৩ জুলাই ২০২১, শনিবার, ২:৩৫

দেশের বিভিন্নস্থানে প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম

টানা বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের বিভিন্ন স্থানে নদনদীর পানি বেড়ে গেছে। একই কারণে নদের কয়েকটি স্থানে বাঁধ ডুবে ও ভেঙে গিয়ে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের বনপাড়া আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ এলাকায় প্রধান সড়ক ভেঙে যাওয়ায় যাতায়াতে দুর্ভোগে পরেছেন গ্রামের বাসিন্দারা।

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলায় কংস নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং উজানের পানি নিম্নাঞ্চলে নেমে আসায় উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের ১১টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া পানির তোড়ে ধুরাইল ইউনিয়নের বনপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান সড়কটি ভেঙে পড়ায় ওই পথে যাতায়াতে দুর্ভোগে পড়ছে মানুষ।

এলাকাবাসী জানিয়েছে, টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শুক্রবার কংস নদের পানি বৃদ্ধি পায়। নদের কয়েকটি স্থানে বাঁধ ডুবে ও ভেঙে গেছে। এ অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের গোরকপুর, চরগোরকপুর, পাবিয়াজুরী, কন্যাপাড়া, জৈতক ও ডোবারপাড়ায়। আমতৈল ইউনিয়নের আমতৈল বাহিরশিমুল এলাকা ও ধারা ইউনিয়নের টিকুরিয়া, গাংগিনা, মাঝিয়ালসহ কয়েকটি নিচু এলাকাতেও নতুন করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।

গতকাল থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় আরও বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন এসব ইউনিয়নের গ্রামের বাসিন্দারা। সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় বিকল্প পথে দুই কিলোমিটার ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

উপজেলার দর্শা এলাকার বাসিন্দা রহিম উদ্দিন বলেন, এলাকার কৃষকের আমনের বীজতলাসহ বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। গোরকপুর গ্রামের বাসিন্দা মুজিবুর রহমান বলেন, গত রাত থেকে নতুন করে ঢলের ও বৃষ্টির পানিতে ৩টি ইউনিয়নের প্রায় ১১টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে আমনের বীজতলা ও এলাকার পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে।

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধের (হাট পয়েন্টে) ৪৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১ দশমিক ৪১ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি এখনও বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও প্রতিদিনই যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় চরাঞ্চল ও নদীতীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করেছে। পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার সদর, কাজিপুর, চৌহালী ও শাহজাদপুরের বেশ কিছু এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, গত কয়েক দিন ধরেই যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৬ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী কয়েক দিন এ পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।

এদিকে বাংলাদেশের পাশাপাশি উজানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এর ফলে উজান থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করা ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও পদ্মা অববাহিকায় পানি দ্রুত বাড়ছে। এতে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে দেশের অন্তত ২০টি জেলার নিম্নাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হতে পারে বলে পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে।

সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এই পূর্বাভাস দিয়েছে। বরাবরের মতো এবারও দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে বন্যা বেশি বিস্তৃত হতে পারে। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের নিচু এলাকাতেও বন্যা দেখা দিতে পারে। তবে এই বন্যা গত বছরের মতো এত দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা কম।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূইয়া জানান, জুলাইয়ের প্রথম থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে দেশের উত্তর থেকে মধ্যাঞ্চলে একটি স্বাভাবিক বন্যা হয়। এবারও বন্যাটি আসতে যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এটি স্বল্পমেয়াদি অর্থাৎ এক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হবে না।

ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা : বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ভারতের অরুণাচল, আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ থেকে নেমে আসা উজানের পানিতে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি বাড়বে। আর জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এই সময় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, পাবনা, নওগাঁ ও নাটোরের নিম্নাঞ্চলে বন্যা হতে পারে। একই সময়ে দেশের উত্তরাঞ্চলেরে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানিও বাড়তে পারে। তিস্তার পানি কয়েকটি জায়গায় বিপৎসীমা অতিক্রম করে অববাহিকাভুক্ত লালমনিরহাট, নীলফামারী ও রংপুরের নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা হতে পারে।

গঙ্গা অববাহিকা : আত্রাই নদের পানির চাপে ভেঙে গেছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। ছবিটি নওগাঁর মান্দা উপজেলার পার-নুরুল্যাবাদ এলাকার
আত্রাই নদের পানির চাপে ভেঙে গেছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। ভারতের বিহার ও উত্তর প্রদেশের কিছু কিছু স্থানে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টির কারণে গঙ্গার পানি বাড়তে পারে। এর ফলে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি বেড়ে পদ্মায় এসে পড়ে কয়েকটি জায়গায় বিপৎসীমা অতিক্রম করবে। এ সময়ে দেশের মধ্যাঞ্চলের রাজবাড়ি, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও চাঁদপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা হতে পারে। তবে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে গঙ্গা নদীর অববাহিকার জেলাগুলোতে বন্যার আশঙ্কা নেই।

মেঘনা অববাহিকা: ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের বৃষ্টির পানিতে সুরমা-কুশিয়ারা ও মেঘনা অববাহিকার উজানের সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, সোমেশ্বরী, ভুগাই-কংস, মনু, খোয়াই নদ-নদীর পানি দ্রুত বেড়ে আকস্মিক বন্যা হতে পারে। বন্যার পাশাপাশি দেশের তিন পার্বত্য জেলা এবং কক্সবাজারে ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা আছে। কক্সবাজার ও বান্দরবানে ভারী বৃষ্টির কারণে ভূমিধসের আশঙ্কা আছে। এ ব্যাপারে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে স্থানীয় প্রশাসনকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

https://dailysangram.com/post/457375