৩০ জুন ২০২১, বুধবার, ১:২৯

মনিটরিং না থাকায় বাজারে হ-য-ব-র-ল অবস্থা

করোনা প্রতিরোধে কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। বলা হয়েছে, বিনা কারণে কেউ বাসা থেকে বের হতে পারবে না। এসব মনিটরিং-এ থাকবে পুলিশ র‌্যাব বিজিবি এবং সেনা বাহিনী। সরকারের এমন ঘোষনায় মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। যার প্রভাব পড়ছে বাজারে। মানুষ আতঙ্কিত হয়ে খাদ্যসামগ্রী সংরক্ষণ করছে। আর এ সুবিধা নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। এতে করে প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়ছে কোন কারণ ছাড়াই। মনিটরিং না থাকায় বাজারে হ-য-ব-র-ল অবস্থা।

বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে সাত দিনের ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ ঘোষণা করেছে সরকার। এ ঘোষণার পর গত শনিবার থেকে বাজারে বেড়েছে ক্রেতাদের উপস্থিতি। ব্যবসায়ীদের তথ্য মতে, বাজারে বিক্রি বেড়েছে তিন থেকে চারগুণ।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর যাত্রাবাড়ি ও কারওয়ানবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ দোকানেই ভিড়। কেউ বস্তা হিসেবে চাল কিনছেন, আবার কেউ ভিড় জমিয়েছেন মসলার দোকানে। বেশিরভাগ ক্রেতাই লকডাউন ও কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কেনাকাটা করছেন। তাই পরিমাণও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি।

দোকানিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আগে যেখানে দিনে ১০০ কেজি বিক্রি হতো সেখানে এখন বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩০০ থেকে ৫০০ কেজি। ব্যবসায়ীদের দাবি পণ্যের দাম বাড়েনি। শুধু ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে। অন্যদিকে, ক্রেতারাও সুবিধা মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিনে মজুত করছেন। তাদের ভাষ্য, ‘লকডাউন, সামনে ঈদ। পরিস্থিতি কোন দিকে যায় সেটা তো বলা যাচ্ছে না, তাই প্রয়োজনীয়টুকু মজুত করছি।

কিন্তু ভোক্তার অভিযোগ কাঁচা বাজার থেকে শুরু করে প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে। কোন কারণ নেই। ক্রেতার সমাগম বেশি হওয়ার কারণেই দাম বাড়ছে। বিক্রেতারা বলছেন,বেশ কয়েকটি পন্যের সরবরাহ ঘাটতি রয়েছে।

যাত্রাবাড়ি আড়তে আলু-পেঁয়াজ বিক্রেতা আব্দুল করিম বলেন, গত ১৫ দিন স্বাভাবিক বেচা-কেনা ছিল। কিন্তু লকডাউন ঘোষণার পর গত শনিবার থেকে বাজারে উপচে পড়া ভিড়। সেই রেশ এখনও আছে। সাধারণ সময়ের চেয়ে তিন/চারগুণ বেশি পণ্য বিক্রি করছি।

ওই বাজারের চাল ব্যবসায়ী ইয়াসিন বলেন, সাধারণ সময় আমার দোকানে দিনে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার চাল বিক্রি হয়। কিন্তু গত শনিবারে ৫৮ হাজার টাকার চাল বিক্রি করেছি। আজও (মঙ্গলবার) ভালো বিক্রি হয়েছে। করোনার কারণে কী হয় না হয়, সেটা ভেবেই হয়তো মানুষ দরকারি চাল ঘরে মজুত রাখছেন। মসলা ব্যবসায়ী সিফাত বলেন, আমাদের এখানে যারা আসেন তারা রেগুলার কাস্টমার। লকডাউন ঘোষণার পর শনিবার বেশ ভিড় হয়েছে। হিমশিম খাওয়ার মতো অবস্থা ছিল। তবে এখন চাপ একটু কম।

এদিকে, রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার কারওয়ানবাজারে সব সময় ভিড় থাকলেও লকডাউন উপলক্ষে বাড়তি চাপ লক্ষ্য করা যায়। বাড়তি পণ্য বিক্রি করতে পেরে খুশি বিক্রেতারাও। শনিবার থেকে চার-পাঁচগুণ বেশি পণ্য বিক্রি হচ্ছে। হঠাৎ চাহিদা বাড়লেও দামও কিছুটা বেড়েছে। তবে পাইকারিতে তেমন না বাড়লেও খুচরা পর্যয়ে বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়েছে।

এখানকার চাল বিক্রেতা মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, সাধারণ সময়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার চাল বিক্রি করতাম। শনিবার এক লাখ টাকার চাল বিক্রি করি। এখনও ভালো বেচা-কেনা হচ্ছে। তবে, কিছুটা ভিন্ন মত পোষণ করেন চালের বড় আড়তদাররা। তারা বলেন, বিক্রি আগের মতোই স্বাভাবিক আছে।

কারওয়ানবাজারের মুদি দোকানি মনোয়ার হোসেন বলেন, লকডাউন ঘোষণার পর সবচেয়ে বেশি ভিড় হচ্ছে মুদি দোকানগুলোতে। আগে যেখানে ১০০ কেজি পণ্য বিক্রি করতাম, এখন বিক্রি করছি ৩০০ থেকে সাড়ে ৫০০ কেজি। প্রায় সব দোকানে একই অবস্থা। শুধু লকডাউন নয়, কোরবানি ঈদের বাজারও অনেকে সেরে ফেলছেন। আমার ধারণা ১ জুলাই পর্যন্ত ভালো বিকিকিনি হবে।
কারওয়ানবাজার ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতারা ব্যক্তিগত গাড়িবোঝাই করে পণ্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। যাদের গাড়ি নেই, তারাও অন্তত ঝাঁকাভর্তি করে বাজার করছেন। সবার একই চিন্তা, অন্তত ঘরে খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

শনিবারে নতুন করে লকডাউনের ঘোষনায় কাচা বাজারসহ বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়েছে। প্রতিটি কাচা তরকারির দাম কেজিতে বেড়েছে ৫/১০ টাকা পর্যন্ত। প্রতিকেজি চালের দামও ঙ্গ টাকা বেড়েছে। বেড়েছে আলুর দামও। তেলের দাম আগে থেকে বৃদ্ধির থাকার কারণে নতুন করে আর বাড়েনি। বেড়েছে নতুন করে আদা রসুনের দাম। সব ধরনের মশলার দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি বছর কুরবানি এলেই সব ধরনের মশলার দাম বাড়ে। সামনে ঈদ এবং করোনা এ দুটি মিলে ব্যবসায়ীদের যেনো সোনায় সোহাগা অবস্থা। লকডাউনের ঘোষণায় মানুষের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। আর এ কারণেই মানুষ খাদ্য মজুদ করছে। কাচা তরকারির পাশাপাশি বেড়েছে সব ধরনের নিত্য পণ্যের দামও। যদিও বিক্রেতা তা স্বীকার করে না।

একই সাথে বেড়েছে সব ধরনের পন্য পরিবহণের ভাড়া। মানুষের ভাড়া বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ভোক্তারা বলছেন,বাজার মনিটরিং না থাকার কারণেই পন্য এবং পরিবহণের ভাড়া বেড়েছে। যখনই চাহিদা বাড়ে তখনই পণ্যের দামও বাড়ে। কিন্তু কি কারণে তার কোন কারণ জানা যায়নি। ভোক্তারা নানা সময় দাবি করে আসলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। দাম বেড়েই চলছে।

https://dailysangram.com/post/457080