৬ জুলাই ২০২১, মঙ্গলবার, ৭:০৮

রাজশাহী বিভাগের হাসপাতাল

এক্স-রে ও ইসিজি মেশিন অচল, চিকিৎসক সংকট

সেবাবঞ্চিত তৃণমূলের মানুষ

রাজশাহী বিভাগের উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোর অবস্থা করুণ। অধিকাংশ হাসপাতালে সচল নেই এক্স-রে ও ইসিজি মেশিন। অপারেশন থিয়েটার চালু নেই কোনোটিতে। অনেক জায়গায় অ্যাম্বুলেন্স সেবা নেই। অধিকংশ হাসপাতালেই রয়েছে চিকিৎসক ও দক্ষ টেকনিশিয়ান সংকট। ফলে এই বিভাগের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষরা স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পরীক্ষা ও রোগ নির্ণয়ের জন্য তাদের ছুটতে হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অথবা নগরীর বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও নার্সিংহোমে।

ব্যুরো ও প্রতিনিধিরা জানান, রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলা হাসপাতালের এক্স-রে মেশিনটি ১২ বছর ধরে অকেজো। অ্যাম্বুলেন্সও এক যুগের বেশি সময় ধরে অচল অবস্থায় পড়ে আছে। চালু নেই ইজিসি মেশিন। বাগমারা উপজেলার স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির অপারেশন থিয়েটারটি বন্ধ রয়েছে করোনার কারণে। দুর্গাপুর উপজেলা হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার থাকলেও চিকিৎসকের অভাবে অপারেশন হয় না। এক্স-রে মেশিন ও ইসিজি মেশিন নষ্ট দীর্ঘদিন ধরে। চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অপারেশন থিয়েটার চালু নেই ১০ বছর ধরে। তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে মেশিন তালাবদ্ধ আর আল্ট্রাসনোগ্রাম বিকল। সেই সঙ্গে রয়েছে চিকিৎসক সংকট। বাঘা উপজেলা হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন বন্ধ দীর্ঘদিন। ২৬ জন ডাক্তারের মধ্যে ১৭টি পদ শূন্য রয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৯২টি পদের মধ্যে ৩১টি পদ শূন্য।

নাটোর জেলার আধুনিক সদর হাসপাতালসহ উপজেলাগুলোর হাসপাতালে সিসিইউ ও আইসিইউ ব্যবস্থা নেই। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও নেই। মেডিকেল টেকনোলজিস্টের অভাবে দীর্ঘদিন থেকে ব্যবহার করা যাচ্ছে না বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আধুনিক এক্স-রে মেশিনটি প্যাকেটবন্দি হয়ে হাসপাতালের বারান্দায় পড়ে রয়েছে। যন্ত্রটি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। হাসপাতালটিতে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। এখানে নেই জরুরি প্রসূতি সেবার ব্যবস্থা।

পাবনায় মেডিকেল কলেজ থাকলেও নেই কলেজ হাসপাতাল। ২৫০ শয্যার পাবনা জেনারেল হাসপাতাল একমাত্র চিকিৎসাসেবার ভরসাস্থল। কিন্তু এ হাসপাতালে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হৃদরোগ চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহসহ নেই আইসিইউ। এ অবস্থায় হৃদরোগের গুরুতর রোগী গেলে সঙ্গে সঙ্গে রেফার্ড করা হয় ঢাকা বা রাজশাহীতে। করোনার প্রকোপের মুখে পাবনায় আইসিইউ এবং পিসিআর ল্যাবের জন্য মানুষ হাহাকার করছে। জেলার চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রপাতি। অস্ত্রোপচার কক্ষটি এখন স্টোররুমে পরিণত হয়েছে। সাঁথিয়া হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জাম ও জনবল সংকটে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালটিতে ডিজটাল এক্স-রে মেশিন নেই। গাইন চিকিৎসক না থাকায় প্রসূতি অপারেশন বন্ধ রয়েছে প্রায় সাত বছর।

নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সরঞ্জামাদি থাকলেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, টেকনিশিয়ান ও নার্সের অভাবে সেগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না। অ্যানেসথেসিয়া মেশিন থাকলেও নেই কনসালটেন্ট। জেলার পত্নীতলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে মেশিনটি সচল থাকলেও এক্স-রে হয় না। গত মে মাসে ঘটা করে সিজারিয়ান অপারেশন কার্যক্রম চালু করা হলেও উদ্বোধনের পর থেকেই তা বন্ধ রয়েছে।

বগুড়ার শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে মেশিন দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের সঙ্গে বাইরের ডায়াগনস্টিক মালিকদের চুক্তি থাকায় সরকারি এক্স-রে মেশিন মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে।

সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২টি অ্যানেসথেসিয়া মেশিন ১০ বছর ও ২টি অ্যাম্বুলেন্স ২৫ বছর ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও জনবল থাকা সত্ত্বেও এ হাসপাতালে জটিল কোনো অপারেশন হয় না। জেলার চৌহালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭ বছর ধরে এক্স-রে, আলট্রাসহ গুরুত্বপূর্ণ সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। শুধু বহির্বিভাগে কিছু রোগীকে ওষুধপত্র দিয়েই খালাস এখানকার চিকিৎসকরা।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/439590/