৩০ জুন ২০২১, বুধবার, ১:২৭

স্বপ্নের উন্নয়ন ও বাস্তবতা

‘জনগণের ভাগ্য উন্নয়ন’ কথাটা কিতাবে থাকলেও; গোয়ালে নেই। সঙ্গত কারণেই স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরও গণমানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন কাক্সিক্ষত পর্যায়ে হয়নি; বরং উন্নয়ন হয়েছে শ্রেণি বিশেষের। ফলে অর্জিত স্বাধীনতা সাধারণ মানুষের জন্য পুরোপুরি অর্থবহ হয়ে ওঠেনি। সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন স্বাধীনতার মূলমন্ত্র হলেও বাস্তবে এর প্রতিফলনটা খুবই গৌণ। ফলে রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা। এসব করা হচ্ছে জনগণের নাকের ডগায় ‘উন্নয়নের মুলা’ ঝুলিয়ে। তাই আইনের শাসনের স্বপ্নও আমাদের কাছে অধরাই রয়ে গেছে। ফলে গাছের পরিবর্তে জন্মেছে আগাছা। কিন্তু রাষ্ট্র এসব আগাছার মূলোৎপাটন করতে পারছে না। যা সত্যিই দুর্ভাগ্যের।
মূলত, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও আইনের শাসনের অভাবেই দেশে এখন দুর্নীতি, অনিয়ম ও লুটপাট সকল সময়ের সীমা অতিক্রম করেছে। সে শনির আছর থেকে মুক্ত থাকেনি রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন কার্যক্রমগুলোও। আসলে কথিত উন্নয়নের নামে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করে নিচ্ছেন একশ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগী। এমতাবস্থায় সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পগুলো অসাধু চক্রের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। আর সুশাসনের অভাবেই এই অশুভ প্রবণতা বাড়ছে বৈ কমছে না। সম্প্রতি একটি শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে, মাতারবাড়িতে এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রল্পের কাজ দেয়া নিয়ে শুরুতেই বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) বিরুদ্ধে বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সর্বোপরি গভীর সমুদ্রে ২ হাজার ৬ শ’ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজটি সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূতভাবে দুর্নীতির দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত দুই কোম্পানিসহ তিন প্রতিষ্ঠান নিয়ে গড়া কনসোর্টিয়ামকে দেয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এমন একটি বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানকে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হলে প্রকল্পের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি কানে তুলছেন না সংশ্লিষ্টরা।
কনসোর্টিয়ামের সদস্য কোম্পানিগুলো হচ্ছে-জাপানি মারুবেনি করপোরেশন, সুইস ট্রেডিং ফার্ম ‘ভিটল’ এবং স্থানীয় এজেন্ট পাওয়ারকো ইন্টারন্যাশনাল। এর মধ্যে বাংলাদেশী কোম্পানি পাওয়ারকোর এমন কোন মূলধন নেই যা একটি বৃহৎ প্রকল্পের কাজ পাওয়া বা প্রকল্প মেয়াদে কাজ শেষ করার জন্য যথেষ্ট। এই কনসোর্টিয়ামের অপর সদস্য ভিটলের বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘুষ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তারপরও অজানা কারণে এসব ভূঁইফোড় ও দুর্নীতিগ্রস্ত কোম্পানীগুলোকে কাজ দেয়ার খবর জনমনে নানাবিধ প্রশ্নর সৃষ্টি করেছে। কিন্তু এসব প্রশ্নের কোন সদুত্তর পাওয়া যাচ্ছে না।
জানা গেছে, ঘুষ দেয়ার অভিযোগে ভিটলকে সম্প্রতি দু’টি দেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ জরিমানা গুণতে হয়েছে। বাংলাদেশে কাজ করতে গিয়ে মারুবেনি দুর্নীতি করায় জাইকা কর্তৃক কালো তালিকাভুক্তও হয়েছিল। এছাড়া এদের এ ধরনের কাজ করার তেমন কোন পূর্ব অভিজ্ঞতাও নেই। কিন্তু এত কিছুর পরও বিপিসি এ কনসোর্টিয়ামকে কেন বেছে নিয়েছে, সে প্রশ্নের কোন উত্তর নেই। অথচ এ মেগা প্রকল্পের কাজ পাওয়ার জন্য আরও ৩টি বিদেশী কোম্পানি তাদের আগ্রহপত্র জমা দিয়েছে যথাযথ কর্তৃপক্ষের বিবেচনার জন্য। কিন্তু তাদের আবেদন বিবেচনায় না নেয়ার অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।
গণমাধ্যমের খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, ইতোমধ্যে বিপিসি অভিযুক্ত কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে ‘মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং’ করার জন্য জ্বালানি বিভাগকে চিঠি দিয়েছে। জাপান দেশটির দেশীয় সংস্থা জাইকার মাধ্যমে এ প্রকল্পে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। জাপানি কোনো প্রতিষ্ঠানকে লিড পার্টনার করে একটি কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সে প্রস্তাব কোনভাবেই বিবেচনায় নেয়া হয়নি বরং বিশেষ উদ্দেশ্যে অনুপযুক্ত ও দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। যা প্রকল্পটিকে শুরুতেই অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে।
