রংপুর মহানগরীতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে আওয়ামী লীগ নেতার ক্রয়সূত্রে মালিক লেখা সাইনবোর্ড :নয়া দিগন্ত
৫ এপ্রিল ২০১৭, বুধবার, ৯:৫০

পিবিআইর তদন্তে প্রমাণিত

রংপুরে সওজের জমি জাল দলিল করে বিক্রি আ’লীগ নেতার

রংপুর নগরীর একজন আওয়ামী লীগ নেতা ও তার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে জাল দলিল তৈরি ও দখল করে সরকারি জমি বিক্রি করার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআই তাদের এই তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছে। আদালত আগামী ১৭ মে বিষয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে। এ দিকে অবস্থা বেগতিক দেখে সংশ্লিষ্ট ভূমি তহশিলদার জাল নাম খারিজটি বাতিলের জন্য সাবরেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করেছেন।
পিবিআইর অনুসন্ধানে রংপুর শহরের মডার্ন মোড় এলাকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমি ভূমি অফিসের এক কর্মকর্তার যোগসাজশে জাল কাগজপত্র তৈরি ও দখল করে মাটি ভরাটের পর তা বিক্রির জন্য বায়না দলিল করে প্রায় ১২ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে মহানগর তাঁতীলীগের আহ্বায়ক ও জেলা আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ সভাপতি ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জাকারিয়া আলম শিপলু ও তার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।
আদালত সূত্রে প্রকাশ, দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার মধ্যপাড়ার গুড়গুড়ি এলাকার মৃত বাশারত উল্লাহ পাইকারের ছেলে নুর মোহাম্মদ রংপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে একটি মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় রংপুরের বিনোদপুর এলাকার মৃত এ কে এম আজিজুল ইসলামের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ সভাপতি জাকারিয়া আলম শিপলু, গাইবান্ধার মৃত শফিকুল ইসলামের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম, নগরীর আলমনগর এলাকার ওমর আলীর ছেলে খায়রুল ইসলামসহ পাঁচজনকে।
মামলায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, তারা সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাত শতাংশ জমি জাল নামজারি, মাঠ পর্চা ও কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে বিক্রির জন্য ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দাম ঠিক করে ১১ লাখ ৪৯ হাজার টাকা বায়না দলিল করে আত্মসাৎ করেছেন। বিষয়টি তদন্তের জন্য সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন। পিবিআই মামলাটি তদন্তের জন্য এসআই নুরুন্নবীকে দায়িত্ব দেয়। এসআই নুরুন্নবী সাত মাস তদন্ত করে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ওই আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। আদালতের বিচারক গত ৯ মার্চ মামলাটি জজ আদালতে স্থানান্তর করেন। সেখানে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী ১৭ মে।
পিবিআই তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে বলেছে, জাকারিয়া আলম শিপলু, জাহাঙ্গীর আলম ও খায়রুল ইসলাম প্রতারণা করার জন্যই ওই তফসিল বর্ণিত জমির মাঠ পর্চা ও কাগজপত্রাদি জাল করে এগুলোর মাধ্যমে আনোয়ারুল ইসলাম শামীমের কাছ থেকে ১১ লাখ ৪৯ হাজার টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। এর মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়াও অপর আসামি দালাল জহুরুল ইসলাম ও হজরত আলী ক্রেতাকে মাঠ পর্চা ও কাগজপত্রাদি সঠিক আছে প্রমাণ দিয়ে জালিয়াতি চক্রকে ওই টাকা আত্মসাৎ করতে সহযোগিতা করায় তাদের বিরুদ্ধেও অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে।
সূত্র জানায়, রংপুর মহানগরীর মাহিগঞ্জ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা খাইরুজ্জামান বড় অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে শিপলু ও তার সিন্ডিকেটকে জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি ভুয়া ও জাল দলিল, নাম খারিজ, নামজারি, মাঠ পর্চা তৈরি করে দেন। সিন্ডিকেটটি ওই ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে তা বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ ছাড়াও শিপলু ও তার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে নগরীর সরদার পাড়ায় এভাবে জাল কাগজপত্র তৈরি করে জমি দখল ও বিক্রি, দর্শনায় রহিম উদ্দিন ভরসার ভোগ দখলীয় জমি দখলসহ বিভিন্ন স্থানে জমি দখল করে তা আত্মসাতের অভিযোগ আছে। সূত্র জানায়, জালিয়াতির সাথে জড়িত কর্মকর্তা খায়রুজ্জামান এখনো সেখানে বহাল আছেন। তার বিরুদ্ধে কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
এ ব্যাপারে মাহিগঞ্জ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের বর্তমান সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন জানান, জাল কাগজপত্র তৈরির শিপলু সিন্ডিকেটের সাথে এই অফিসের উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা খায়রুজ্জামান জড়িত। আমি গত বছর জুন মাসে দায়িত্ব নেয়ার পর বিষয়টি নজরে আসার সাথে সাথেই সেটি লালকালি দিয়ে কেটে দিয়েছি। এরপর খাইরুজ্জামানের অনুরোধে সদর ভূমি অফিসে ওই ভুয়া নামজারি ও হোল্ডিং বাতিলের আবেদন করেছি।
এ ব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নুরুন্নবী জানান, আমি ঘটনাটির তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। এটি রংপুরের সবচেয়ে বড় জমি জালিয়াতি সিন্ডিকেট।
মামলার বাদি ও ক্রেতার বাবা নুর মোহাম্মদ জানান, জমি নিয়ে সিন্ডিকেটের প্রতারণার কথা জানার পর টাকা ফেরত চাই। কিন্তু তারা জমি সঠিক আছে বলে দাবি করে এবং সরকারি দলের বড় নেতা হওয়ার ধমক দেখায়। এরপর আমি বাধ্য হয়ে মামলা করি। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত জাকারিয়া আলম শিপলু জানান, ওই জমি আমরা কিনেছি। আমাদের নামে মিথ্যা মামলা ও প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/209681