৩ জুলাই ২০২১, শনিবার, ২:৩৭

ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ উন্নয়ন

ভূমিকম্প প্রতিরোধকহীন ঝুঁকিতে নির্মিত ব্রিজ

ভবিষ্যতে বড় ভূমিকম্প ও বজ্রপাতের ঝুঁকিতে; পরামর্শকের সংখ্যা কমলেও ব্যয় বাড়ছে প্রায় ১২ কোটি টাকা

ভূমিকম্প প্রতিরোধ ডিভাইস ছাড়াই নির্মাণ করা হচ্ছে দেশের ২৬ জেলায় বিভিন্ন আকৃতির ব্রিজ নির্মাণ। এতে নির্মাণাধীন এই ব্রিজগুলো ভবিষ্যতে বড় ভূমিকম্প ও বজ্রপাতের ঝুঁকিতে রয়েছে। রেলিংসহ বেশি কিছু ব্রিজের নির্মাণকাজ ত্রুটিপূর্ণ বলেও ধরা পড়েছে। কাজের ধরনের বর্ধিত দুই বছর মেয়াদেও প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হবে না বলে আশঙ্কা করছে আইএমইডি। পাশাপাশি পরামর্শকের সংখ্যা কমলেও এই খাতে খরচ ১১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যাতে আপত্তি জানিয়েছে আইএমইডি।

পরিকল্পনা কমিশন ও প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, পুরনো, সরু ও ঝুঁকিপূর্ণ মিলে দেশের ২৬ জেলার ৫০ উপজেলার ৬১টি ব্রিজ উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা নেয়া হয়। কারণ বর্ধিত যানের সঙ্কুলান হচ্ছিল না। পরে নরসিংদীর পলাশের শীতলক্ষ্যার ব্রিজটি বাদ দেয়া হয়। সেখানে নতুন করে যুক্ত করা হয় ২২টি ব্রিজের নাম। ফলে বর্তমানে প্রকল্পের আওতায় ব্রিজের সংখ্যা ৮০টিতে উন্নীত হয়। জাইকার ঋণ সহায়তায় ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে প্রকল্পটি শুরু করা হয়। তাতে মোট খরচ ধরা হয় ২ হাজার ৯১১ কোটি ৭৫ লাখ ৩২ হাজার টাকা। যেখানে জাইকা দিচ্ছে ১ হাজার ৯০৫ কোটি ২০ লাখ টাকা। ২০১৫ সালের ১০ নভেম্বর প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পষিদের নির্বাহী কমিটির সভা (একনেক) থেকে অনুমোদন দেয়া হয়। কথা ছিল ৫৬ মাসে অর্থাৎ ২০২০ সালের ৩০ জুন প্রকল্পটি সমাপ্ত হবে। পরে কিন্তু প্রকল্পটির নির্ধারিত ৪ বছর ৮ মাস মেয়াদসহ ইতোমধ্যে আরো এক বছর অতিক্রম করেছে। সাড়ে পাঁচ বছরে প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ৫৯.১৩ শতাংশ বলে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) বলছে। আগামী দুই বছরেও এই প্রকল্পে ২২টি ব্রিজ নির্মাণকাজ সমাপ্ত হওয়া নিয়ে আইএমইডি শঙ্কা প্রকাশ করেছে।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হলো, ২৪.৩৩ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ, মোট ৪ হাজার ৬৭৪ মিটার দৈর্ঘ্যে ৮০টি ব্রিজ নির্মাণ, দুইটি কালভার্ট নির্মাণ, মাটির কাজ, ৪২ কিলোমিটার পেভমেন্ট নির্মাণ, ২১টি যানবাহন কেনা, ৬০০ জনমাস পরামর্শক সেবা সংগ্রহ।

কাজের পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের জন্য ১৪.৯৪ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের কথা থাকলেও ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত অধিগ্রহণ হয়েছে ১২.৮৯ হেক্টর। সেপ্টেম্বর ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৮০টি ব্রিজের মধ্যে মাত্র ২৫টির কাজ হয়েছে। আর ৩৫টির কাজ ৯৮ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ২২টির কাজ মাত্র শুরু করা হয়েছে। এই ২২টির অগ্রগতি ২০ শতাংশ। আগামী ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এসব কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না বলে আইএমইডি মনে করছে।

