২ জুলাই ২০২১, শুক্রবার, ২:১৭

লকডাউন দেখতে রাস্তায় এসে দণ্ডের মুখে শত শত মানুষ

কঠোর বিধিনিষেধের প্রথম দিনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে শত শত মানুষকে জেল জরিমানা ও আটক করেছে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী। বিধি নিষেধ অমান্য করে বাইরে বের হওয়ার কারণে এসব দণ্ড দেওয়া হয়। এরমধ্যে রাজধানী ঢাকা যাদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে তাদের অধিকাংশই জানিয়েছেন, তারা লকডাউন কেমন চলছে দেখার জন্য বাইরে বের হয়েছিলেন। 

পুলিশ বলছে, বিধিনিষেধ ভঙ্গ করায় রাজধানীতে ৪শ’র বেশি আটক হয়েছে। এরমধ্যে তেজগাঁও বিভাগের ১৬৭ জন, মিরপুরে ১০১ জন। এরা কেউ লকডাউন দেখতে বের হয়েছিল। কেউ বের হয়েছিল অপ্রয়োজনে। সন্তোষজনক জবাব দিতে পারায় ভ্রাম্যমান আদালত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়। একই কারণে কয়েক শ’ গাড়িকে অর্থদণ্ড দেওয়া হয় শত শত যানবাহনকে। মামলা দেওয়া হয় অনেক যানবাহনকে। 

গতকাল সকাল থেকে দুপুর সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত মিরপুর, গাবতলী, টেকনিক্যাল, শাহআলী, পল্লবী, মিরপুর, কাফরুলসহ নির্ধারিত এলাকায় পুলিশ শতাধিক যানবাহনকে মামলা দেয়। মিরপুরে দুজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে চলে পুলিশের অভিযান।

মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার আ স ম মাহতাব উদ্দিন জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা থেকে শুরু হওয়া সরকারি বিধি নিষেধ পরিপালনে মাঠে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশের পাশাপাশি কাজ করছে এলিট ফোর্স র‌্যাব। 

সরকার ঘোষিত সাতদিনের কঠোর এই লকডাউনের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সড়কে ছিল না অন্যান্য দিনের মতো অফিসমুখী মানুষের চাপ, যানবাহনের ছুটে চলা ছিল বন্ধ। বন্ধ ছিল অধিকাংশ দোকানপাট। মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার আ স ম মাহতাব উদ্দিন জানান, মিরপুরের বিভিন্ন পয়েন্টে সকাল থেকেই দায়িত্ব পালন করেন পুলিশ সদস্যরা। স্থাপন করা হয় একাধিক চেকপোস্ট। এসব চেকপোস্টে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট থানার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন।

তিনি বলেন, জরুরি প্রয়োজনে যারা সড়কে বেরিয়েছেন তাদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের। এই কঠোর লকডাউনের মধ্যেও যথাযথ কারণ ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়ায় শতাধিক জনকে আটক করা হয়েছে মিরপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে। পাশাপাশি দুজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে শতাধিক যানবাহনকে মামলার আওতায় আনা হয়েছে।

আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে পরবর্তি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কঠোর লকডাউন চলাকারে মাঠে থাকবে সজাগ উপস্থিতিসহ মিরপুরে নিয়মিত টহল চেকপোস্ট পরিচালনা করবে পুলিশ।

মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে সারাদেশে কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে। যা আগামী ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এই সময়ে মানুষের সার্বিক কার্যাবলী ও চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

ঘর থেকে বের হলেই জেরা 

ঢাকার রাজপথে গতকাল সারাদিন সেনাবাহিনীর টহল গাড়ির পাশাপাশি মার্কেটে মার্কেটে বিজিবির টহল দল ছিল।  প্রতিটি মোড়ে মোড়ে পুলিশের চেক পোস্ট। কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে যারা ঘর থেকে বের হয়েছিলেন তাদের পড়তে হয়েছে পুলিশে কঠোর তল্লাশিতে। চেকপোস্ট গলিয়ে বের হবার সুযোগ নাই। এক চেকপোস্ট পার হলেও আরেক চেক পোস্টে ঠিকই আটকে গেছেন অনেকে।

তবে যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখাতে পারলেও মিলে চলাচলের সুযোগ। রাজধানীর আসাদগেট, মানিকমিয়া এভিনিউ, ফার্মগেটসহ কয়েকটি স্পটে পুলিশের কড়াকড়ি চেকের কারণে অনেকে দূর থেকে দেখেই চলে গেছেন। আবার অযৌক্তিক কারণে বের হওয়ায় কয়েকজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যেতে দেখা গেছে।

