২৯ জুন ২০২১, মঙ্গলবার, ১:২৩

অফিসগামীদের দুর্ভোগ খোলা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান

করোনা নিয়ন্ত্রণে গতকাল সোমবার থেকে নতুন করে লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। এতে গণপরিবহন, শপিং মল, মার্কেট, পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে সরজমিন সকাল থেকে রাজধানীতে গণপরিবহন, শপিং মল ও বড় মার্কেটগুলো বন্ধ থাকলেও বিভিন্ন জায়গায় অনেক দোকানপাট খোলা দেখা গেছে। মূল সড়কে কিংবা বিভিন্ন অলিগলির দোকানগুলো আগের মতোই খোলা রাখা হয়েছে। কেউ আবার শাটার অর্ধেক নামিয়ে করছেন বিকিকিনি। ওদিকে সকালে অফিসগামী মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েন। সড়কে গণপরিবহন না থাকলেও ব্যক্তিগত গাড়ির ভিড় দেখা যায়। তবে যারা নিয়মিত বাসে চলাফেরা করতেন, তারা বিকল্প কোনো যান না পাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েন।

অনেক অফিসগামীদের দূর-দূরান্ত থেকে পায়ে হেঁটে কর্মস্থলে যেতে দেখা যায়।
মিরপুর ১৪ থেকে পায়ে হেঁটে কাওরান বাজারের কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন একটি কেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আসাদুজ্জামান। রাজধানীর বিজয় সরণি মোড়ে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ১৪ নম্বর থেকে ক্যান্টনমেন্ট হয়ে রিকশায় জাহাঙ্গীর গেট পর্যন্ত আসছি। ভাড়া দিতে হয়েছে ৮০ টাকা। কিন্তু জাহাঙ্গীর গেট থেকে আর বিকল্প কিছু পেলাম না। তাই পায়ে হেঁটেই রওনা দিয়েছি। গরমের মধ্যে হাঁটতে খুব কষ্ট হচ্ছে তবু অফিসে তো যেতে হবে। বাস চললে যেখানে ৩০ টাকা ভাড়া লাগতো। সেখানে এখন আসতেই খরচ হচ্ছে প্রায় ১০০ টাকা। এরপর রাতে ফেরার সময় আরও এক- দেড়শ’ টাকা লাগতে পারে। অনেক অফিস থেকে যাতায়াতের ব্যবস্থা করলেও আমাদের সেই সুবিধা দেয়া হয়নি। যার যার মতো কষ্ট করে যেভাবেই হোক অফিস করতে হবে। অফিস খোলা রেখে যানবাহন বন্ধ করে দিয়ে শুধু শুধু আমাদের দুর্ভোগে ফেলা হয়েছে। অথচ এই লকডাউন কোনো কাজেই আসে না। সবখানে স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ করা হয়।

রোববারের প্রজ্ঞাপনে জরুরি খাদ্য পণ্যের দোকান ছাড়া সবকিছু বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব ধরনের দোকানপাট খোলা রেখে বেচাবিক্রির কাজ চলছে। রেস্টুরেন্টে শুধুমাত্র পার্সেল সেবা দেয়ার কথা থাকলেও অনেক জায়গায় রেস্টুরেন্টে বসেই খাবার খেতে দেখা গেছে। বিধিনিষেধ মেনে জরুরি খাদ্যপণ্য বিক্রির কথা থাকলেও কোথাও তা মানা হচ্ছে না। বাজারে আগের মতোই ভিড় লক্ষ্য করা যায়। ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করতে দেখা গেছে। গতকাল সকাল ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত মিরপুর, ইব্রাহিমপুর, কচুক্ষেত, ফার্মগেট ও তেজগাঁও এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মিরপুর-১৩ নম্বরের একটি কাঁচাবাজার ও এর আশপাশে ঘুরে দেখা যায়, কাঁচা তরকারি ও মুদি দোকানের পাশাপাশি অন্য দোকানও যেমন ইলেক্ট্রনিক্স, প্লাস্টিক পণ্য এবং ফার্নিচারের দোকানও খোলা রাখা হয়েছে। এ সময় ভিড় ঠেলে বাজার করতে দেখা যায় ক্রেতাদের। ক্রেতা-বিক্রেতারা কেউই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। একই চিত্র চোখে পড়ে কাফরুল, ইব্রাহিমপুর ও কচুক্ষেত এলাকায়। এসব এলাকায় বেশকিছু ফার্নিচারের দোকান এবং রেস্টুরেন্ট খোলা দেখা যায়। ফার্নিচারের দোকানে ভিড় না থাকলেও রেস্টুরেন্টে বসেই খাবার খাচ্ছেন অনেকে। খোলা দেখা যায় মোটরসাইকেলের পার্টসের দোকান ও সার্ভিসিং সেন্টার। মানুষ চলাফেরা করছে আগের মতোই স্বাভাবিকভাবে। সড়কে গণপরিবহন না থাকলেও ব্যক্তিগত গাড়ির ভিড় দেখা গেছে। দেখা গেছে যানজটও। তবে এসব এলাকার বড় মার্কেটগুলো বন্ধ দেখা যায়।

ফার্মগেট ও তেজগাঁও এলাকায় ছোট বড় অনেক চা স্টল খোলা দেখা যায়। এ সময় চা স্টলে বসে আগের মতোই ভিড় করে চা ও ধূমপান করতে দেখা যায়। এমন পরিস্থিতিতেও কোথাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা দেখা যায়নি।

ইব্রাহিমপুরের ফার্নিচার ব্যবসায়ী আবেদ আলী জানান, সকাল থেকেই দোকান খোলা রেখেছি। পুলিশ আমাদের কিছু বলেনি। পুলিশকে টহল দিতেও দেখা যায়নি। তাই দোকান খোলা রেখেছি যাতে কিছু বেচাকেনা করতে পারি। যদিও কাস্টমাররা খুব একটা আসছে না। কিছু অর্ডারের কাজ আছে কারিগররা সেই কাজগুলো করছে। অর্ডারের জিনিস তো ডেলিভারি দিতে হবে। সেজন্যই মূলত দোকান খোলা রাখা দরকার। কারণ বেচাকেনা না করলে আমরা খাবো কি? এর আগেও আমার অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। আবার নতুন করে লকডাউন দিয়েছে। আমরা তো স্বাস্থ্যবিধি মেনে বেচাকেনা করছি। তাহলে সমস্যা কোথায়? যেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় না সেখানে বন্ধ করলেই তো হয়। একতরফা লকডাউন দিলে আমাদের মতো খেটে খাওয়া মানুষ বাঁচবে কি করে?

ফার্মগেটে একজন চায়ের দোকানদার আলী হোসেন বলেন, ‘আগের লকডাউনেও আমি বেচাকেনা করছি। কোনো সমস্যা হয় নাই। মানুষ কম আসছে তয় কিছু তো বিক্রি হইতাছে। না হলে পরিবার, পোলাপানগো খাওয়ামু কি? আগেরবার প্রথম প্রথম পুলিশ অনেক আসছে। এবার এখনো পুলিশ কোনো ঝামেলা করে নাই।’

কচুক্ষেত কাঁচাবাজারের একজন বিক্রেতা জানান, ‘লকডাউন হইলেও কাস্টমার আইতাছে। আগের থাইকা বিক্রি একটু কম। আমি স্বাস্থ্যবিধি মাইনাই চলতাছি। ভিড় কম এখন। বেশি ভিড় হলে কাস্টমারগো দূরে দূরে দাঁড়াইতে বলি।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=280988&cat=3