অন্য দিকে উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের সাতটি ব্রিজের গাইড ব্যাংকের ডিজাইন ও নির্মাণ ত্রুটিপূর্ণ। দিনাজপুরে চারটি ব্রিজের এলাইনমেন্ট কিছুটা ত্রুটিপূর্ণ মনে হয়েছে। যার কারণে ওই জেলায় নির্মিত ব্রিজগুলোর তলদেশে নদীর প্রস্থ কিছুটা কমে গেছে। আরডিপিপি অনুযায়ী বাস্তব কর্মপরিকল্পনা তৈরি না করা এবং আরডিপিপি অনুযায়ী বছরভিত্তিক ব্যয় পরিকল্পনা থেকে বাস্তবে ব্যয় কম। আবার মহাসড়কের বা সড়কের প্রস্থের তুলনায় কিছু ব্রিজের প্রস্থ কম করা হয়েছে। এই ধরনের ব্রিজের দুই দিকে সড়কের ওপরে বিজ্ঞপ্তি ফলক স্থাপন করা উচিত। যাতে যানবাহনের গতি সীমিত করে চালকরা সতর্ক থাকতে পারে। শীতলক্ষ্যা নদীর ব্রিজ বাদ দিয়ে নতুন করে ২২টি ব্রিজ নির্মাণ পরিকল্পনা নিয়ে ডিপিপি সংশোধনে প্রায় ২৪ মাস বিলম্ব। এতে মূল ডিপিপি থেকে ৩৬ মাস পিছিয়েছে।

নির্মাণ উপকরণের গুণগত মান সন্তোষজনক। তবে ব্রিজ নির্মাণে ভূমিকম্প সহনশীলতার জন্য অ্যান্টি আর্থ কোয়াক ডিভাইস ব্যবহার করা হয়নি, যা ভবিষ্যতে বড় ভূমিকম্প হলে কিছুটা ঝুঁকি থেকে যায়। এ ছাড়াও দেখা যায়, ব্রিজে বজ্রপাত সহনশীল কিছু ব্যবহার করা হয়নি। মাত্র ১০টি ব্রিজে আর্থারিং স্টিল গার্ডার ব্যবহার করা হয়েছে। আত্রাই নদীর ব্রিজে নতুন করে নির্মাণে এলাইনমেন্ট কিছুটা ত্রুটিপূর্ণ মনে হয়েছে। নদীর দুই কূলে তলদেশ সংরক্ষণ করা হয়নি। ফলে প্রবাহ নদীর দুই কূল ঘেঁষে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রিজের ভাটিতে নদী-কীর ভাঙন আক্রান্ত হয়েছে।
আইএমইডি তার পর্যবেক্ষণে বলছে, প্রকল্পটিতে মূল প্রস্তাবনায় পরামর্শক সেবা সংগ্রহে প্রাক্কলিক ব্যয় ধরা হয় ১৮১ কোটি ৯৪ লাখ ৮১ হাজার টাকা। এখন প্রথম সংশোধনীতে তা ১১ কোটি ৮৪ লাখ ৫৩ হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১৯৩ কোটি ৭৯ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। যেখানে প্রথমে পরামর্শকের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ২৩৪ জনমাস, এখন কমে হয়েছে ৪ হাজার ৫৩৮ মাস। চাওয়াই ব্রিজের ভাটির দিকে গাইড ব্যাংকের এলাইনমেন্ট সঠিকভাবে নিরূপণ করা হয়নি। প্রতিটি ব্রিজে পরিবেশবান্ধব পোস্ট রেলিং না করে সলিড আরসিসি ওয়াল দিয়ে রেলিং করা হয়েছে। যার কারণে নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মানুষের দৃষ্টির আড়াল হয়েছে। এটাতে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/592404