মূলত, একটি অসাধুচক্র মধ্যস্বত্বভোগের জন্যই অখ্যাত কোম্পনীগুলোকে কাজ দেয়ার জন্য ওঠেপড়ে লেগেছে। আর পছন্দের কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য দুর্নীতিবাজরা কী ধরনের অপকৌশল ও অসাধুতার আশ্রয় নেয়, এসব বিষয় বারবার আলোচনায় এসেছে এবং সংবাদপত্রে ফলাও করে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু বিষয়টিকে সংশ্লিষ্টরা কোনভাবেই আমলে নেয়নি। এমতাবস্থায় কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে যাতে দুর্নীতি-অনিয়ম-স্বেচ্ছাচারিতা না হয় সেদিকে দৃষ্টি দেয়ার পরামর্শ এসেছে বিভিন্ন মহল থেকেই। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কোন মাথাব্যথা এখন পর্যন্ত লক্ষ্য করা যায়নি। এমনকি সরকারও বিষয়টি নিয়ে বরাবরই উদাসীন থেকেছে। ফলে পরিস্থিতির কোন উন্নয়ন হয়নি।
মূলত উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে টাউট, বাটপার আর মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। প্রকল্পের কাজ শুধু অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকেই দেয়া হচ্ছে না বরং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বাড়ানো হচ্ছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ফলে লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না উন্নয়ন ব্যয়ের। নির্ধারিত মেয়াদ ও ব্যয়ে প্রকল্প সমাপ্ত না হওয়াই এখন আমাদের রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম শহরের বহদ্দারহাট বাড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত ২ দশমিক ৯ কিলোমিটার খাল খননের খরচ ৩২৬ কোটি টাকা থেকে এখন এক হাজার ৩৭৫ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। যা কোনভাবেই যৌক্তিক নয়।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় তিন বছরে প্রকল্পটি শেষ করার কথা থাকলেও সেটি চলছে সাত বছর ধরে। এখন নতুন করে বাড়ানো হয়েছে আরো তিন বছর। যদিও সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন, মামলাজনিত কারণে খাল খননের জন্য নির্ধারিত মেয়াদে ভূমি অধিগ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা। চার গুণের বেশি খরচ বাড়ানোর জন্য এটিই মূল যুক্তি। কিন্তু বিষয়টি শুধুই অজুহাত বলেই মনে করছেন প্রকল্প বিশেষজ্ঞরা। ফলে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ থেকে এই অস্বাভাবিক ব্যয় প্রস্তাব পর্যালোচনা করে যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনার কথা বলা হলেও বিষয়টি নিয়ে বড় ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। আর এই জট খোলার আপাত কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
প্রকল্প প্রস্তাবনা ও ভৌত অবকাঠামো বিভাগের তথ্য থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রাম শহরের বহদ্দারহাট বাড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত ২.৯ কিলোমিটার খাল খনন করার জন্য ২০১৪ সালের ২৪ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) ৩২৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে অনুমোদন দেয়া হয়। ২০১৭ সালের জুনে প্রকল্পটি শেষ করার কথা। উদ্দেশ্য ছিল শহরটির জলাবদ্ধতা নিরসন। ১৯৯৫ সালে প্রণীত চট্টগ্রাম ড্রেনেজ মাস্টারপ্লানের সুপারিশক্রমে ড্রেনেজ এরিয়া ৭-এর ২ হাজার ২৬৪ হেক্টর এরিয়ার পানি নিষ্কাশন তথা জলাবদ্ধতা নিরসনের স্বার্থে এই প্রকল্পটি নেয়া হয়।
এরপর ২০১৮ সালের ১১ জুলাই একনেক থেকে এক লাফে এই প্রকল্পের খরচ ৯৩০ কোটি টাকা বাড়িয়ে এক হাজার ২৫৬ কোটি ১৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকায় অনুমোদন দেয়া হয়। মেয়াদ তিন বছর বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু এ মেয়াদেও প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। এমতাবস্থায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে আরো এক বছর বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। এই মেয়াদেও প্রকল্প সমাপ্ত না হওয়ায় মেয়াদ ও খরচ আবারো বৃদ্ধির দাবি জানায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। ব্যয় বাড়িয়ে ১ হাজার ৩৭৪ কোটি ৮৬ লাখ ১ হাজার টাকায় উন্নীত করাসহ মেয়াদ আরো তিন বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব দেয়া হয়। এতে তিন বছরের প্রকল্প এখন ১০ বছরে গড়াচ্ছে। কিন্তু কাজ পরিসমাপ্তির দৃশ্যমান কোন লক্ষণ নেই। ফলে এই বৃহৎ প্রকল্প নিয়ে দেখা দিয়েছে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা। একই সাথে বারবার মেয়াদ ও ব্যয়বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আত্মসচেতন মহলে।
