৫ এপ্রিল ২০১৭, বুধবার, ৯:৩৮

এনবিআরে প্রাক-বাজেট আলোচনা

নতুন ভ্যাট আইনে গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়বে

দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিলের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট কার্যকর হবে। এর বিরূপ প্রভাব পড়বে শিল্প খাতে ও ভোক্তা পর্যায়ে। গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম আরও বেড়ে যাবে। তারা বলেন, এমনিতে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এ অবস্থায় জ্বালানির ওপর যৌক্তিকভাবে ভ্যাট আরোপ করা উচিত।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিলের ওপর ৫ শতাংশ হারে ভোক্তা ও শিল্প মালিকদের ভ্যাট দিতে হয়। ১ জুলাই থেকে নতুন আইন বাস্তবায়ন হলে সেটি ১৫ শতাংশ হারে দিতে হবে।
মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থনীতিবিদরা এ অভিমত তুলে ধরেন। এনবিআরের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রাক-বাজেট আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। বক্তব্য রাখেন পিডব্লিউসি বাংলাদেশের ম্যানেজিং পার্টনার মামুনুর রশীদ ও সিপিডির রিসার্স ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। প্রাক-বাজেট আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন আয়কর নীতির সদস্য পারভেজ ইকবাল, শুল্কনীতির সদস্য লুৎফর রহমান ও ভ্যাটনীতির সদস্য ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেনসহ এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, জ্বালানি-বিদ্যুৎ সর্বজনীন উপকরণ। এগুলোয় আবার ক্রেডিট নেয়াও কঠিন। এটা স্বীকার করে বাস্তবতার খাতিরে রাজস্বের স্বার্থে যত কম ভ্যাট নেয়া যায় ততই ভালো। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যুৎ, ফুয়েল, জ্বালানিসহ সর্বজনীন উপকরণ পণ্যের ভ্যাট তুলে দিতে পারলে খুব ভালো।
কালো টাকা বিনিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বৈধ-অবৈধ আয় নির্ধারণ কর কর্তৃপক্ষের আওতার বিষয় না। এটা নির্ধারণ করবে দুদক বা অন্য কোনো সংস্থা। এনবিআরের দেখার বিষয় হল আয় রিটার্নে প্রদর্শিত কিনা এবং কর পরিশোধিত কিনা। তাই অপ্রদর্শিত অর্থে বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট কেনায় ক্ষতি নেই। তবে রেয়াত দিলে যারা নিয়মিত কর দেয় তাদের প্রতি অবিচার হবে। তিনি বলেন, কালো টাকাকে সাদা বলার যুক্তি দেখি না। এটা হল কর দেরিতে দেয়া। পরবর্তীকালে এটা নিয়ে দুদক বা প্রশাসন প্রশ্ন করবে কিনা সেটা প্রশাসনের বিষয়।
আবাসন খাতে ভ্যাটের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, আবাসন খাত তো ভোগ্য পণ্য নয়। এটা বিনিয়োগ। এখানে ভ্যাট আরোপের যৌক্তিকতা নেই। বরং অভিজাত এলাকায় বাড়ি-ফ্ল্যাটের অগ্রিম আয়কর বাড়ানো উচিত। এছাড়া এলাকাভেদে জমি ও ফ্ল্যাটের সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম মূল্য পুনর্নির্ধারণ করা উচিত।
নতুন ভ্যাট আইন সম্পর্কে তিনি বলেন, ভ্যাটের প্রধান সমস্যা নিবন্ধন। যারা ভ্যাট দেবেন তারা নিবন্ধন নিচ্ছেন কিনা। এখানে আয়করের বিরাট ফাঁক রয়ে গেছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল করভিত্তির হিসাব নেই। কত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আছে যারা ভ্যাট নিবন্ধনযোগ্য তার কোনো হিসাব নেই।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির রিসার্স ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। নতুন ভ্যাট আইনের অংশ হিসেবে এর ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হলে দাম আরও বাড়বে। ফলে ভোক্তা পর্যায়ে এর প্রভাব পড়বে। প্রকৃতপক্ষে ভ্যাট যদি ১৫ শতাংশ রাখা হয় তাহলে এনবিআরের অগ্রিম ঘোষণা দেয়া উচিত। যাতে উদ্যোক্তারা সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে পারে।
তিনি বলেন, ১ জুলাই ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের পর তা একযোগে সারা দেশে প্রয়োগ করা সম্ভব হবে না। সে ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন ও প্রয়োগের বিষয়ে একটি আগাম ধারণা ও কৌশল প্রকাশ করা উচিত। এর ফলে মাঠ পর্যায়ের হয়রানি কমবে। এর পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে কর্পোরেট ট্যাক্স কমিয়ে আনা উচিত। প্রয়োজনে আগাম ঘোষণা দেয়া যেতে পারে। এছাড়া পুঁজিবাজার তালিকাভুক্ত ও বাইরের কোম্পানির ক্ষেত্রে কর্পোরেট করের পার্থক্য বাড়ানো উচিত। যাতে কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসার উদ্যোগ নেয়। এতে কোম্পানির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়বে এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য বিনিয়োগের ক্ষেত্র তৈরি হবে।
সভাপতির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, ১ জুলাই থেকেই নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হবে। এতে কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই। এখন এনবিআর দিনক্ষণ-মিনিট গুনছে। শিগগিরই ভ্যাট বিভাগ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে নতুন আইন নিয়ে একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। যাতে নতুন আইনের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো উঠে আসবে।

http://www.jugantor.com/last-page/2017/04/05/115130/