংখ্যানের জেরেই ওয়ার্ল্ডোমিটারের তালিকার দৈনিক মৃত্যুর শীর্ষ দশে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। অবস্থান করছে আট নম্বরে। যেখানে কিছুদিন আগের করোনায় বিপর্যস্ত হওয়া ভারতের অবস্থান ছয় নম্বরে। দৈনিক মৃত্যুর তালিকায় শীর্ষে দেখা গেছে ব্রাজিলকে। পরের দুইটি দেশ হলো রাশিয়া ও আর্জেন্টিনা। অন্য দিকে দৈনিক নতুন সংক্রমণে বাংলাদেশ অবস্থান করছে ১১ নম্বরে। যেখানে শীর্ষ তিন দেশ হচ্ছে ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও যুক্তরাজ্য। ওয়ার্ল্ডোমিটারের গত সোমবারের তালিকা পর্যালোচনা করে এ তথ্য জানা গেছে।
এ দিকে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৬৩ জন এবং শনাক্ত হয়েছেন ১১ হাজার ৫২৫ জন। এটি এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ শনাক্ত। আগের দিন সোমবার সর্বোচ্চ শনাক্ত ছিল ৯ হাজার ৯৬৪ জন। সোমবার সর্বোচ্চ ১৬৪ জনের মৃত্যু হয়, অর্থাৎ গতকাল করোনায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষের মৃত্যু হলো। গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ৪৬ শতাংশ এবং এখন পর্যন্ত ১৪ দশমিক ২২ শতাংশ শনাক্ত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৯৮ জন পুরুষ এবং নারী ৬৫ জন। এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ৮৮৩ জন পুরুষ এবং চার হাজার ৫০৯ জন নারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
এ দিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ষাটোর্ধ্ব ৯১ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ২৯ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ২৭ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১১ জন এবং ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে পাঁচজন মারা গেছেন।
আর বিভাগ বিশ্লেষণে ঢাকা বিভাগে মারা গেছেন ৪৫ জন, চট্টগ্রামে ২৪ জন, রাজশাহীতে ২৪ জন, খুলনায় ৪৬ জন, বরিশালে ছয়জন, সিলেটে দুইজন, রংপুরে ১১ জন এবং ময়মনসিংহে পাঁচজন মারা গেছেন।
রামেক হাসপাতালে আরো ১৯ মৃত্যু
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, করোনাভাইরাস ও করোনা উপসর্গ নিয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মৃত ১৯ জনের মধ্যে চারজন করোনা পজিটিভ ছিলেন। আর ১৫ জন ভর্তি ছিলেন উপসর্গ নিয়ে। মৃতদের মধ্যে রাজশাহী জেলারই ১০ জন রোগী রয়েছেন। এ ছাড়া একজন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার, নাটোর জেলার দু’জন, নওগাঁ জেলার দু’জন, পাবনা জেলার একজন, কুষ্টিয়া জেলার একজন, চুয়াডাঙ্গা জেলার একজন ও জয়পুরহাট জেলার একজন রোগী ছিলেন।
তিনি আরো জানান, রামেক হাসপাতালে গত ছয় দিনে মোট ১০০ জনের মৃত্যু হলো। এ ছাড়া গত জুনে ৪০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে করোনা পজিটিভ রোগী ছিলেন ১৮৯ জন। অন্যরা করোনা উপসর্গ নিয়ে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
এ দিকে সোমবার রাজশাহীর দু’টি পিসিআর ল্যাবে মোট ৭৭২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ২০১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। করোনা শনাক্তের হার রাজশাহী জেলায় প্রায় দুই সপ্তাহ পর এ দিন ৩৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ থেকে কমে ২০ দশমিক ৩ শতাংশে নেমেছে। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনা শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে আরো কমে ১৮ দশমিক ৫২ শতাংশে এসেছে।
রংপুর বিভাগে ১০ জনের মৃত্যু : আক্রান্ত ৬১৮
রংপুর অফিস জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগে আরো ৬১৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, মারা গেছেন ১০ জন। এ নিয়ে এই বিভাগে করোনায় মারা গেল ৫৯২ জন। রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আবু মো: জাকিরুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার বেলা ১টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের পাঁচ জেলায় মারা গেছে ১০ জন। এদের মধ্যে রংপুর ও দিনাজপুরের তিনজন করে, ঠাকুরগাঁওয়ে দুই, পঞ্চগড় ও নীলফামারীতে একজন করে মারা গেছেন। অন্য দিকে গত ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৬৮১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে শনাক্ত হয়েছেন ৬১৮ জন। শনাক্তের হার ৩৬ দশমিক ৭৬। রংপুর বিভাগের আট জেলায় গত রোববার পর্যন্ত এক লাখ ৬৫ হাজার ৫৫০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৯ হাজার ৫৪২ জন শনাক্ত হয়েছেন। এরমধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২১ হাজার ৩৪০ জন।
খুলনা বিভাগে করোনা শনাক্তে রেকর্ড
খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনা বিভাগে পরপর দুই দিন করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর গতকাল মঙ্গলবার তা কমেছে। গতকাল সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৪০ জনের। তবে শনাক্তের হার বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। একই সময়ে শনাক্ত হয়েছে সর্বোচ্চ এক হাজার ৮৬৫ জনের। এর আগে সোমবার বিভাগে সর্বোচ্চ ৫১ জনের মৃত্যু এবং সর্বোচ্চ এক হাজার ৪৭০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।
