৬ জুলাই ২০২১, মঙ্গলবার, ৭:০৯

খোলাবাজারে দীর্ঘলাইন

চলমান লকডাউন এবং ঈদুল আজহা উপলক্ষে গতকাল থেকে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য, ভর্তুকি মূল্যে তিনটি পণ্য বিক্রির ঘোষণা দেয়, সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ- টিসিবি। কিন্তু রাজধানীর কাফরুল, ইব্রাহীমপুরসহ ২০টি পয়েন্টে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কোনো ট্রাকের দেখা পাননি ভোক্তারা। তীব্র রোদ আর প্রচণ্ড গরমের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও মেলেেিন টিসিবি’র পণ্য। এ অবস্থায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভোক্তারা। তবে এ বিষয়ে টিসিবি’র যুগ্ম পরিচালক ও তথ্য কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির মানবজমিনকে বলেন, একদিন আগে ডিলারদের টাকা জমা দিতে হয়। কিন্তু গত রোববার ব্যাংক খোলা না থাকায় আজ রাজধানীতে ৮০টি ট্রাকের পরিবর্তে ৬০টি ট্রাক বের করা হয়। সেজন্য রাজধানীর কিছু এলাকা বাদ পড়েছে বলে জানান তিনি। পরে বিকাল ৪টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে পণ্য না পেয়ে বাসায় ফিরে যান ক্রেতারা।
তবে দেরিতে হলেও বাকি ৬০টি স্থানে ট্রাক পৌঁছেছে দুপুর ২টার পর।
এ সময় ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনতে দেখা যায় তাদের। রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনছেন ক্রেতারা।
চলমান কঠোর লকডাউন এবং আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে সারা দেশে গতকাল থেকে ট্রাক সেল চালু করেছে টিসিবি। যদিও বিক্রি শুরুর প্রথমদিনে রাজধানীতে দুপুরের পর ৬০টি স্থানে টিসিবি’র ট্রাকের দেখা মিললেও বাকি ২০টি স্থানে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও ট্রাকের দেখা পাননি ক্রেতারা। লকডাউনের সময় ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল দুপুরের পর যেসব এলাকায় টিসিবি’র ট্রাক এসেছে সেখানেই ছিল মানুষের উপচেপড়া ভিড়। এর আগে সকাল থেকেই যেসব স্থানে টিসিবি’র পণ্য বিক্রি হয় সেখানে দীর্ঘক্ষণ সাধারণ মানুষকে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। সাধারণত দরিদ্র মানুষ টিসিবি’র পণ্য কিনে থাকেন। কিন্তু গতকাল মধ্য বিত্ত শ্রেণির অনেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরে পণ্য না পাওয়ার কারণে অনেকেই বিরক্তি ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
তেজগাঁও এলাকায় টিসিবি’র ট্রাক আসে দুপুর ২টায়। ট্রাক আসতেই সেখানে ৩-৪শ’ মানুষকে লাইন ধরে পণ্য কিনতে দেখা গেছে। অনেকে দুই-তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর পাচ্ছেন পণ্য। তবে দেরিতে হলেও কিছুটা কমমূল্যে পণ্য পেয়ে খুশি সাধারণ ক্রেতারা। ২ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর পণ্য পেয়েছেন আলম নামে একজন ক্রেতা। তিনি বলেন, দেরিতে হলেও পণ্য পেয়ে ভালো লাগছে। আমি ৫ লিটার তেল, ২ কেজি চিনি ও ২ কেজি ডাল কিনেছি। কিছুদিন অন্তত খেতে পারবো। আমাদের মতো গীরবের এ ছাড়া আর গতি নাই। লকডাউনে কাজ বন্ধ তাই বাধ্য হয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছি।
ওদিকে খামারবাড়ীতে দুপুর পর্যন্ত টিসিবি’র পণ্যের জন্য অপেক্ষারত আছিয়া বেগম বলেন, সকাল থেকে সব কাজ ফেলে এখানে দাঁড়িয়ে আছি। কোনো খবর নেই। ট্রাক আসবে কি-না সেটাও জানা যাচ্ছে না। না এলে পুরো দিন মাটি। দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাব, খামারবাড়ী ফার্মগেট ও এফডিসি’র মোড়, ইব্রাহিমপুরসহ কয়েকটি স্থান ঘুরে টিসিবি’র ট্রাক পাওয়া যায়নি। তবে এর মধ্যে দু’-একটি এলাকায় ট্রাক পৌঁছেছে বলেও জানিয়েছিলেন টিসিবি’র কর্মকর্তারা।
এ দফায় দেশজুড়ে টিসিবি’র ৪৫০টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা সিটিতে ৮০টি ও চট্টগ্রাম সিটিতে ২০টি ট্রাক রয়েছে। এছাড়া প্রতিটি মহানগর ও জেলা শহরেও ট্রাক সেলের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করা হবে। এসব ট্রাকে কেজিপ্রতি ৫৫ টাকা দরে চিনি ও ডাল এবং লিটারপ্রতি ১০০ টাকা দরে সয়াবিন তেল বিক্রি করা হচ্ছে। পাশাপাশি টিসিবি’র বিক্রয় কেন্দ্রগুলোতে পাওয়া যাবে সব পণ্য। একজন ব্যক্তি দৈনিক দুই থেকে চার কেজি চিনি, দুই কেজি ডাল ও দুই থেকে পাঁচ লিটার ভোজ্যতেল কিনতে পারছেন। গতকাল টিসিবি’র প্রতিটি ট্রাকে ৭০০ কেজি চিনি, ৪০০ কেজি মসুর ডাল এবং ১২০০ লিটার সয়াবিন তেল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। করোনায় সাধারণ ক্রেতাদের কথা চিন্তা করে এই বরাদ্দ বাড়ানো হতে পারে বলে জানিয়েছে টিসিবি। এ কার্যক্রম চলবে আগামী ২৯শে জুলাই পর্যন্ত।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=282223&cat=2