৪ জুলাই ২০২১, রবিবার, ২:৫৯

সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর অবস্থা ভয়াবহ

৭ দিনে করোনা শনাক্ত বেড়েছে ৫১ শতাংশ

একদিনে আক্রান্ত ৬,২১৪ : মৃত্যু ১৩৪; শনাক্তের হার ২৭.৩৯ শতাংশ

এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশে করোনা শনাক্ত বেড়েছে ৫১.২৯ শতাংশ। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দেশব্যাপী গত ১ জুলাই থেকে লকডাউন শুরু করার পর থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশব্যাপী করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমেছে। কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে গত শুক্রবারের ছুটির দিন উল্লেখ করা যায়। ছুটির দিনে সাধারণত মানুষ করোনা পরীক্ষা করতে কম আসে এবং এর ফলে মোট শনাক্ত কম হয়ে থাকে। এটি লকডাউনের ফল তা এখনই বলা যাবে না বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।

এ সময়ের মধ্যে সারা দেশে নতুন করে করোনাভাইরাসে শনাক্ত হয়েছে ছয় হাজার ২১৪ জন। গতকাল দেশে করোনা সংক্রমণের হার ছিল ২৭.৩৯ শতাংশ। তবে আগের দিনের চেয়ে শনিবার একই সময়ের মধ্যে মৃত্যু বেড়েছে। গতকাল উল্লিখিত সময়ের মধ্যে দেশে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৩৪ জনের। বাংলাদেশে এটিই করোনায় মৃত্যুর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যা। এর আগে গত ১ জুলাই দেশে করোনায় সর্বোচ্চ ১৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। করোনায় তৃতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে ২ জুলাই ১৩২ জনের।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের গত দুই সপ্তাহে করোনাসংক্রান্ত বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২৭ জুন থেকে গতকাল ৩ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে ৫৩ হাজার ১১৮ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে। এর আগে ২০ থেকে ২৬ জুনের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ১১১ জন; অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২৭ জুন থেকে ৩ জুলাইয়ের এই সাত দিনে করোনা আক্রান্ত বেড়েছে ১৮ হাজার সাতজন। অর্থাৎ আগের সপ্তাহের চেয়ে গেল সপ্তাহে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে ৫১.২৯ শতাংশ। নমুনা পরীক্ষা বেড়েছে ১৯.৪৬ শতাংশ।

২০ থেকে ২৬ জুনের দেশে করোনা রোগীদের মধ্যে মারা গেছে ৫৮৭ জন এবং ২৭ জুন থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত এক সপ্তাহে করোনায় মারা গেছে ৮৫৯ জন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে মৃত্যু বেড়েছে ২৭২ জন। আগের সপ্তাহের চেয়ে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৪৬.৩৪ শতাংশ বেশি।

দেশে ৫৬৬টি চলমান পরীক্ষাগারে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় মোট ২২ হাজার ৬৮৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। একই সময়ে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ২২ হাজার ৭০৩টি। দেশের বিভিন্ন স্থানে র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার সুযোগ বাড়ানোয় নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বেড়েছে। পরীক্ষাগারের মধ্যে ৩৯১টি র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষাগার। এই পরীক্ষাগারে নমুনা দেয়ার ১ ঘণ্টার মধ্যেই পরীক্ষার ফল পাওয়া যায়। অন্য পরীক্ষাগারের মধ্যে আরটি পিসিআর ১২৮টি, জিন এক্সপার্ট ৪৭টি।

গতকাল যে ১৩৪ জন করোনা মারা গেছে, এর মধ্যে ৮৪ জন পুরুষ ও ৫০ জন নারী। এর মধ্যে ৬৫ জনই ষাটোর্ধ্ব বয়সী। ৩০ জন ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী। ২৪ জন ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী। মৃতদের ৩৮ জনই ঢাকা বিভাগের। এ ছাড়া খুলনা বিভাগে ৩৯ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৩ জন, রংপুর বিভাগে ১৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১১ জন, ময়মনসিংহে চারজন, বরিশালে তিনজন ও সিলেট বিভাগের একজন।

