৫ এপ্রিল ২০১৭, বুধবার, ৯:৩২

আরো চার জনপ্রতিনিধি বরখাস্ত

আরো চারজন জনপ্রতিনিধিকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এঁদের দুজন উপজেলা চেয়ারম্যান, একজন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও আরেকজন পৌর মেয়র। একজন বিএনপির, দুজন জামায়াতের ও আরেকজন স্বতন্ত্র। চারজনের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি ফৌজদারি (নাশকতা) মামলায় আদালতে চার্জশিট গৃহীত হওয়ায় এই ব্যবস্থা নিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলা চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম ও ভাইস চেয়ারম্যান জার্জিস হোসাইনকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জুলিয়া মইন স্বাক্ষরিত এক আদেশ গত সোমবার রাতে মুজিবগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পৌঁছায়। মুজিবনগরের ইউএনও হেমায়েত উদ্দিন এই বরখাস্ত আদেশের বিষয়টি গতকাল মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম মুজিবনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি এবং জার্জিস হোসাইন মুজিবনগর উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করছেন।
উপসচিব জুলিয়া মইন স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়েছে, মুজিবনগর উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগপত্র বিজ্ঞ আদালতে গৃহীত হওয়ায় জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাঁদের দ্বারা ক্ষমতা প্রয়োগ করা জনস্বার্থবিরোধী। তাই ১৯৯৮ সালের উপজেলা পরিষদ আইনের সংশোধিত ২০১১ সালের ১৩(খ)(১) ধারা অনুসারে তাঁদের দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
মুজিবনগর থানা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সরকারবিরোধী হরতাল-অবরোধ পালনকালে মুজিবনগর উপজেলার গৌরীনগর গ্রামে পুলিশের ওপর হামলা চালায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় মুজিবনগর থানার তত্কালীন ওসি রবিউল হোসেনসহ পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হন।
ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে আমিরুল ইসলাম, জার্জিস হোসাইনসহ বিএনপি-জামায়াতের দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে। গত ৩০ ডিসেম্বর আদালতে ওই মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং গত ২২ মার্চ তা গৃহীত হয়। অভিযোগপত্রে উপজেলা চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলামকে ২ নম্বর এবং জার্জিস হোসাইনকে ৯ নম্বর আসামি করে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
জানতে চাইলে উপজেলা চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাকে রাজনৈতিকভাবে দুর্বল করার জন্যই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আমি এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেছি। ’
ওদিকে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে এশিয়া এনার্জির দায়ের করা মামলায় আদালতে চার্জশিট গৃহীত হওয়ায় পৌর মেয়র মুরতুজা সরকার মানিককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গত সোমবার ওই আদেশের কপি হাতে পেয়েছে জেলা প্রশাসন। তবে ফুলবাড়ীর মেয়র ঢাকায় অবস্থান করায় বরখাস্ত আদেশের কপি পাননি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ২০১৫ সালে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র পদে জয়ী হন তিনি।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর ফুলবাড়ীর সাইট অফিস পরিদর্শনে এসে স্থানীয়দের বাধার মুখে পড়েন এশিয়া এনার্জির কান্ট্রি ডিরেক্টর ব্রিটিশ নাগরিক গ্যারি এন লাইসহ সফরসঙ্গীরা। একপর্যায়ে হামলা চালিয়ে যানবাহন ভাঙচুরসহ তাঁকে লাঞ্ছিত করে স্থানীয়রা। ওই ঘটনায় ১৪ ডিসেম্বর খনিবিরোধী আন্দোলনের নেতা ফুলবাড়ী পৌরসভার মেয়র মুরতুজা সরকার মানিক এবং তেল গ্যাস বিদ্যুত্ বন্দর জাতীয় সম্পদ রক্ষা কমিটির ফুলবাড়ী শাখার আহ্বায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েলসহ ১৯ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেন কম্পানির একজন প্রতিনিধি। ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফুলবাড়ী থানার উপপরিদর্শক শাহ আলম সরদারের দাখিল করা অভিযোগপত্র ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর গ্রহণ করেন আদালত।
দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম জানান, ফৌজদারি মামলায় আদালতে চার্জশিট গৃহীত হওয়ায় পৌরসভা আইন ২০০৯-এর ৩১ উপধারা অনুযায়ী গত সোমবার প্রজ্ঞাপন জারি করে পৌর মেয়রকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব আবদুর রউফ মিয়া।
যোগাযোগ করা হলে মেয়র মুরতুজা সরকার মানিক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঢাকায় আছি। আদেশের কপি হাতে পৌঁছেনি। এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করব। ’
অন্যদিকে ১ নম্বর প্যানেল মেয়র মামুনুর রশীদকে ফুলবাড়ীর ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ওদিকে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জামায়াত সমর্থিত মুহাম্মদ জসীম উদ্দিনকে আবারো সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া থানার বিভিন্ন মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ায় স্থানীয় সরকার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারি করে । একই সাথে প্যানেল চেয়ারম্যান-১ ও ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইব্রাহিম চৌধুরীকে উপজেলা পরিষদের আর্থিক কার্যক্রম সম্পাদনের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। আদেশের পত্রটি সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ উল্যাহ গত সোমবার হাতে পেয়েছেন বলে জানান। চেয়ারম্যান জসীমকে গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি আরো একবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল।
সাতকানিয়ার ইউএনও বলেন, চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিনের বিরুদ্ধে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া থানায় সহিংসতার ১৮টি মামলা রয়েছে এবং ৭ মামলায় ইতিমধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র গৃহীত হয়েছে।
চেয়ারম্যান মুহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, স্থানীয় এমপি অধ্যাপক ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন এডিবির বরাদ্দ নিয়ে কিছুটা অনিয়ম করতে চেয়েছিলেন। তাতে আমি রাজি হইনি। এজন্য তিনি আমার ওপর ক্ষব্ধ হয়ে কৌশলে আমাকে বরখাস্তের ব্যবস্থা করেছেন।
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের এমপি অধ্যাপক ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী বলেন, ‘বরখাস্ত সরকারের কাজ, সরকার করেছে। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এর পেছনে আমার হাত থাকার প্রশ্নই আসে না। ’

 

 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2017/04/05/482934