গতকাল মঙ্গলবার বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক রাশেদা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে সর্বোচ্চ ১৪ জনের মৃত্যু হয় খুলনায়। এ ছাড়া কুষ্টিয়ায় ১৩ জন, যশোরে ছয়জন, মেহেরপুরে তিনজন, ঝিনাইদহ, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও চুয়াডাঙ্গায় একজন করে মারা যান। গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩৪৯ জনের। এ পর্যন্ত জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৬ হাজার ৯৭৫ জনের। মারা গেছেন ৩২৭ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১১ হাজার ৭০২ জন।
বগুড়ায় ১৯ ব্যক্তির মৃত্যু, আক্রান্ত ২৩৮
বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়ায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে এক দিনে ১৯ ব্যক্তি মারা গেছেন। এর মধ্যে ১৮ জনই তিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলেছে, ১৯ জনের মধ্যে করোনা আক্রান্ত আটজন এবং উপসর্গ নিয়ে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বগুড়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট করোনা ডেডিকেটেড মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: টি এম নুরুজ্জামান জানান, ২৪ ঘণ্টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা: আব্দুল ওয়াদুদ জানিয়েছেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাঁচজন মারা গেছেন। অপর দিকে বগুড়া টিএমএসএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র আব্দুর রহিম রুবেল জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ওই হাসপাতালে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া একই দিনে তিন হাসপাতালে করোনার উপসর্গ নিয়ে ১১ জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে শজিমেকে দুইজন, মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে আটজন এবং বাকি একজন টিএমএসএস হাসপাতালে মারা গেছেন।
গতকাল মঙ্গলবার অনলাইন ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা: মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন। তিনি জানান, জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৮১০ নমুনার ফলাফলে নতুন করে ২৩৮ জন করোনা শনাক্ত হয়েছেন। শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। একই সময়ে সুস্থ হয়েছেন ৮৮ জন। এ নিয়ে জেলায় করোনায় আক্রান্ত ১৪ হাজার ৯৩১ জন, সুস্থ ১৩ হাজার ৮৩ জন এবং মোট মৃত্যু ৪৩৭ জন।
চট্টগ্রামে মৃত্যু ৯, আক্রান্ত ৬৬২
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে এক দিনে ৯ জন করোনা রোগী মারা গেছেন। একই সময়ে সর্বোচ্চ ৬৬২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ছাড়িয়েছে ৩৫ শতাংশ। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ৬১ হাজার পেরিয়েছে করোনা শনাক্তের সংখ্যা।
জানা যায়, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের এক হাজার ৮৯০ নমুনা পরীক্ষায় ৬৬২ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এটি সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামে এক দিনে সর্বোচ্চসংখ্যক করোনা শনাক্তের রেকর্ড। এ দিন শনাক্তদের মধ্যে ৪৪৯ জন নগরের এবং ২১৩ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
টাঙ্গাইলে আরো ৭ জনের মৃত্যু
টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলে করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরো সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে পাঁচজন ছিলেন করোনা পজেটিভ। বাকি দু’জন মারা গেছেন উপসর্গ নিয়ে। এ নিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত জেলায় মৃত্যু হলো ১৩৫ জনের। নতুন করে জেলায় এক দিনে ৭১৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ৪১৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। শনাক্তের হার শতকরা ৫৭ দশমিক ৯২ ভাগ। এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৪৪ জন এবং সুস্থ হয়েছেন চার হাজার ৮৯৩ জন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৬৭৪ জন। টাঙ্গাইল সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।
ঠাকুরগাঁওয়ে ৫ জনের মৃত্যু
ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরো পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। রংপুর করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল, দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে তারা মারা যান। এ নিয়ে জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১০০ জনে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ২৬৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১১৪ জনের শরীরে করোনার উপস্থিতি ধরা পরে। সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র পেয়েছেন ১০৭ জন। গত মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব তথ্য তুলে ধরেন জেলা সিভিল সার্জন ডা: মাহফুজার রহমান সরকার।
সাতক্ষীরায় কমেছে সংক্রমণের হার
সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানান, জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা উপসর্গ নিয়ে দুই নারীসহ আরো পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ (সামেক) হাসপাতালে তাদের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে জেলায় গত ৫ জুলাই পর্যন্ত ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মোট ৭৬ জন। আর উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন অন্তত ৩৭৬ জন। এ দিকে সাতক্ষীরায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও কমেছে করোনা সংক্রমণের হার। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১১৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ সময় সামেক হাসপাতালের আরটি পিসিআর ল্যাবে ও বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে র্যাপিড এন্টিজেন কিটে নমুনা পরীক্ষা করা হয় ৪৩৩টি। শনাক্তের হার ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ। আগের দিন শনাক্তের হার ছিল ২৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ। সাতক্ষীরা সদর হাসপতালের মেডিক্যাল অফিসার ও জেলা করোনা-বিষয়ক তথ্য কর্মকর্তা ডা: জয়ন্ত কুমার সরকার এ তথ্য জানান।
লালমনিরহাটে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু
পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) সংবাদদাতা জানান, লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ফুলগাছ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হযরত আলী (৫০) গত রোববার করোনায় আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা গেছেন। এ নিয়ে জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে এই পর্যন্ত ৩১ জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে ছয়জন শিক্ষক রয়েছেন। জেলা সিভিল সার্জন ডা: নির্মলেন্দু রায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বান্দরবানে সংক্রমণ বাড়ছে
বান্দরবান সংবাদদাতা জানান, পার্বত্য জেলা বান্দরবানে করোনার সংক্রমণ বাড়ছেই। গত ২৪ ঘণ্টায় নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ ২২ জন আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তিনজন নার্স, একজন স্বাস্থ্যকর্মীসহ পাঁচজন আক্রান্ত হয়েছেন। এর ফলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য জেলা বান্দরবানে এ পর্যন্ত ১১৪৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন পাঁচজন। বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে ৩১ জন করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি আছেন। সিভিল সার্জন ডা: অংসৈ প্রু মারমা জানিয়েছেন, নমুনা পরীক্ষা বেড়ে যাওয়ায় আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। অনেক জায়গায় লোকজন স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। ফলে আক্রান্ত বাড়ছে।
নীলফামারীতে দুইজনের মৃত্যু
নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে নীলফামারীতে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেনÑ জেলা সদরের কাজিরহাটের আব্দুল মজিদ (৬৪) ও ডিমলা উপজেলার বড়জুম্মা গ্রামের শাহেদা বেগম (৬৫)। এ নিয়ে জেলায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৩৮ জনে। অপর দিকে গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় নতুন করে চার শিশুসহ ৬৮ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে, যা জেলায় এক দিনে সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ড। গতকাল মঙ্গলবার বিষয়টি নিশ্চিত করে সিভিল সার্জন ডা: জাহাঙ্গীর কবির।
নোয়াখালীতে দুইজনের মৃত্যু, শনাক্ত ১৩৪
নোয়াখালী অফিস জানায়, নোয়াখালীতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরো ১৩৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ৪৩৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় এ ফল পাওয়া যায়। শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এ নিয়ে জেলায় মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৮৩৬ জন। মোট আক্রান্তের হার ১১ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এ দিকে গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় করোনায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। জেলায় এই নিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪৭ জনে। মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৪ শতাংশ। গতকাল মঙ্গলবার সকালে জেলা সিভিল সার্জন ডা: মো: মাসুম ইফতেখার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
নাটোরে ৩ নারীর মৃত্যু
নাটোর সংবাদদাতা জানান, উপসর্গসহ করোনায় নাটোরে হাজেরা (৬৫), আনোয়ারা (৫০) ও সেলিনা (৪৬) নামে তিন নারী মারা গেছেন। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৯৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩০৫ জনের। সংক্রমণের হার ৩১.৮০ শতাংশ। মোট আক্রান্ত ৪৩৮২ জন। সুস্থ হয়েছেন ১৯৬৯ জন। জেলায় মোট মৃত্যু হয়েছে ৬৪ জন। সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা: পরিতোষ কুমার রায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ঝালকাঠিতে দুইজনের মৃত্যু, আক্রান্ত ১০৪
ঝালকাঠি সংবাদদাতা জানান, ঝালকাঠিতে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১০৪ জন। আক্রান্তের হার শতকরা ৫৩ ভাগ। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা: রতন কুমার ঢালী এ তথ্য জানান।
জগন্নাথপুরে উপসর্গ নিয়ে নারীর মৃত্যু
জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, জগন্নাথপুর পৌর শহরে করোনা উপসর্গ নিয়ে নির্মলা রানী গোপ (৭০) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মধুসূদন ধর জানান, এ পর্যন্ত উপজেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৮০ জন, মোট সুস্থ হয়েছেন ২৪৭ জন। প্রথম ধাপে একজনের মৃত্যুসহ মোট মৃত্যুর সংখ্যা দুইজন।
