৩ জুলাই ২০২১, শনিবার, ২:৪১

অন্য রোগে হাসপাতালে ভর্তি পরে করোনায় আক্রান্ত

রাজধানীর সোহ্‌রাওয়ার্দী হাসপাতালে অন্যান্য রোগীর চাপ কম থাকলেও দু’সপ্তাহ ধরে বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। বেশির ভাগ রোগী আসছেন ঢাকার বাইরে থেকে। তবে ঢাকার ভেতরের রোগীর সংখ্যাও আগের তুলনায় বেশি। এদিকে হাসপাতালের অন্যান্য বিভাগে চিকিৎসারত রোগীরাও আক্রান্ত হচ্ছেন করোনায়। তাদের সবাইকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে হাসপাতালের করোনা ইউনিটে। গত দুই সপ্তাহ আগে হাসপাতালের বেড ছিল অনেকটা ফাঁকা। সেখানে কোনো বেড এখন খালি নেই। ২৭শে জুন রোগীর সংখ্যা ছিল আটজন। সেখানে ১ নাম্বার ওয়ার্ডে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা ২৩ জনে দাঁড়িয়েছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাড়তি বেডের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন আগে থেকেই। গতকাল শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে সরজমিন ঘুরে রোগী ও হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এমন তথ্য।

এক মাস আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত বান্ধবীকে রক্ত দিতে যান এসএসসি পরীক্ষার্থী মো. মুক্তাসির (১৭)। গ্রামের বাড়ি নাটোরের লালপুর। রক্ত দিয়ে ফিরে আসার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন তিনি। মুক্তাসিরের বড় ভাই নাছির উদ্দিন বলেন, এক মাস আগে তার ভাই রোড এক্সিডেন্ট করে। রাজশাহী পপুলার হাসপাতালে ভর্তি ছিল। সেখানে চিকিৎসায় কোনো উন্নতি না হওয়ায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে আসেন। গত সপ্তাহে তাকে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। হঠাৎ শরীরে জ্বর ও কাশি থাকায় চিকিৎসক তাকে করোনা পরীক্ষা করতে বলেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নমুনা নেন বৃহস্পতিবার বিকালে। গতকাল সকালে তার করোনা পজেটিভ আসে। ওইদিন বেলা একটার দিকে তাকে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগ থেকে কোভিড-১৯ ইউনিটের ১ নাম্বার ওয়ার্ডের ১১ নাম্বার বেডে ভর্তি করা হয়। এদিকে ভোলা থেকে সাতদিন আগে চিকিৎসার জন্য এসেছেন রিপন হালদার। তিনি হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে চিকিৎসারত ছিলেন। রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন তিনি। বন্ধুদের সঙ্গে মারামারি করতে গিয়ে পেটে আঘাত লাগে তার। এরপর পেটে রক্ত জমে যায়। রিপনের বড় ভাই সামছুদ্দীন বলেন, ভাইয়ের পেটে রক্ত জমে যাওয়ার কারণে তাকে অপারেশনের জন্য তিনদিন আগে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গায়ে জ্বর আসার কারণে ডাক্তার তাকে করোনা পরীক্ষার জন্য পরামর্শ দেন। নমুনা সংগ্রহ করে নেয়ার পরে তার করোনা পজেটিভ আসে। এরপর বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে তাকে করোনা ইউনিটে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। টাঙ্গাইল থেকে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসেন মো. নুর আলম হোসেন। তিনি অনেক দিন ধরে একটি বিরল রোগে ভুগছেন। হঠাৎ তার পায়ের ওপরের অংশ ফুলে যায়। নুর আলমের বড় ভাই মো. কামরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য আনা হয়। তখন ওই হাসপাতাল থেকে চিকিৎসার জন্য রেফার করে সোহরাওয়ার্দীতে। ১৯ দিন ভর্তি থাকার পরে নুর আলমের শরীরে হালকা জ্বর আসে। তারপর তার নমুনা সংগ্রহ করে। নমুনা দেয়ার পর করোনা পজেটিভ আসে। তিনি আরও বলেন, তার পা ব্যথা থেকে ফুলে যায়। তার সার্জারি করার কথা কিন্তু করোনা হওয়ায় সেটা করা সম্ভব হচ্ছে না। ডাক্তারও সেইভাবে কিছু বলছেন না। করোনা আক্রান্তের পর দুবার টেস্ট করে পজেটিভ আসছে। আরও ১৪ দিন পরে আবার টেস্ট করতে হবে।

বেলি বেগম বলেন, ছেলে আবদুল্লার এক বছর ধরে অটোরিকশার ধাক্কায় পা ভেঙে গেছে। তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জেই দুর্ঘটনাটি হয়। সেখান থেকে অপারেশনের জন্য ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। এক মাস ধরে এই হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি। বৃহস্পতিবার তার অপারেশন করার কথা থাকলেও ডাক্তার করোনার পরীক্ষা করাতে বলেন। পরীক্ষার পরে তার রিপোর্ট পজেটিভ আসে। ছেলের শরীরে কোনো ধরনের উপসর্গ ছিল না। গত বৃহস্পতিবার দুপুরের আগে তাকে করোনা ইউনিটে ভর্তি করা হয়। কুমিল্লার রহিমা খাতুন স্বামী আবদুল হাকিমের শরীরে জ্বর, কাশি, সর্দি থাকায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন। করোনা পরীক্ষা করানোর পর তার পজেটিভ আসে। গতকাল সকালে তাকে হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করানো হয়।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=281700&cat=2