৩০ জুন ২০২১, বুধবার, ১:৩২

মগবাজার বিস্ফোরণ

অবহেলার দায় কার?

রাজধানীর মগবাজারের ওয়্যারলেস গেট এলাকায় বিস্ফোরণে ধসে পড়া ভবনের নিচ থেকে আরও একজনের মরদেহ উদ্ধার করেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এ নিয়ে এ ঘটনায় মোট ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বিকাল সাড়ে ৩ টার দিকে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া ব্যক্তির নাম: হারুনুর রশিদ (৬৫)। তিনি ওই ভবনের কেয়ারটেকার ছিলেন। এদিকে, বিস্ফোরণের ঘটনায় নাশকতার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। অপরদিকে, ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে থানায় অজ্ঞাতনামাদের নামে একটি মামলা করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, বিস্ফোরণের ঘটনায় কারও দায় থাকলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
কেন এই বিস্ফোরণ ঘটেছে বা এ ঘটনার পেছনে কাদের দায় রয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। বলা হচ্ছে গ্যাস জাতীয় পদার্থের জমাট রূপ থেকেই ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। কার অবহেলায় কোথায় এই গ্যাস জমা হয়েছিল তা এখনও তদন্তকারীরা চিহ্নিত করতে পারেননি।

রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর মগবাজারের ওয়্যারলেসের ৭৯ নম্বর ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ৮ জন নিহত ও ৬৫ জন আহত হয়। ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ জানিয়েছে যে, মিথেন গ্যাস থেকে ওই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক (অপারেশন্স) দেবাশীষ বর্ধন জানান, আমরা অভিযোগ পাচ্ছিলাম হেনা নামে এক নারীর বাবা নিখোঁজ রয়েছেন। গতকাল দুপুর থেকে অভিযান পরিচালনার পর সাড়ে ৩ দিকে একজনের মরদেহ উদ্ধার করি। পরে লাশের ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

এদিকে, গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে ঘটনার তদন্তের জন্য পুলিশের গঠিত তদন্ত টিম। পরে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান জানান, আমাদের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে এসেছি। গ্যাস ডিটেক্টর মেশিন দিয়ে পরীক্ষা করে ঘটনাস্থলে ১২-১৩ শতাংশ মিথেন গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এখন আমরা গ্যাসের উৎপত্তিস্থল খুঁজছি। তিনি আরও জানান, দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস আবদ্ধ থাকার পর যখন বাতাসের সংস্পর্শে আসে তখন এক্সপ্লোসিভ মিক্সচার তৈরি করে। এ মিক্সচার যদি ১৫ শতাংশের বেশি হয় তবেই বড় ধরনের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

ঘটনাস্থলে গ্যাসের উপস্থিতি থাকার কথা বলা হলেও তিতাসের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- এখানে তাদের কোনো গ্যাস সংযোগ ছিল না। এছাড়াও ভবনের সুয়্যারেজ লাইনও অক্ষত রয়েছে। তবে গ্যাস কোথা থেকে এসেছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, আমরা গ্যাসের উপস্থিতি ও রুট খুঁজে বের করার বিষয় নিয়েই কাজ করছি।

এদিকে, বিস্ফোরণে ৮ জন নিহত ও অর্ধ শতাধিক ব্যক্তির আহতের ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের অবহেলাকে দায়ী করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় মগবাজারে গ্যাস জমে থাকার কথা উল্লেখ থাকলেও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিতাস বা রাজউকের নাম উল্লেখ করা হয়নি। গতকাল সকালে রমনা থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে। মামলায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. সাজ্জাদুর রহমান জানান, ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩০৪ (ক) ধারায় মামলা হয়েছে। পুলিশ বিস্ফোরণের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। দণ্ডবিধি ৩০৪ (ক) বলতে কোনো ব্যক্তির বেপরোয়া বা অবহেলার জন্য অন্যের প্রাণহানিকে বোঝায়। কারো বিরুদ্ধে এই ধারার অপরাধ প্রমাণিত হলে তার সর্বোচ্চ ৫ বছরের জেল, অর্থদণ্ড অথবা উভয়দণ্ড হতে পারে।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=281185&cat=2