৫ এপ্রিল ২০১৭, বুধবার, ৯:৫৪

শংকা তিন লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ নিয়ে

বিনিয়োগ বোর্ড থেকে নিবন্ধন নিয়েও জ্বালানির নিশ্চয়তা পাচ্ছে না তিন হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের কাংখিত বিনিয়োগের অর্থের ভবিষ্যৎ নিয়েও শংকা তৈরি হয়েছে। বোর্ড থেকে নিবন্ধন নিয়েও এখন বাস্তবায়নের হার কোন ক্রমেই বাড়ছে না।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বাবিউক) তথ্য বলছে, গত দুই বছরে ৩ হাজার ২১৭ শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগ নিবন্ধন করেছে। যদিও এসব বিনিয়োগ প্রস্তাবনার বাস্তবায়ন খুবই সামান্য। ক্ষেত্রবিশেষে বাস্তবায়নের হার শূন্য।
বাবিউকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, কয়েক বছর ধরেই বাড়ছে বিনিয়োগ নিবন্ধন। ২০১৫ সালে বিনিয়োগে আগ্রহী দেশী-বিদেশী প্রকল্প ছিল ১ হাজার ৫৩৭টি। এসব প্রকল্পে বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়া হয় ৯৪ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে প্রকল্পের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৬৮০। বিনিয়োগ নিবন্ধনও বেড়ে হয় ১ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা।
বাবিউকের সূত্র জানায়, সম্প্রতি দেশী বিদেশী বেশ কিছু বড় প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের নিবন্ধন নিয়েও কাজই শুরু করতে পারছেন না। এর মধ্যে বড় একটি কোম্পানি হচ্ছে ইউনাইটেড গ্রুপ। ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি নতুন বিনিয়োগ নিবন্ধন নিয়েছে বাবিউক থেকে। এলপিজি খাতে প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগ পরিকল্পনা প্রায় সাড়ে ৯০০ কোটি টাকা। কিন্তু প্রয়োজনীয় অবকাঠামো অনুমোদন জটিলতায় বিনিয়োগ বাস্তবায়ন সেভাবে এগোচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটির।
প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ রাজা বলেন, আমাদের প্রকল্পটি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজন জেটি। কিন্তু এগুলোর অনুমোদন পাওয়া যায়নি। তাই আমরা বাস্তবায়ন কার্যক্রম এগিয়ে নিতে পারছি না। বলা যায়, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন অগ্রগতি শূন্য।
২০১৫ সালে গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস গ্রুপ অব কোম্পানিজ লিমিটেড প্রকল্প নিবন্ধন করেছে ভেজিটেবল অয়েল খাতে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে কারখানা স্থাপনের নির্ধারিত জমি আছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে। মোট বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়া হয়েছে ১ হাজার ১৩১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়সীমা উল্লেখ করা হয়েছিল ২০১৬ সালের জানুয়ারির মধ্যে।
প্রতিষ্ঠানটি গ্যাস সংযোগসহ আরো কিছু কারণে নির্ধারিত সময়ে বিনিয়োগ বাস্তবায়ন করতে পারেনি তারা। তবে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রকল্পটির উৎপাদন শুরু করার পরিকল্পনা ছিল।
সামিট গ্রুপ গত বছর বাবিউকে নিবন্ধন নিয়েছে ১ হাজার ৬৩৬ কোটি ৮৪ লাখ ৭০ হাজার টাকার প্রকল্প। হাই-টেক পার্কের ডেভেলপার হিসেবে নিবন্ধন নেয়া এ প্রতিষ্ঠানের প্রকল্পটির নাম সামিট টেকনোপলিস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পের বিনিয়োগ বাস্তবায়নে অগ্রগতি থাকলেও পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। প্রকল্পটিতে এখন পর্যন্ত দুটি ভবন গড়ে তোলার কাজ চলমান আছে।
২০১৬ সালে নতুন খাতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। নিবন্ধিত প্রকল্পের নাম বসুন্ধরা মাল্টি ফুড প্রডাক্টস লিমিটেড। প্রক্রিয়াজাত খাদ্য খাতের এ প্রতিষ্ঠানের ঘোষিত বিনিয়োগের পরিমাণ ১ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা। ২০১৫ সালেও বসুন্ধরা গ্রুপ নতুন খাতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা নেয়। নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানটির নাম ছিল বসুন্ধরা টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড। নিবন্ধনের ঘোষণায় সুতা ও ডায়িং খাতের প্রতিষ্ঠানটির সম্ভাব্য বিনিয়োগের পরিমাণ দেখানো হয় ১ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। প্রকল্পটির কারখানার ঠিকানা দেয়া হয়েছে নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাট নিউটাউনে। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন সময়সীমা দেখানো হয়েছে ২০১৭ সাল।
বাবিউকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে বিনিয়োগ নিবন্ধন নেয়া উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আরো আছে দেশবন্ধু ফাইবার লিমিটেড, ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, যমুনা বিল্ডার্স লিমিটেড, এসকর্প এলপিজি লিমিটেড ও জেবি এলপি গ্যাস লিমিটেড।
একই সময়ে নিবন্ধন নেয়া শতভাগ বিদেশী ও যৌথ বিনিয়োগ প্রকল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো টেলিপোর্ট বাংলাদেশ লিমিটেড, সি.পি বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড, ফু ওয়াং-চুং হুয়া প্রপার্টিজ লিমিটেড, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপ্লায়েন্সেস লিমিটেড, আরব বাংলাদেশ কনটেইনার ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড, এসএস পাওয়ার ১ লিমিটেড, এসএস পাওয়ার ২ লিমিটেড ও সেম্বকর্প নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড।
এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে নিবন্ধন নিলেও জ্বালানি নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না অনেক উদ্যোক্তা। আছে জমিসহ অন্যান্য অবকাঠামো সংকটও। এতে বিলম্বিত হচ্ছে বিনিয়োগ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন। অনেকে আবার নিবন্ধনের পর বিনিয়োগ পরিকল্পনা থেকেই সরে আসছেন। ফলে প্রতি বছর বড় অংকের বিনিয়োগ নিবন্ধন হলেও বাস্তবায়ন হচ্ছে কম।
সূত্রমতে নিবন্ধনের পরিমাণ বাড়লেও ঘোষণা অনুযায়ী বাস্তবায়নে তেমন অগ্রগতি হয়নি। বেশির ভাগ সময়ই বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয় দেরিতে। বড় বিনিয়োগ বাস্তবায়নে লেগে যায় পাঁচ-ছয় বছর। এ হিসাবে গত বছর নিবন্ধিত বিনিয়োগ প্রস্তাব বাস্তবায়নের হার প্রায় শূন্য।
এ বিষয়ে বাবিউকের নির্বাহী সদস্য নাভাস চন্দ্র মন্ডল বলেন, একটি বিনিয়োগ প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করতে দু-তিন বছর লেগে যায়। এর পর পরিচালনায় যায় প্রতিষ্ঠানগুলো। বড় প্রকল্প হলে কখনো কখনো আরো বেশি সময় লাগে। প্রথম বছরে বিনিয়োগ ২৫ শতাংশও বাস্তবায়ন হয় না। নিবন্ধন নেয়াসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য কাজ গুছিয়ে আনতেই প্রথম বছর চলে যায়। তবে প্রকল্পের ধরন অনুযায়ী বাস্তবায়নের সময়ে তারতম্য দেখা যায়।

 

http://www.dailysangram.com/post/278544-