২৯ জুন ২০২১, মঙ্গলবার, ১:২০

ঢাকায় প্রাকৃতিক পানি নিষ্কাশন ও উন্মুক্ত জায়গার অভাবে পানিবদ্ধতা তীব্র হচ্ছে

সামান্য বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় রাজধানীর পথ-ঘাট। ঘন্টার পর ঘন্টা দুঃসহ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। প্রতিবছরই সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো থেকে পানিবদ্ধতা থাকবে না বলে নানা যুক্তি ও তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু বাস্তবে সেগুলোর উল্টোটাই দেখা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধুমাত্র খাল আর ড্রেনের ওপরে নির্ভর করলে চলবে না। প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে পানি নিষ্কাশনের পথ ও উন্মুক্ত জায়গা সৃষ্টি করতে না পারলে পানিবদ্ধতা কখনোই যাবে না। মূলত বৃষ্টির পানি পড়ার পর কিছু অংশ মাটি শোধন করবে, কিছু গাছপালা নেবে। বাকি পানি ড্রেন ও খাল হয়ে নদীতে যাবে। কিন্তু আমাদের এসব ব্যবস্থা নেই। সে কারণেই আবদ্ধ পানি মাটির শোষণ করে নিতে পারছে না বলে মনে করেন নগর বিশেষজ্ঞরা।

সূত্র মতে, বর্তমানে রাজধানীতে ৪৩টির মতো খাল রয়েছে। এরমধ্যে ঢাকা ওয়াসার ২৬টি খালের দায়িত্ব দুই সিটি করপোরেশনকে দেয়া হয়েছে। বাকি ১৭টির দায়িত্ব এখনও গণপূর্ত, রাজউক, পাউবো ও জেলা প্রশাসকের কাছে রয়েছে। এ ছাড়া দাফতরিকভাবে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব এখনও ঢাকা ওয়াসার। প্রশাসনিক এই জটিলতার মাঝেও বৃষ্টির পানি নিরসনে কাজ করছে দুই সিটি করপোরেশন। ফলে এর কিছুটা সুফল পাওয়া গেলেও ভোগান্তি একেবারে কমেনি। নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু খাল পরিষ্কার করলেই পানিবদ্ধতা কমবে না। এজন্য সামগ্রিক ও সমন্বিতভাবে ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে রাজধানীতে উম্মুক্ত স্থানের পরিমাণ বাড়াতে হবে। যাতে করে বৃষ্টির পানি ড্রেন হয়ে খালে যাবার আগেই প্রাকৃতিকভাবে মাটির নীচে চলে যায়।
রাজধানীতে পানিবদ্ধতা প্রসঙ্গে উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য বছর সামান্য বৃষ্টিতেই ডিএনসিসির বিভিন্ন এলাকার রাস্তা-ঘাট ডুবে যেতো, পানিজটে নগরবাসীকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হতো। কিন্তু এবার রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিতেও নগরবাসীকে পানিজটের সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে না। দায়িত্বে নেয়ার পর জলজটের ভোগান্তি থেকে নগরবাসীকে মুক্ত রাখতে পেরেছি। তিনি বলেন, আগে সামান্য বৃষ্টি হলেই নৌবাহিনীর সদর দফতর, প্রধান সড়ক, গলফ হাইট প্রধান সড়ক, সেতু ভবন প্রধান সড়ক, নাখাল পাড়া, কালা চাঁদপুর, বারিধারা, বেগম রোকেয়া সরণি, কচুক্ষেত, আনসার ক্যাম্প, দারুস সালাম রোড, মগবাজার, বেপারি পাড়া, উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরসহ ডিএনসিসির বিভিন্ন এলাকায় জলজট হতো। কিন্তু এখন তা আর হচ্ছে না। আমরা কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী বলেই পহেলা জুন ঢাকায় দীর্ঘ সময় ধরে ৮৫ মিলিমিটার পরিমাণ বৃষ্টিপাত হলেও দ্রুততম সময়ের মধ্যেই নগরবাসীকে পানিজট থেকে মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে।

দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, সাধারণত কোনও স্থানে তিন ঘণ্টার বেশি পানি থাকাকে পানিবদ্ধতা হিসেবে ধরা হয়। বেশ কয়েকটি জায়গায় পানিজট হলেও বিগত সময়ের পরিমাণ ও স্থানের সংখ্যার তুলনায় এখন তা অনেকাংশেই কম। আমরা ৩ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় শতভাগ পানি সরাতে সক্ষম হচ্ছি। যদিও আমাদের লক্ষ্য হলো এক ঘণ্টার মধ্যে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন করা।
তবে দুই সিটির মেয়রই নগরীতে পানিবদ্ধতা নেই বলে বক্তব্য দিলেও বাস্তবচিত্র কিন্তু ভিন্ন। সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি মানতে রাজি না। সামান্য বৃষ্টি হলেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় হাঁটু পরিমাণ পানিবদ্ধতা দেখা যায়। দক্ষিণ সিটির পুরনো অংশে এখনও পানিবদ্ধতাপ্রবণ এলাকা হিসেবে ৫৫টি স্থানকে চিহ্নিত করেছে সংস্থাটি। আপরদিকে উত্তর সিটি তাদের ডিজিটাল সার্ভের মাধ্যমে জলাবদ্ধতাপ্রবণ ১০৩টি স্পট চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে ৬টি হট স্পট রয়েছে। এগুলোর পানি কীভাবে নিষ্কাশন করা যায় সেই উপায় নিয়েই এখন আলোচনা হচ্ছে। অনেকেই বলছেন, শুধু খাল বা ড্রেনকে প্রাধান্য দিলেই হবেনা। রাজধানীতে বাড়াতে উন্মুক্ত স্থানের পরিমাণ। এছাড়া যেগুলো এখন ইট পাথরে ঢেকে যাচ্ছে সেগুলোর কাজ বন্ধ করতে হবে।

নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি আদর্শ বা বাসযোগ্য শহরে কমপক্ষে ৪০ ভাগ উন্মুক্ত এলাকা থাকা অবশ্যক। কিন্তু ঢাকায় ছিল মাত্র ১৮ ভাগ। এর মধ্যে মূল শহরে উন্মুক্ত জায়গার পরিমাণ ১০ ভাগেরও কম। বর্ষায় যেসব এলাকায় পানিবদ্ধতা দেখা যাচ্ছে, সেসব এলাকায় উন্মুক্ত জায়গা বা মাটির অস্তিত্ব কম। সে কারণেই আবদ্ধ পানি মাটির শোষণ করে নিতে পারছে না বলে মনে করেন নগর বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বি আইপি) সাধারণ সম্পাদক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, শুধু খাল পরিষ্কার করলেই পানিবদ্ধতা নিরসন হবে না। এই চিন্তা থেকে সিটি করপোরেশনকে বেরিয়ে আসতে হবে। নগরীতে কংক্রিটের আস্তর বাদ দিয়ে উন্মুক্ত জায়গা সংরক্ষণ করতে হবে। প্রাকৃতিক পদ্ধতির সঙ্গে সমন্বয় করে পরিকল্পনা করতে হবে। তিনি বলেন, পানিবদ্ধতার সমাধান চাইলে ২০-২৫ ভাগ সবুজায়ন থাকতে হবে। কমপক্ষে ৪০ ভাগ উন্মুক্ত এলাকা লাগবে। এর মধ্যে মূল শহরে এ ধরনের জায়গার পরিমাণ ১০ ভাগেরও কম। আজ যেসব এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা যাচ্ছে, সেসব এলাকায় উন্মুক্ত জায়গা বা মাটির অস্তিত্ব নেই।

সূত্রমতে, ঢাকা মহানগরীতে প্রায় ২ হাজার ৫শ’ কিলোমিটার ছোট ড্রেনেজ লাই রয়েছে। কিন্তু শক্ত ইটপাথর আর প্লাস্টিকের বর্জ্য জমে এসব ড্রেনের বেশিরভাগই বিকল হয়ে আছে। ফলে জমে থাকা পানি ছোট ড্রেন থেকে বড় ড্রেন বা খাল পর্যন্ত যেতে পারছে না।

কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইকবাল হোছাইন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় বাংলাদেশের নাম শীর্ষে? বাংলাদেশে প্রতিবছর যত মানুষের মৃত্যু হয়, তার ২৮ শতাংশই মারা যায় পরিবেশ দূষণজনিত রোগব্যাধির কারণে। কিন্তু সারা বিশ্বে এ ধরনের মৃত্যুর গড় হার মাত্র ১৬ শতাংশ। আমরা যদি একটু চিন্তা করি বা আশপাশে তাকাই তাহলে পরিবেশ ধ্বংসের সব আয়োজন আমরা স্পষ্টতই দেখতে পাই। ঢাকা শহরকে আমরা একটি বস্তির চেয়েও খারাপ অবস্থানে নিয়ে গেছি। সিরিয়া, জর্ডান বা তুরস্কে বাস্তচ্যুতদের রিফিউজি ক্যাম্পগুলোও কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনেক বেশি ডিসিপ্লেন এবং পরিবেশবান্ধব। সেখানে বাচ্চাদের পড়াশোনা এবং খেলাধুলার জন্য প্লে-গ্রাউন্ড আছে। আর ঢাকায়? মিরপুর এলাকাকে আমি বেশি চিনি। প্রায় অর্ধকোটি লোকের বসবাসের এরিয়ায় বাচ্চাদের খেলাধুলার কোনো ব্যবস্থা নেই। একটু নিঃশ্বাস নেয়ার বা বয়স্কদের হাঁটার জন্য কোনো উন্মুক্ত স্থান নেই। ঢাকার মতো এমন ম্যাগাসিটিতে যেখানে মানুষের চাপে হাঁটা যায় না।

নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশু-কিশোরদের মানসিক-শারীরিক বিকাশ ও সুস্থ বিনোদনের জন্যও খেলার মাঠ বা উন্মুক্ত স্থান জরুরি। অথচ রাজধানীতে খেলার মাঠ, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানের খুবই অভাব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি মানুষের জন্য ৯ বর্গমিটার খোলা জায়গা (খেলার মাঠ, পার্ক ইত্যাদি) প্রয়োজন। কিন্তু ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় জনপ্রতি খোলা জায়গার পরিমাণ এক বর্গমিটারের কম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থীর গবেষণা অনুযায়ী, খোলা জায়গার সংকট সবচেয়ে বেশি পুরান ঢাকায়। ওই এলাকার আটটি ওয়ার্ডে একটুও উন্মুক্ত স্থান নেই।
‘ঢাকা শহরে বিদ্যমান খেলার মাঠের ঘাটতি ও চাহিদা পর্যালোচনা’ শীর্ষক বিআইপির গবেষণা অনুযায়ী, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৯২টি ওয়ার্ডে (নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলো ছাড়া) সরকারি-বেসরকারি মোট ২৩৫টি খেলার মাঠ আছে। কিন্তু সব মাঠ সবার জন্য উন্মুক্ত নয়। সর্বসাধারণ ব্যবহার করতে পারে এমন মাঠ আছে মাত্র ৪২টি। ১৪১টি মাঠ আছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মালিকানায়, কলোনির মাঠ আছে ২৪টি, ঈদগাহ মাঠ আছে ১২টি। ১৬টি সরকারি মাঠ বিভিন্নভাবে দখল হয়ে গেছে। তবে গবেষণায় উল্লেখ করা সবার জন্য উন্মুক্ত মাঠের মধ্যে একাধিক মাঠ ঘুরে সেগুলো খেলার জন্য শতভাগ উপযোগী পাওয়া যায়নি। অনেক মাঠে আবার ইট পাথরের স্থাপনা গড়ে উঠেছে বা উঠছে। বিআইপির গবেষণায় রাজধানীতে খেলার মাঠের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরার পাশাপাশি ১২টি সুপারিশও করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, প্রতিটি ওয়ার্ডে কমপক্ষে একটি করে খেলার মাঠ থাকতে হবে। সে অনুযায়ী রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা করতে হবে। খেলার মাঠে যথেষ্ট পরিমাণ বসার জায়গা, খেলাধুলার সরঞ্জাম ও ছাউনি দিতে হবে। নতুন ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করতে নিরাপত্তার বিষয়ে নজর দিতে হবে। খেলার মাঠে মেলার আয়োজন বন্ধ করতে হবে। স্বল্প আয়ের মানুষ ও বস্তির শিশুদের মাঠে প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করতে হবে। মাঠ রক্ষণাবেক্ষণে স্থানীয় ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করতে হবে। যেসব এলাকায় খেলার মাঠের তীব্র সংকট, সেসব এলাকায় সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণ করে হলেও মাঠ তৈরি করতে হবে।

জানতে চাইলে বিআইপির সহ-সভাপতি নগরপরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ ফজলে রেজা বলেন, হাঁটা দূরত্বের মধ্যে প্রাথমিক ও নার্সারি স্কুল যেমন জরুরি, মাঠও তেমন জরুরি। শিশুদের মানসিক বিকাশ ও সুস্বাস্থ্যের জন্য হাঁটা দূরত্বের মধ্যে খেলার মাঠ থাকতে হবে। তাহলে নগরবাসীর পাশাপাশি পানিবদ্ধতা নিরসনেও এটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।

