৬ জুলাই ২০২১, মঙ্গলবার, ৭:০৬

ঋণশোধে বৈষম্যের শিকার আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকরা

ব্যাংকের সমান সুযোগ পেতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে বসবেন এমডিরা

ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ নীতিমালা আরেক দফা শিথিল করা হলো। শর্তসাপেক্ষে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো হলো দুই মাস। অর্থাৎ বকেয়া কিস্তির ৫০ শতাংশ পরিশোধ করলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে আগামী ৩১ আগস্টের আগে ঋণখেলাপি করা যাবে না। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ বিষয়ে নতুন এক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ নির্দেশনা পরিপালনের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহীকে তা অবহিত করা হয়েছে।
তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহীরা জানিয়েছেন, তাদের গ্রাহকরা ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ব্যাংকের গ্রাহকের তুলনায় বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। কারণ, একই গ্রাহক ব্যাংকের বকেয়া কিস্তির ২০ শতাংশ পরিশোধ করলে দুই মাসের জন্য খেলাপি থেকে মুক্ত হতে পারছেন; বিপরীত দিকে ওই একই গ্রাহক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বকেয়া কিস্তির ৫০ শতাংশ পরিশোধ করতে হবে। এটা বড় ধরনের বৈষম্য। এতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ কেউ পরিশোধ করতে চাইবেন না।
এ বিষয়ে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন (বিএলএফসিএ) ভাইস চেয়ারম্যান ও আইআইডিএফসির এমডি মো: গোলাম সরওয়ার ভূঁইয়া গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, আর্থিক খাতে দুই ধরনের নীতি গ্রাহকদেরকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলে দেবে। আমরা শিগগিরই এটা পুনর্বিবেচনা করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে আলোচনা করব।
জানা গেছে, গত ২৮ জুন ব্যাংকগুলোর জন্য একটি নীতিমালা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত চলতি, তলবি ও মেয়াদি ঋণের পূর্বনির্ধারিত বকেয়া কিস্তির ২০ শতাংশ অর্থ আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে পরিশোধ করলে ওই গ্রাহককে খেলাপি করা যাবে না। ঋণ পরিশোধের এ ছাড় দিয়ে ওই দিন সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গতকাল আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য দেয়া আরেক সার্কুলারে বলা হয়েছে, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বকেয়া কিস্তির ৫০ শতাংশ পরিশোধ করলে আগামী ৩১ আগস্টের আগে ওই গ্রাহককে খেলাপি করা যাবে না। একজন গ্রাহক ব্যাংক থেকেও বিনিয়োগ নিয়েছেন, আবার ওই গ্রাহক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকেও বিনিয়োগ নিয়েছেন। একই খাতে দুই ধরনের নীতিমালায় গ্রাহকরা সমস্যায় পড়ে গেছেন। এর আগে গত ২০ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহকরা গত মার্চ পর্যন্ত যেসব ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেননি তারা আর্থিক প্রতিষ্ঠান-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে জুনের মধ্যে পরিশোধ করলে খেলাপি করা যাবে না। এ সময়ের মধ্যে গ্রাহকের ওপর কোনো দণ্ডসুদ বা অতিরিক্তি চার্জ আরোপ করা যাবে না। গতকাল আরেক দফা সুযোগ দেয়া হয় গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের প্রভাবে বেশির ভাগ ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থাই খারাপ অবস্থানে চলে গেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয় অনুযায়ী আয় হচ্ছে না। ঋণ আদায় কমে গেছে। আবার কমেছে আমানতের পরিমাণ। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের দায়দেনা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি কমেছে সম্পদের পরিমাণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এ চিত্র উঠে এসেছে।
এদিকে করোনার প্রভাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতের ওপরই বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের আমানতের অর্থ ফেরত দিতে না পারায় আগে থেকেই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে আস্থার সঙ্কট দেখা দিয়েছিল, এতে আমানত প্রত্যাহারের একটু চাপ বেশি ছিল, কিন্তু করোনার প্রভাবে আমানত প্রবাহে আরো বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
অপর একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানিয়েছেন, গেল বছরজুড়েই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণের নীতিমালা শিথিলতার কারণে তারা ঋণ আদায় করতে পারেননি। প্রথমে বলা হয়েছিল ঋণ পরিশোধ না করলেও খেলাপি করা যাবে না গত জুন পর্যন্ত। কিন্তু এ নির্দেশনা কয়েক দফা বাড়িয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত টেনে নেয়া হয়। পরবর্তীতে এ নির্দেশনা মার্চ মাস পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। এখন ধাপে ধাপে তা বাড়ানো হচ্ছে। এতে যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করতেন তারা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের কিস্তি পরিশোধ বন্ধ করে দিয়েছেন। এর ফলে গেল বছর বেশির ভাগ গ্রাহকের কাছ থেকে ঋণ আদায় করতে পারেননি। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার কারণে খেলাপি ঋণও বাড়েনি। এতে ঋণ আদায় না করেই কৃত্রিম মুনাফা বেড়ে যায়। এ মুনাফার ওপর ভর করেই অনেকেই শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে লভ্যাংশ বিতরণ করছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় ব্যবসায়ীরা আবারো বেকায়দায় পড়ে গেছেন। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতিমালা আবারো শিথিল করেছে। এতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নতুন করে ঋণ বিতরণের সক্ষমতা কমে যাবে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/593041/