কঠোর বিধিনিষেধের প্রথম দিনের সার্বিক চিত্র নিয়ে ফার্মগেট এলাকায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা জানান,  আমরা ভোর ৬টা থেকে ডিউটিতে আছি। অনেকে বের হয়েছে বিনা কারণে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার পর সঠিকভাবে জবাব দিতে পারেনি এজন্য আমি ৩ জনকে জরিমানা করা হয়েছে। তাছাড়া কয়েকজনকে আটক করে তেজগাঁও থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এদের অধিকাংশই অযৌক্তিক কারণে সরকারের সিদ্ধান্ত অমান্য করে বের হয়েছে।

যারা অযৌক্তিকভাবে বের হচ্ছে তাদের কি ধরণের শাস্তির মুখোমুখি হতে হচ্ছে জানতে চাইলে বলেন, বিনা কারণে যদি কোন মোটরসাইকেল পাই তাহলে সড়ক পরিবহান আইন অনুযায়ী ১ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করছি আর প্রাইভেট কারকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয়েছে।

এদিকে ফার্মগেট এলাকায় একজন অর্ধবয়সী লোক রিকশাযোগে কাওরান বাজার থেকে তিনটি ব্যাগভর্তি বাজার নিয়ে ফার্মগেট মোড়ে থাকা চেকপোস্টে আসার পর পুলিশের জেরার মুখোমুখি হন। এক চেক পোস্ট পার হওয়ার পর পরের চেকপোস্টে আবার বাধা। এই অবস্থায় রিকসা চালক বিরক্ত হয়ে যাত্রীকে নামিয়ে দেন। উপায়ান্তুর না পেয়ে ব্যাগ হাতে নিয়ে রাস্ত দিয়ে হাঁটতে শুরু করেন লোকটি।

মোটরসাইকেলে দুইজন দেখলেই আটকে দিয়েছে পুলিশ সদস্যরা। প্রতিটি গাড়ির যাত্রীকে জেরা করা হচ্ছে কেন বের হয়েছেন- কি কাজ? সত্য উত্তর দিলে গাড়ি চলছে, না দিতে পারলেই জরিমানা, নয়তো আটক।

এদিকে মার্কেটগুলো পরিদর্শন করতে দেখা গেছে বিজিবি’র একটি টহল দল। রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে বিজিবির টহল দল প্রতিটি দোকানে ঘুরে ঘুরে যাদের মুখে মাস্ক নাই তাদের জরিমানা আর মার্কেটে বাজার দর টাঙিয়ে দিয়েছেন। কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে এবার ১০০ জন ম্যাজিস্ট্রেট বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্ব পালন করছেন।

এতো কড়াকাড়ির পরেও কিছু মানুষ বিনা কারণে বের হয়ে জরিমানা গুণেছেন। আসাদগেট এলাকায় রহমান নামের এক পথচারীকে আটকান পুলিশ সদস্য। বাসা থেকে বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলে বলেন, দেখতে আসছি গাড়ি চলে কি-না? এরপর পুলিশ বলে এতো নোটিশ, বিজ্ঞপ্তির পরেও গাড়ি দেখতে রাস্তায় বের হতে হবে? এই কথা বলেই তাকে ৫০০ টাকা জরিমানা ধারিয়ে দেন দায়িত্বরত পুলিশ।

বিধিনিষেধ মানাতে পুলিশের বড় বাধা মোটরসাইকেল। অনেকে আছেন ছোট খাটো ইস্যুকে বড় করে দেখিয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছেন। আবার একটা চেক করছে তো অন্যটা চোখ এড়িয়ে দ্রুত চলে যাচ্ছে। এভাবে অনেক মোটরসাইকেলকে বের হতে দেখা গেছে।

গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা মেট্রো পলিটন পুলিশ ডিএমপির এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গতকাল কঠোর বিধি নিষেধের প্রথম দিন পুলিশের ক্রাইম বিভাগ ৩৭৩ জনকে আটক করে। এরমধ্যে গ্রেফতার করা হয় ৭৩ জনকে। আর জরিমানা করা হয় সাড়ে ৪ লক্ষাধিক টাকা। এছাড়া মোবাইল কোর্ট কর্তৃক আটক করা হয় ৪৯৭জনকে। গ্রেফতার করা হয় ২শ’ ৫৮জনকে এবং সাজা দেওয়া হয় ৮জনকে। এছাড়া ২৭৪টি গাড়িকে সাড়ে ৪ লক্ষাধিক টাকা জরিমানা করা হয়।

https://dailysangram.com/post/457273