গতকাল যে ছয় হাজার ২১৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে, এর মধ্যে রাজধানীতেই আক্রান্ত হয়েছে দুই হাজার ৮৫৪ জন। অবশিষ্টদের মধ্যে রাজধানী ছাড়া ঢাকা বিভাগের অন্যান্য জেলায় ৫০৮ জন, খুলনা বিভাগে ৫৩৯ জন, রাজশাহী বিভাগে ৪২৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৮৪৪ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৪৮ জন, রংপুর বিভাগে ৫৩২ জন, বরিশাল বিভাগে ১৬০ জন, সিলেট বিভাগে ২০৩ জন আক্রান্ত হয়েছে।

খুলনা বিভাগে করোনায় মৃত্যুতে ফের ঊর্ধ্বগতি
খুলনা ব্যুরো জানায়, এক দিন পার না হতেই খুলনা বিভাগে করোনায় ফের বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যা। শুক্রবার করোনায় ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় তা বেড়ে ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে কমেছে আক্রান্তের সংখ্যা। এ সময়ে নতুন করে ৫৩৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। গতকাল শনিবার বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা: রাশেদা সুলতানা এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। এর আগে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দফতর সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের মধ্যে খুলনায় সর্বোচ্চ ১১ জন, যশোরে আটজন, কুষ্টিয়ায় পাঁচজন, ঝিনাইদহে তিনজন, চুয়াডাঙ্গায় দু’জন, নড়াইলে দু’জন ও মেহেরপুরে একজন করে মারা গেছেন।

খুলনা বিভাগের মধ্যে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় চুয়াডাঙ্গায় গত বছরের ১৯ মার্চ। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছে ৫৯ হাজার ২৬০ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এক হাজার ১৬৮ জন। এ সময় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৯ হাজার ৬৫২ জন।

রামেক হাসপাতালে ১৩ জনের মৃত্যু
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ও করোনা উপসর্গে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ নয়জন ও নারী চারজন। মৃতদের অধিকাংশের বয়স ৩৫-৬৫ বছরের মধ্যে। রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মৃত ১৩ জনের মধ্যে পাঁচজন করোনা পজিটিভ ছিলেন। আর আটজন ভর্তি ছিলেন উপসর্গ নিয়ে। আর মৃতদের মধ্যে রাজশাহীর সাতজন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার একজন, নাটোরের তিনজন, নওগাঁর একজন ও পাবনার একজন রয়েছে। রামেক হাসপাতাল পরিচালক বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় রামেক হাসপাতালের পিসিআর মেশিনে ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৮ জনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। অন্য দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের পিসিআর মেশিনে ৩৬৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১১১ জন করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। দুই ল্যাবে মোট ৫৫৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ১৪৯ জনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে।

রংপুর করোনা হাসপাতালে বেড ফাঁকা নেই : ৬ ঘণ্টা অক্সিজেন সঙ্কট
রংপুর অফিস জানায়, রংপুর বিভাগের একমাত্র করোনা হাসপাতালটিতে আর কোনো বেডই ফাঁকা নেই। তার ওপর শুক্রবার গভীর রাত থেকে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ৬ ঘণ্টা ছিল অক্সিজেন সঙ্কট। এমন পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন রোগীর স্বজনসহ খোদ স্বাস্থ্য বিভাগ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শনিবার দুপুরে এক জরুরি বৈঠকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডটিকে করোনা ডেডেকেটেড ওয়ার্ড হিসেবে চালুর ঘোষণা দেয় স্বাস্থ্য বিভাগ।

এ দিকে ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে রংপুর বিভাগের করোনা পরিস্থিতি। গত ২৪ ঘণ্টায় এই বিভাগে মারা গেছেন ১৪ জন। আক্রান্ত হয়েছেন ৫৩২ জন। প্রতি মুহূর্তে করোনার সাধারণ ও আইসিইউ রোগী বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে এই বিভাগের একমাত্র করোনা হাসপাতালটির আর কোনো অক্সিজেন সাপোর্ট বেড নেই। আইসিইউ আগেই শেষ হয়ে গেছে। এরই মধ্যে শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার পর হাসপাতালটিতে অক্সিজেন সঙ্কট শুরু হয়। ভোরে চট্টগাম থেকে সিলিন্ডার আসার কথা থাকলেও না পৌঁছানোয় অক্সিজেন স্বাভাবিক করতে তত্ত্বাবধায়কসহ কর্তৃপক্ষকে উদ্বিগ্ন অবস্থায় দেখা যায় ফটকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সকাল ৯টার দিকে হাসপাতালে দু’টি ট্রাকে করে রিজার্ভ অক্সিজেন সিলিন্ডার আনার ব্যবস্থা করে কর্তৃপক্ষ। এতে যেন প্রাণ ফিরে পায় স্বজন ও কর্তৃপক্ষ।

