৫ জুলাই ২০২১, সোমবার, ৬:৫৬

লকডাউন অমান্য

গ্রেফতারকৃতদের ছাড়িয়ে নিতে আদালতে স্বজনদের ভিড়

করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারের জারি করা কঠোর বিধিনিষেধ বা লকডাউনের মধ্যে রাজধানীতে অকারণে রাস্তায় বের হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছিলেন যারা, তাদের যেতে হয়েছে থানা হাজতেও। রাস্তায় মোবাইল কোর্টে অথবা থানা থেকে অনেকে জরিমানা দিয়ে ছাড়া পেলেও আবার বিভিন্ন কারণে অনেককে যেতে হয়েছে আদালত পর্যন্ত।

গতকাল রোববার রাস্তায় বের হয়ে আটক হওয়া এমন ব্যক্তিদের ছাড়িয়ে নিতে আদালতে ভিড় করেন স্বজনরা। তবে স্বজনদের অভিযোগ, কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে বা জরুরি কাজে বের হয়েও তাদের নিকটজনরা গ্রেফতার হয়েছেন। পরবর্তী সময়ে তাদের জরিমানা করে ছেড়ে দেয়ার কথা থাকলেও ছাড়া হয়নি। আদালতে গিয়ে তাদের ছাড়িয়ে আনতে জরিমানার চেয়ে দুই থেকে তিন গুণের বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। তাদের অভিযোগ একদল লোক আইনজীবী পরিচয়ে স্বজনদের কাছ থেকে জামিন নেয়ার কথা বলে এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকা আদায় করছে।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, উপযুক্ত কারণ দেখাতে না পারায় তাদের গ্রেফতার করে আদালতে আনা হয়েছে। জরিমানা করে তাদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। ছেলেকে ছাড়িয়ে নিতে আদালতে এসেছিলেন সিএনজি অটোরিকশার চালক আবদুল খালেক। তিনি বলেন, আমার ছেলে তার চার বন্ধুসহ গুলশান থেকে কাজ শেষ করে বাসায় ফিরছিল। ফেরার পথে তারা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়। তিন বন্ধুকে ছেড়ে দিলেও আমার ছেলেকে ছাড়েনি পুলিশ।

তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ বলছিল, থানায় গিয়ে ২০০ টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেবে। কিন্তু তারা ছেলেকে ছেড়ে দেয়নি। আদালত পর্যন্ত আসতে হয়েছে ছেলেকে ছাড়াতে। তবে জরিমানার চেয়ে কয়েক গুণ টাকা খরচ করতে হয়েছে তাকে। তিনি বলেন, ধার করে তিন হাজার টাকা নিয়ে আসছি জামিন করাতে। এমনিতেও কাজ নেই। তার ওপর আবার এ লকডাউনে বাড়তি টাকা লাগছে।

রামপুরা থেকে আসা নাসির উদ্দিন বলেন, আমার ছেলের মুখে মাস্ক না থাকায় শনিবার সন্ধ্যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আটক করে। এরপর ডিএমপি অধ্যাদেশ আইনে আটক দেখিয়ে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাকে ২০০ টাকা জরিমানা করেন। কিন্তু তার কাছ থেকে আইনজীবী পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি এক হাজার ৩০০ টাকা নিয়েছে।

মুগদা থেকে আসা শায়ের উদ্দিন খান বলেন, রোববার সকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অকারণে রাস্তায় চলাফেরা করায় ছেলেকে আটক করে। এরপর ডিএমপির অধ্যাদেশ আইনে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। তাকে ২০০ টাকা জরিমানা করেন আদালত। কিন্তু আইনজীবী পরিচয়ে একজন তার ছেলেকে বের করতে এক হাজার টাকা নেন। জরিমানা ২০০ টাকা হলেও তাকে অতিরিক্ত ৮০০ টাকা দিতে হয়েছে।
এ ব্যাপারে ঢাকা আইনজীবী সমিতির লাইব্রেরি সম্পাদক শারমিন সুলতানা হ্যাপি বলেন, কঠোর বিধিনিষেধ চলায় অনেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে আটক হচ্ছেন। এরপর তাদের আদালতে পাঠানো হচ্ছে। আদালত তাদের ক্ষেত্রবিশেষ ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করেন। কিন্তু এখানে আইনজীবী পরিচয় দিয়ে কিছু অসাধু লোক আটকদের স্বজনদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছেন। আমরা অসাধু লোকজনদের আটক করে সতর্ক করছি।

আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানীর ৬৩৬ জনকে আদালতে হাজির করা হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পৃথক দুই বিচারক শাহিনুর রহমান ও সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী তাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ জরিমানা করেন। জরিমানা আদায় করে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/592774