শহরের বিভিন্ন পাড়ার মধ্যেও ফাঁকা জায়গায় একসময় খেলাধুলা করত কচি-কাঁচারা। সেই জায়গাগুলোও এখন গিলে খাচ্ছে ঘরবাড়ি। তরুণ বয়সে ভালো খোলোয়াড় ছিলেন বয়স্ক আজমল হোসেন। আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, আজকাল শহরে খেলার জায়গা খুঁজে পেতে মাথার চুল ছিঁড়তে হয়। শহর যত ঘিঞ্জি হচ্ছে, ঘরবাড়ি গড়ে উঠছে। ততই উন্মুক্ত স্থান বা খেলার মাঠের সমস্যাটা ততই প্রকট হচ্ছে। মাঠ না পেয়ে তরুণরা খেলছে বাড়ির ছোট্ট গ্যারেজে কিংবা বাসার ছাদে। দুই কোটি মানুষের বসবাসের জায়গাটি এমন হলে বৃষ্টির পানি শোষিত হবে কিভাবে।

রাজধানীর জনসংখ্যা দুই কোটি ছুঁই ছুঁই। সময়ের সঙ্গে শহরে জনসংখ্যা, আকাশচুম্বী ভবন যেমন বাড়ছে তেমনই কমছে চার পাশের সবুজ। আধুনিক নগর জীবনে পার্ক ও মাঠকে বলা হয় ‘নগরের ফুসফুস’। কিন্তু রাজধানীতে পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্ন পার্ক বা খেলার মাঠের বড়ই অভাব। যে কারণে রাজধানীর শিশু-কিশোররা আবদ্ধ হয়ে পড়ছে শিক্ষালয় ও বাসার চার দেয়ালের মধ্যে। তাতে করেই নগরবাসীকে পোহাতে হচ্ছে নানাবিধ দুর্ভোগ। পর্যাপ্ত খোলা স্থানের অভাবে নগরবাসীর নাভিশ্বাস পরিস্থিতি। শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে গিয়েও যেন একটি পরিবেশসম্মত বিনোদনকেন্দ্র পাওয়া যায় না। যেটুকুও রয়েছে সেখানে সব শ্রেণী-পেশার মানুষ প্রবেশ করতে পারে না।

নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঢাকায় পর্যাপ্ত খোলা মাঠ বা স্থান নেই, যা আছে তাও রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না। রাজধানীজুড়ে মানুষের তুলনায় খেলার মাঠ বা পার্ক একেবারেই অপ্রতুল। যা আছে, তা-ও দিন দিন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দখল হয়ে যাচ্ছে। নতুন ঢাকার তুলনায় পুরান ঢাকায় একেবারেরই কম। হাতে গোনা কয়েকটি পার্ক ছাড়া সেখানে উন্মুুক্ত স্থান বা খেলার মাঠ প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই কম। একসময় ধানমন্ডি লেক ছিল শুধু ওই এলাকার মানুষের জন্য। কিন্তু এটি এখন পুরো শহরের চাহিদা পূরণ করে। নেই এলাকাভিত্তিক তেমন কোনো খেলার মাঠও। গাছপালার অভাবও বিশেষভাবে লক্ষণীয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজধানী ঢাকা বিশ্বের দ্রুততম বর্ধমান মেগাসিটি। এর বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় দুই কোটি। ১৯৯০ সালে যা ছিল ৬০ লাখ। ২০০৫ সালে ছিল এক কোটি ২০ লাখ। ঢাকা মহানগরীর পরিবেশ, জনজীবন ও জনস্বাস্থ্য বিপর্যস্ত হচ্ছে মূলত অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, নদী-খাল, জলাভূমি ও নিম্নাঞ্চল দখল ও ভরাট, খেলার মাঠ ও উন্মুক্ত স্থান দখল, মহানগরের চারপাশের নদীদূষণ, ভূগর্ভস্থ পানির অপরিকল্পিত উত্তোলন, বায়ুদূষণ ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে।

পরিবেশবিজ্ঞানী ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, ঢাকার নগরায়নের ওপর কারও নিয়ন্ত্রণ নেই। এখানে দুই ভবনের মাঝখানে কোনো জায়গা রাখা হচ্ছে না। শহরটা কংক্রিটের জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। আগে ভবনগুলোর ছাদে ও জানালায় কার্নিশ দেওয়ার চল ছিল। এখনকার ভবনে তা উঠেই গেছে। ফলে বাইরের তাপ প্রতিটি ভবনকে একেকটি অগ্নিচুল্লিতে পরিণত করছে।

https://dailysangram.com/post/457042