৩ জুলাই ২০২১, শনিবার, ২:৩৪

তিন বছরের প্রকল্পে পার হলো ৯ বছর

১৫২ কোটি টাকার খরচ বেড়ে ৪৯৮ কোটি টাকা

স্টাফ রিপোর্টার : প্রায় ৯ বছর আগে রশিদপুরে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে দেশেই পেট্রোলকে রূপান্তরের মাধ্যমে তৈরি করা হবে অকটেন ও তরলীকৃত গ্যাস (এলপিজি)। এ জন্য ১৫২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়।

তিন বছরের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু নয় বছর পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি প্রকল্পের কাজ।
কয়েক দফায় প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে সময়ও। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সর্বশেষ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৯৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। কিন্তু গেলো জুনে প্রকল্পের সর্বশেষ নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হলেও কাজের অগ্রগতি শতভাগ হয়নি।

জানা গেছে, ‘পেট্রোলকে অকটেনে রূপান্তরের জন্য রশিদপুরে দৈনিক ৩ হাজার ব্যারেল ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যাটালাইটিক রিফরমিং ইউনিট (সিআরইউ) স্থাপন (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পে বিরাজ করছে এমন অবস্থা। প্রকল্পটির স্টিয়ারিং কমিটির পঞ্চম সভার কার্যবিবরণী সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। গত ৯ জুন অনুষ্ঠিত ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান।
স্টিয়ারিং কমিটির সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, পরিকল্পনা বিভাগের যুগ্ম সচিব ওই সভায় বলেন, ‘প্রকল্পটি ১৫২ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১২ সালের মার্চ হতে ২০১৫ সালে বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদিত হয়। পরবর্তীতে ৩৫৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১২ সালের মার্চ হতে ২০১৭ সালে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পের প্রথম সংশোধিত ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনুমোদিত হয়। এরপর ৪৯৭ কোটি ৯৮ লাখ ৩১ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১২ সালের মার্চ হতে ২০১৯ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদিত হয়। পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয়তার কারণে দুই দফায় প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া মেয়াদ ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছিল।’

ওই সভায় পরিকল্পনা বিভাগের যুগ্ম সচিব জানান, প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো- রশিদপুরে দৈনিক ৩ হাজার ৭৫০ ব্যারেল ক্ষমতাসম্পন্ন কনডেনসেট ফ্র্যাকশনেশন প্ল্যান্ট ও দৈনিক ৪ হাজার ব্যারেল ক্ষমতাসম্পন্ন কনডেনসেট ফ্র্যাকশনেশন প্ল্যান্ট হতে উৎপাদিত পেট্রোলকে ক্যাটালাইটিক রিফরমিং ইউনিটের মাধ্যমে অকটেন ও এলপিজি উৎপাদন করা।

সভায় প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি জানতে চাওয়া হলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘২০২১ সালের মে পর্যন্ত প্রকল্পটির ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক অগ্রগতি ৪১০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৮২ দশমিক ৩ শতাংশ। পূর্ত কাজের ৯৯ দশমিক ৮ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। পন্ড বিউটিফিকেশন, প্লান্ট এরিয়ায় সামান্য গ্রাভেলিং কাজ অবশিষ্ট আছে। মালামাল প্রকিউরমেন্টের ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। কিছু স্পেয়ার পার্টস আমদানি প্রক্রিয়া চলমান আছে। প্ল্যান্টের পাইপ ফিট-আপ, পাইপ ওয়েল্ডিং, রেডিওগ্রাফি, পোস্ট ওয়েল্ড হিট ট্রিটমেন্ট, ইকুপমেন্ট ইরেকশন ও স্টিল স্ট্যাকচার কন্সট্রাকশন, ২টি এলপিজি ট্যাংক নির্মাণ, হাইড্রোটেস্ট, বক্স আপ পুনঃস্থাপন ও টেস্টিং কাজ ইতোমধ্যে শতভাগ শেষ হয়েছে।

প্লান্ট অপারেশনের অগ্রগতি জানতে চাওয়া হলে প্রকল্প পরিচালক জানান, লাইসেন্সর এ্যাকচেনস ফ্রান্সের এক্সপোর্টরা চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে সাইটে অবস্থান করে প্লান্ট সুপারভাইজের মাধ্যমে পাঞ্চ লিস্ট দেন। পাঞ্চ লিস্ট সুরাহা করার পর ফের এ্যাকচেনস ফ্রান্সের টেকনিক্যাল এক্সপোর্টরা সাইটে আসেন এবং চলতি বছরের ১৮ মার্চ থেকে ইপিসি ঠিকাদারি কমিশনিং শুরু করে। গত ২৪ মার্চ রিএ্যাক্টর ড্রাই-আউট এবং ক্যাটালিস্ট লোডিং ও লিক টেস্ট গত ২৭ মার্চ শেষ হয়েছে। গত ১ এপ্রিল থেকে ফিড গ্রহণ করে এবং গত ২ এপ্রিল কোল সাকুলেশন তৈরি শেষ করে। গত এপ্রিল হতে এনএইচটি ইউনিটে হট সাকুলেশন শুরু হয়। হাইড্রোজেন গ্যাস প্রেসারাইজেশন, ক্যাটালিস্ট সালফাইাডং ও প্রসেস এলাইমেন্ট শেষে গত ১০ মে এনএইচটি ইউনিটের উৎপাদিত হেভি নাফথা টি-৫১৫ ট্যাংকে মজুত করা শুরু হয়।

প্রকল্পের বাস্তবায়ন সমস্যা জানতে চাওয়া হলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘অনুমোদিত ডিপিপিতে ডলারের সঙ্গে টাকার বিনিময় হার ৭৯ টাকা হিসাবে বৈদেশিক মুদ্রার প্রাক্কলন করা হয়েছিল। বর্তমানে ডলারের সঙ্গে টাকার বিনিময় হার হার প্রায় ৮৫ টাকা। বিনিময় হার বৃদ্ধির কারণে চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদারকে বৈদেশিক মুদ্রায় মূল্য পরিশোধে অতিরিক্ত আনুমানিক ২১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা দেয়া হবে।’

প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, প্ল্যান্টটিতে অত্যাধুনিক কেমিক্যাল প্রযুক্তি অর্থাৎ ক্যাটালাইটিক রিফমিং টেকনোলজি ব্যবহার হচ্ছে। যেখানে ক্যাটালিস্ট বা প্রভাবকের উপস্থিতে পেট্রোলের উপাদানগুলোর হাইড্রো-কার্বন চেইন ভেঙে তা পুনর্গঠনের ফলে অকটেন ও এলপিজি উৎপন্ন হয়।’

https://dailysangram.com/post/457419