কক্সবাজারে দ্রুত বাড়ছে সংক্রমণ
কক্সবাজার অফিস জানায়, তুলনামূলকভাবে কিছুটা ভালো অবস্থানে থাকা কক্সবাজারে কোভিড সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। এখন প্রায় প্রতিদিনই আক্রান্ত হচ্ছে ১৩০ জন মানুষ। প্রতিদিন মারাও যাচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ইয়াছিন আরাফাত নামে এক তরুণ ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। সদর হাসপাতাল সুত্রমতে, গত ৫ জুন থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত সময়ে মারা গেছেন ৪২ জন। এর মধ্যে ১৯ জন সরাসরি কোভিডে এবং ২৩ জন কোভিডের উপসর্গ নিয়ে মারা গেল। কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের সংক্রামক রোগ ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা: শাহজাহান নাজির জানান, আক্রান্তের হার বেড়ে যাওয়ায় ২৫০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতালে বর্তমানে কোভিড রোগীর ঠাঁই হচ্ছে না।
ফরিদপুরে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে ১০ দিনে ৭৪ জনের মৃত্যু
ফরিদপুর সংবাদদাতা জানান, ফরিদপুরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। এ নিয়ে করোনা সংক্রমণের তৃতীয় ধাপে ফরিদপুরের করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে গত ১০ দিনে ৭৪ জনেরও মৃত্যুর খবর পাওয়া গেল।
সিভিল সার্জন অফিসের মেডিক্যাল অফিসার ডা: তানসিভ জুবায়ের গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে ডেডিকেটেড হাসপাতালে ভর্তি তিনজন রোগীর মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ফরিদপুরের পিসিআর ল্যাবের ৩৫৬ জন রোগীর নমুনা পরীক্ষা করে ১৬৩ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার শতকরা ৪৫ দশমিক ৭৮।
গাজীপুরে ৩ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬৫ জন
গাজীপুর মহানগর সংবাদদাতা জানান, গাজীপুরে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরো তিনজনের মৃত্যু ও নতুন করে ৬৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার গাজীপুর জেলা সিভিল সার্জন অফিস জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯৪ জনের নমুনা পরীক্ষার পর ৬৫ জনের করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে। জেলায় এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্তে মারা গেছেন মোট ২৫৬ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ১১ হাজার ২৮৩ জন।
ঝিনাইদহে রেকর্ড ২৩০ জন শনাক্ত, মৃত্যু ৪
ঝিনাইদহ সংবাদদাতা জানান, ঝিনাইদহে পূর্বের সব রেকর্ড ভেঙে আবারো বেড়েছে করোনার আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ২৩০ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে। এ ছাড়াও গত ২৪ ঘণ্টায় জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে এবং তিনজন উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট মৃত্যু হয়েছে ১০৮ জনের। সিভিল সার্জন অফিস ডা: সেলিনা বেগম এসব তথ্য জানান।
ফেনীতে শনাক্ত ৫৫ শতাংশ
ফেনী অফিস জানায়, ফেনী জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে রোগীর চাপ দিনদিনই বাড়ছে। ৩০ শয্যার বিপরীতে মঙ্গলবার পর্যন্ত ১০৫ জন করোনা রোগী ভর্তি রয়েছে। শয্যা না পেয়ে কেউ কেউ বাধ্য হয়ে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেক গুরুতর অসুস্থ রোগীও এখানে শয্যা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও একই চিত্র।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, কয়েক দিন ধরে করোনা রোগীর চাপ বাড়ায় উপসর্গ নিয়ে এলে নমুনা নিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে অক্সিজেন দেয়ার প্রয়োজন এমন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। নির্ধারিত ৩০ শয্যার মধ্যে আরটিপিসিআর ল্যাবের পরীক্ষায় ৩৭ জন পজেটিভ রোগীই ভর্তি রয়েছে। ৭৭ জনকে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে। আইসিইউতে ১০টি শয্যার সব ক’টিতে রোগী রয়েছে। সোমবার রাতে করোনায় উপসর্গ নিয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ দিকে গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ২৩১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২৬ জনের শরীরে করোনা রোগের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। সংক্রমণ হার প্রায় ৫৫ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন একজন।
রাজবাড়ীতে ২ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ৭৭
রাজবাড়ী সংবাদদাতা জানান, রাজবাড়ীতে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে করোনা পজিটিভ ও করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে দুই ব্যক্তি মারা গেছেন। এ নিয়ে জেলায় করোনায় মারা গেল ৪৮ জন। একই সময়ে রাজবাড়ীতে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন ৭৭ জন রোগী। জেলার ৪টি হাসপাতালে অতিরিক্ত শয্যা স্থাপন করেও করোনার রুগীর স্থান সঙ্কুলান করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে অনেক করোনা শনাক্ত রোগী নিজ নিজ বাড়িতেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/593208