প্রাপ্ততথ্যে জ্ঞাত হওয়া গেছে, ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম নগরীর জন্য মাস্টারপ্লান করে। ওই মাস্টারপ্লানের প্রধান বিষয় ছিল ড্রেনেজ-ব্যবস্থার উন্নয়ন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ। মাস্টারপ্লানে প্রস্তাব ছিল দ্রুত বৃষ্টির পানি অপসারণের জন্য বর্তমানে অবস্থিত খালগুলোর পুনর্বাসন এবং কিছু নতুন খাল খনন করা। মাস্টারপ্লানের সুপারিশের আলোকে ২.৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৬৫ ফুট প্রস্থ খাল খননের সংস্থান এবং খালের উভয় পাশে ২০ ফুট প্রস্থের রাস্তা নির্মাণের প্রস্তাত করা হয়। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার বিলম্ব এবং ভূমির মূল্য বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধিত প্রস্তাব একনেক থেকে ২০১৮ সালের ১১ জুলাই অনুমোদন লাভ করে। মামলাজনিত জটিলতার কারণে ভূমি অধিগ্রহণ যথাসময়ে সম্পন্ন না হওয়ায় এবং রেট শিডিউল পরিবর্তনসহ ডিজাইন পরিবর্তন ও বিভিন্ন অঙ্গের যোজন-বিয়োজনে মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধিসহ প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাব করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে সিটি করপোরেশন বক্তব্য হচ্ছে, আইনি জটিলতা ও ভূমির বিভিন্ন সার্ভে করার কারণে জমি অধিগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে এখন এই খাতে ব্যয় তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মামলার কারণে যথাসময়ে জমি অধিগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। যেখানে ৯০ শতাংশ ব্যয় এই খাতে সংস্থান ছিল। প্রথমে প্রকল্পে ছয়টি ব্রিজের সংস্থান ছিল। এখন আরো দু’টি ব্রিজ ও একটি কালভার্ট নতুন করে নির্মাণ করা প্রয়োজন। পরামর্শক সার্ভে থেকে প্রাপ্ত ডিজাইন অনুযায়ী কাজের পরিমাণ ও ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু তাদের এই বক্তব্যকে কেউই পুরোপুরি যৌক্তিক মনে করছেন না বরং বিষয়টির মধ্যে বড় ধরনের শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রকল্প পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ৫.৮ কিলোমিটার রাস্তার জন্য ব্যয় ছিল ৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, সেটি এখন ধরা হয়েছে ২৯ কোটি ৯১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ২.৯ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণে ৯ কোটি টাকার ব্যয় এখন সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার ড্রেনে ৩৬ কোটি ৪৬ লাখ ৩০ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়ালে ও সিঁড়িতে খরচ ৩৬ কোটি টাকার স্থলে এখন দাঁড়িয়েছে ৯২ কোটি ৯০ লাখ ৩০ হাজার টাকায়। ৫.৪ কিলোমিটার ফুটপাথ নির্মাণে পাঁচ কোটি ১৩ লাখ টাকার জায়গায় এখন সাড়ে পাঁচ কিলোমিটারে আট কোটি ৯৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা ধরা হয়েছে।
ব্যয় বৃদ্ধির ব্যাপারে বাস্তবায়নকারী সংস্থা পিইসিকে জানিয়েছেন, প্রথমে ২০১২ সালের রেট শিডিউল অনুযায়ী ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। এখন এটা ২০১৯ সালের রেট শিডিউল দ্বারা ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে, যার কারণে খরচ বেড়েছে। পাশাপাশি পরামর্শক কর্তৃক সার্ভে করার পর ডিজাইনে পরিবর্তন আসে। ভৌত অবকাঠামো বিভাগ আটটি ব্রিজ ও একটি কালভার্ট নির্মাণে সাড়ে ৪১ কোটি টাকার প্রস্তাবকে অত্যধিক মনে করছে। প্রকল্পে দুই হাজার ৫১৬.৬২ ডেসিমেল জমি অধিগ্রহণ খরচ এক হাজার ১০৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ছিল। কিন্তু এ বক্তব্য পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য ও যৌক্তিক নয়।
দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইছে বলে রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমগুলোতে ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু তার সাথে বাস্তবতার মিল যৎসামান্যই। একটি অসাধুচক্র আত্মস্বার্থ, শ্রেণিস্বার্থ ও গোষ্ঠীস্বার্থ চরিতার্থ করতেই নামসর্বস্ব কোম্পানীগুলোকে কাজ পাইয়ে দিচ্ছে। একই সাথে অসৎ উদ্দেশ্যে বারবার প্রকল্প মেয়াদ ও বরাদ্দ বাড়িয়ে নেয়ার অশুভ প্রতিযোগিতা জাতীয় অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। কিন্তু তারপর প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের অনিশ্চয়তা কাটছে না। তাই যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন ও রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় এবং লাগামহীন দুর্নীতি রোধ করতে সরকারকেই কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। অন্যথায় জাতীয় উন্নয়নের স্বপ্ন অধরায় থেকে যাবে।

https://dailysangram.com/post/457077