১ জুলাই ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৩:২১

কঠোর লকডাউনে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বন্ধ

আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের যাত্রীদের যানবাহন না পাওয়ার আশঙ্কা

আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সারা দেশে এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউনের মধ্যে অভ্যন্তরীণ রুটে উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে ঢাকা-লন্ডন-ঢাকা, দুবাই, মাস্কাট, দোহাসহ আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইট ওঠামানা স্বাভাবিক থাকবে। বুধবার এ-সংক্রান্ত জারি হওয়া এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এ দিকে কঠোর লকডাউন চলার সময় বিদেশগামী যাত্রীদের যানবাহন নিয়ে খুব একটা সমস্যায় পড়তে না হলেও বিশ্বের বিভিন্ন গন্তব্য থেকে ছেড়ে আসা ফ্লাইটের যাত্রীদের ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে যানবাহন সঙ্কটে পড়ে চরম ভোগান্তির শিকার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে বিমানবন্দর ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এ নিয়ে ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ীরা সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের সাথে গতকাল বুধবার দেখা করে যাত্রী নামিয়ে ফেরার পথে সমস্যার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাদের কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত জানাতে পারেননি। যে কারণে তারা এই ৭ দিন গাড়ি না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন।

গতকাল রাতে বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের জেনারেল ম্যানেজার (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, লকডাউনের কারণে ১ থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ রুটের সব ফ্লাইট বন্ধ থাকবে। তবে আমাদের গুয়াংজু, সিঙ্গাপুর, মাস্কাট, দুবাই, দোহা রুটে ফ্লাইট চলবে। যদিও এসব রুটের বেশির ভাগই ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে যাওয়ার ওই সব দেশ থেকে আগেই নিষেধাজ্ঞা দেয়া আছে। তবে ঢাকায় ফেরার সময় যাত্রী আসতে পারবে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিদেশ থেকে যেসব ফ্লাইট আসবে তার মধ্যে বেশির ভাগ ফ্লাইটের যাত্রীদের তিন দিনের কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক রয়েছে। তবে লন্ডন ছাড়া ইউরোপের যাত্রীদের জন্য হোম কোয়ারেন্টিন করার কথা রয়েছে।
গতকাল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একাধিক কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে জানান, আন্তর্জাতিক রুটের বিভিন্ন ফ্লাইটের যাত্রীরা ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার পর খুব একটা যানবাহনের সমস্যায় পড়বেন না। কারণ সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বিদেশগামী ও বিদেশ থেকে আসা যাত্রীরা পথে তাদের পাসপোর্ট টিকিট ও ট্রাভেলিং করার বোর্ডিং কার্ড দেখিয়ে চলাচল করতে পারবেন।

তবে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবস্থিত সিভিল এভিয়েশনের অনুমোদনপ্রাপ্ত চারটি গাড়ি কোম্পানির একাধিক মালিক পরিচালক বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের নিয়ে তাদের গাড়ি যখন বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে রওনা হবে, তখন গাড়িতে যাত্রীরা থাকলে সে ক্ষেত্রে পুলিশি ঝামেলা এড়ানো সম্ভব হবে। কিন্তু যাত্রী নামিয়ে আবার যখন বিমানবন্দরে আসার পথে রওনা হবে চালক তখন যদি পুলিশ তাদের গাড়ি আটকায় তা হলে তখন তারা সেখান থেকে কিভাবে উদ্ধার হবেন? যদি পুলিশ চালকের নামে মামলা দেয়? গাড়ি ১৫ দিনের জন্য ডাম্পিংয়ে পাঠায়? যাত্রী নামিয়ে বিমানবন্দরে আবার ফিরে আসার জন্য এখনো সিভিল এভিয়েশন অথরিটি থেকে কোনো ধরনের আমাদেরকে স্টিকার দেয়া হয়নি; যার কারণে এখনো আমরা সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যে রয়েছি। গাড়ি চালাবো কি চালাবো না।

গতকাল বিমানবন্দরের একটি গাড়ি কোম্পানির একজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা বুধবার এ বিষয়টি নিয়ে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাদেরকে সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি। একইভাবে বিমানবন্দর পরিচালকের সাথেও আমরা কথা বলেছি। তিনি আমাদের বুধবার বিকেলে কী সিদ্ধান্ত আসে, তার জন্য অপেক্ষা করতে বলেন। এরপর তার সাথে আবারো যোগাযোগ করার পরও গ্রিন সিগন্যাল দিতে পারেননি তিনি। তাই আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কঠোর লকডাউনে আমরা ঝুঁকি নিয়ে আমাদের গাড়ি চালাবো না। যদি যাত্রী নামিয়ে ফিরে আসার গ্যারান্টি পাওয়া যায় তা হলেই কেবল গাড়ি চালাবো। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যদি কোনো স্টিকার ছাড়া আমরা গাড়ি চালাতে যাই তা হলে রাস্তায় পুলিশ গাড়ি আটকে মামলা দেবে। পাঁচ হাজার টাকার ট্রিপ মারতে গিয়ে যদি ১৫ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হয় তার চেয়ে ভালো গাড়ি বন্ধ রাখাই।

এ প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমানের সাথে গতকাল বিকেলে যোগাযোগ করা হলে তিনি টেলিফোন ধরেননি। তবে সিভিল এভিয়েশন অথরিটির জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা সোহেল কামরুজ্জামানের কাছে এ-সংক্রান্ত বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চলবে। আর এসব ফ্লাইটের যাত্রীরা পথে তাদের ট্রাভেল ডকুমেন্ট দেখালে সে ক্ষেত্রে আর কোনো ধরনের অসুবিধা হবে না বলে জানান তিনি।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/591843/