সার্বিক ব্যাপারে হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক ডা: নুরুননবী জানান, এখানে ১০০ শয্যার হাসপাতাল হলেও মূলত অক্সিজেন সাপোর্ট আছে ৯১টিতে। শনিবার সন্ধা পর্যন্ত ৯৫ জন রোগী ভর্তি করা হয়েছে। এরমধ্যে চারজনকে আমরা অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে পারছি না। তিনি বলেন, ভোর ৪টাতেই আমাদের অক্সিজেন আসার কথা ছিল; কিন্তু গাড়ি যথাসময়ে না আসায় আমরা খুব দ্রুত রিজার্ভ অক্সিজেন দিয়ে সরবরাহ স্বাভাবিক করেছি। আল্লাহর অশেষ রহমতে কোনো অসুবিধা হয়নি।

রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা: আবু মো: জাকিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে এই বিভাগের করোনা পরিস্থিতি। শনিবার বিকেল পর্যন্ত এই বিভাগের আট জেলায় এক লাখ ৬১ হাজার ৬০১ জনের করোনা পরীক্ষা করে ২৭ হাজার ৬৯৮ জনের শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে মারা গেছেন ৫৫১ জন।

চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত ৭১১ জনের মৃত্যু
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে করোনায় গতকাল আরেকজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মৃত্যুর মিছিলে এ পর্যন্ত যুক্ত হয়েছেন ৭১১ জন। এদের মধ্যে ৪৭৯ জন নগরের, বিভিন্ন উপজেলার ২৩২ জন।

গতকাল শনিবার সকালে জেলা সিভিল সার্জন অফিস থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামের আটটি ল্যাবে এক হাজার ৪৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে করোনার সংক্রমিত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ২৬২ জন। এরমধ্যে নগরের ১৯৭ জন এবং বিভিন্ন উপজেলার ৬৫ জন রয়েছেন। শনাক্তের হার ২৫ শতাংশ। এ নিয়ে চট্টগ্রামে মোট আক্রান্ত ৫৯ হাজার ৯৯৯ জন।

চুয়াডাঙ্গায় ৬ জনের মৃত্যু, অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ায় নৈরাজ্য
চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা জানান, চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর তালিকা প্রতিদিন দীর্ঘ হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে আরো ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় সরকারি হিসাবে করোনায় মোট ১১০ জনের মৃত্যু হলো। জেলায় নতুন করে আরো ১৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন তিন হাজার ৫১৩ জন। জেলায় মোট সুস্থ হয়েছেন দুই হাজার ৩০৬ জন। জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে ১১০ জনের। এর মধ্যে জেলায় আক্রান্ত হয়ে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে মৃত্যু হয়েছে ৯৬ জনের। এ ছাড়া চুয়াডাঙ্গায় আক্রান্ত অন্য ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে জেলার বাইরে।

এ দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল এলাকায় করোনা রোগীকে ঘিরে অ্যাম্বুলেন্স ও অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবসা এখন তুঙ্গে। অ্যাম্বুলেন্স ও অক্সিজেন সিলিন্ডার মালিক ও ড্রাইভারদের একটি সিন্ডিকেট করোনা রোগী বহনে রোগীদের কাছে সামান্য ১২ কিলোমিটার রাস্তা রোগী পৌঁছাতে এক হাজার টাকার ভাড়া পাঁচ থেকে ছয় হাজার ও ঢাকায় ১০ হাজার টাকার ভাড়া ১৮ থেকে ২২ হাজার টাকা নিচ্ছে। একই ভাড়ার মধ্যে অ্যাম্বুলেন্সে ফ্রি অক্সিজেন সুবিধা দেয়ার কথা থাকলেও প্রতিটি অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য রোগীদের কাছ থেকে এক থেকে দেড় হাজার টাকা ভাড়া নেয়া হচ্ছে। অন্য দিকে মানুষ যে পরিমাণে সংক্রমিত হচ্ছে সে পরিমাণে করোনা নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা হচ্ছে না। গত কয়েক দিন ধরে স্বাস্থ্য বিভাগ তাদের নমুনা সংগ্রহ কমিয়ে দিয়েছে। গত শুক্রবার মাত্র ২৭টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

