২ জুলাই ২০২১, শুক্রবার, ২:১৮

করোনায় দেশে সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ ১৪৩ জনের মৃত্যু

করোনা রোধে চলমান সাত দিনের কঠোর লকডাউনের প্রথম দিন দেশে সর্বোচ্চ ১৪৩ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৬৪৬ জনে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) নতুন করে করোনা পজিটিভ হয়েছেন আরও ৮ হাজার ৩০১ জন। এতে দেশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৯ লাখ ২১ হাজার ৫৫৯ জন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়েছে। নতুন করে টাঙ্গাইলকে করোনার হটস্পট বলে গণ্য করা হচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৪ হাজার ৬৬৩ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ২০ হাজার ৯১৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩২ হাজার ৫৫ জনের পরীক্ষায় শনাক্তের হার ২৫ দশমিক ৯০ শতাংশ। এর আগের দিন বুধবার দেশে আরও ১১৫ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া শনাক্ত হয় আরও ৮ হাজার ৮২২ জন। দেশে এর আগে করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ছিল গত রোববার (২৭ জুন)। সেদিন মৃত্যুর মিছিলে যোগ হয়েছিল আরও ১১৯ জন। চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল দেশে করোনায় তৃতীয় সর্বাধিক ১১২ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া গত ১৬, ১৭, ১৮ ও ২৫ এপ্রিল ধারাবাহিকভাবে শতাধিক মৃত্যু হয়।

এদিকে ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার বাইরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে করোনার উপসর্গ নিয়ে নিয়ে ১৩৬ জন মারা গেছেন। এরমধ্যে দক্ষিণ ও উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে ৯৬ জন। সবচেয়ে বেশি মারা গেছে নতুন হটস্পট টাঙ্গাইলে ১৬ জন। সর্বোচ্চ শনাক্তের হার সেখানেই ৪০ দশমিক ৯২ শতাংশ। শয্যা ও অক্সিজেন সংকটে বেসামাল রোগী ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসা চলছে মেঝেতেও।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন আর সীমান্ত জেলা নয়, ভয়াবহ করোনা ছড়িয়ে পড়েছে দেশব্যাপী। তাই মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। রোগী বাড়ায় চিকিৎসা সেবা দিতে দিশেহারা চিকিৎসক ও নার্সরা। এবার নতুন হটস্পট হিসেবে যুক্ত হয়েছে টাঙ্গাইল। করোনা ও উপসর্গ নিয়ে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ মারা গেছেন ১৬ জন। ৬২৮টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত ২৫৭ জন। হার ৪০ দশমিক ৯২ শতাংশ। ৫০ শয্যার বিপরীতে ৬০ জন ভর্তি থাকায় অনেকের চিকিৎসা চলছে মেঝেতে।

করোনা ও উপসর্গ নিয়ে রাজশাহী মেডিকেলে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে রাজশাহীর ১৪, নওগাঁর ৫, এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও ঝিনাইদহের একজন করে। ২৪ ঘণ্টায় ৪০৬টি নমুনা পরীক্ষায় ১৬২ জন শনাক্ত হয়েছেন। শনাক্তের হার ৩৯ দশমিক নয় শতাংশ।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. কুদরত ই খুদা জানান, সীমান্তবর্তী জেলা সাতক্ষীরায় ১৪ জন মারা গেছেন। ২৪ ঘণ্টায় ১৯২টি নমুনা পরীক্ষায় ৬৭ জন শনাক্ত হয়েছেন। হার ৩৫ শতাংশ। জেলায় ৮০৯ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতাল ও বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এদিকে সাতক্ষীরায় যে ১৪ জন মারা গেছেন তাদের মধ্যে ৬ জনের অক্সিজেন সংকটে মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ নিহতদের স্বজনদের। খুলনা মেডিকেলে আরটি পিসিআর ল্যবে দুষণ দেখা দেয়ায় নমুনা পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নগরীর তিনটি হাসপাতালে মারা গেছেন ১১ জন। তাদের মধ্যে ৫ জন খুলনার, ৩ জন বাগেরহাটের ও একজন যশোরের। ২৪ ঘণ্টায় ৬৩৩টি নমুনা পরীক্ষায় ২৪২ জন শনাক্ত হয়েছেন। হার ৩৮ শতাংশ।

যশোর সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, যশোরে মারা গেছেন ১২ জন। ৫৩৭টি নমুনা পরীক্ষায় ১৪২ জন শনাক্ত। হার ২৭ শতাংশ। তবে কুষ্টিয়ায় মারা গেছেন ৯ জন। আর চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহে ৫ জন করে মারা গেছেন। ময়মনসিংহে ৮ জন মারা গেছেন। ২৪ ঘণ্টায় ৪৪৩টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত ১২৯ জন। করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে বগুড়ায়। ২৪ ঘণ্টায় ৫ জন মারা গেছেন। এছাড়া ৩৫২টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত ১৩২ জন। হার ৩৮ শতাংশ। এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে সিলেটে ৭ জন, চট্টগ্রামে ৫ জন, নাটোর, পিরোজপুর ও দিনাজপুরে ৪ জন করে, লালমরিহাটে ৩ জন এবং ঠাকুরগাঁওয়ে ২ জন মারা গেছেন।

এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে মারা গেছেন আরও ৮ হাজার ৪৬৮ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৮৯ হাজার ২৮৬ জন।

এ নিয়ে বিশ্বে এখন পর্যন্ত মোট করোনায় মৃত্যু হলো ৩৯ লাখ ৬২ হাজার ৩৯৯ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ কোটি ২৯ লাখ ৬৩ হাজার ৮২৬ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৬ কোটি ৭৫ লাখ ৪৫ হাজার ৫৩৮ জন।করোনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। তালিকায় শীর্ষে থাকা দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৩ কোটি ৪৫ লাখ ৪৪ হাজার ৯৪ জন। মৃত্যু হয়েছে ৬ লাখ ২০ হাজার ২৩৭ জনের।

আক্রান্তে দ্বিতীয় ও মৃত্যুতে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে এখন পর্যন্ত মোট সংক্রমিত হয়েছেন ৩ কোটি চার লাখ ১০ হাজার ৫৭৭ জন এবং এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে তিন লাখ ৯৯ হাজার ৪৭৫ জনের।

আক্রান্তে তৃতীয় এবং মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত করোনায় এক কোটি ৮৫ লাখ ৫৯ হাজার ১৬৪ জন সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ১৮ হাজার ২৪৬ জনের। আক্রান্তের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ফ্রান্স। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৭ লাখ ৭৫ হাজার ৩০১ জন। ভাইরাসটিতে মারা গেছেন এক লাখ ১১ হাজার ৮২ জন।

এ তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে রাশিয়া। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৫৫ লাখ ১৪ হাজার ৫৯৯ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন এক লাখ ৩৫ হাজার ২১৪ জন। এদিকে আক্রান্তের তালিকায় তুরস্ক ষষ্ঠ, যুক্তরাজ্য সপ্তম, আর্জেন্টিনা অষ্টম, ইতালি নবম ও কলম্বিয়া দশম স্থানে রয়েছে। এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩০তম। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১৮টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯।

https://dailysangram.com/post/457278