টাঙ্গাইলে আরো ৯ জনের মৃত্যু
টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানান, জেলায় মহামারী করোনায় থামছে না মৃত্যুর মিছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরো নয়জন। এরমধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তিনজন এবং বাকি ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে উপসর্গ নিয়ে। এ ছাড়া নতুন করে জেলায় ৩২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১০ জনের দেহে পাওয়া গেছে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস। আক্রান্তের হার ৩২ দশমিক ২৫ শতাংশ। শনিবার সকাল পর্যন্ত জেলায় মৃত্যু হয়েছে ১২১ জনের। টাঙ্গাইলে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন আট হাজার ২০৯ জন। সুস্থ হয়েছেন চার হাজার ৭৫৫ জন। হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৬২১ জন। টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. মো: আতাউল গনি সাংবাদিকদের জানান, জেলায় লকডাউন বাস্তবায়নে ২৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি ও আনসারের ৮০০ সদস্য মাঠে রয়েছেন। এ ছাড়াও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পয়েন্টে ১১৩টি চেকপোস্ট বসিয়ে লকডাউন কার্যকর করা হচ্ছে।

সাতক্ষীরায় কমেছে সংক্রমণের হার
সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানান, সাতক্ষীরায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা উপসর্গ নিয়ে দুই নারীসহ আরো পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ (সামেক) হাসপাতালে তাদের মৃত্যু হয়। এ দিকে সাতক্ষীরায় কমেছে করোনা সংক্রমণের হার। গত ২৪ ঘণ্টায় সাতক্ষীরায় নতুন করে আরো ২৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ সময় সামেক হাসপাতালের আরটি পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৬৪ জনের। শনাক্তের হার ১৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

সাতক্ষীরা সদর হাসপতালের মেডিক্যাল অফিসার ও জেলা করোনা-বিষয়ক তথ্য কর্মকর্তা ডা: জয়ন্ত কুমার সরকার জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা উপসর্গ নিয়ে সামেক হাসপাতালে পাঁচজন মারা গেছে। এ সময় সামেক হাসপাতালের আরটি পিসিআর ল্যাবে মোট ১৬৪টি নমুনা পরীক্ষা করে ২৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ১৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় সুস্থ হয়েছেন ৩১ জন। জেলায় মোট সুস্থ হয়েছেন দুই হাজার ৬১৯ জন।

রাজবাড়ীতে তিনজনের মৃত্যু
রাজবাড়ী সংবাদদাতা জানান, রাজবাড়ী ও পাংশা হাসাপাতালে ভর্তি থাকা করোনা পজিটিভ রোগী আওয়ামী লীগ নেতাসহ তিনজন মারা গেছেন। এ নিয়ে জেলায় করোনায় মারা গেছেন ৪১ জন। এখন পর্যন্ত রাজবাড়ীতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৩১৩ জন ও সুস্থ হয়েছেন চার হাজার ৩২৯ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৪১ জনের।

এ দিকে রাজবাড়ীর মহাসড়কে কঠোরভাবে লকডাউন পালিত হলেও হাটবাজার ও অলিগলিতে সব রকম তিন চাকার যানে মানুষ গাদাগাদি করে চলছে। তাদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই। অবশ্য সড়কে সড়কে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনী মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে চেক করছে।

বগুড়ায় ৬ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ১১২
বগুড়া অফিস জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় বগুড়ার দু’টি সরকারি হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরো ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা শনিবার সকাল পর্যন্ত ৪১৬ জন। একই সময়ে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১১২ জন। শনিবার বগুড়ার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা: মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন এ তথ্য জানান। শনিবার সকাল পর্যন্ত জেলায় কোয়ারেন্টিনসহ করোনায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৯৩২ জন।
নলছিটিতে একজনের মৃত্যু

ঝালকাঠি সংবাদদাতা জানান, নলছিটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে গতকাল শনিবার সকালে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নলছিটি উপজেলার রানাপাশা ইউনিয়নের ভেরনবাড়িয়া গ্রামের নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অফিসার আবদুল মজিদ হাওলাদার মারা গেছেন। গতকাল সকাল সাড়ে ৬টার দিকে তিনি মারা যান।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/592620