২২ জুন ২০২১, মঙ্গলবার, ১২:৪২

২০২০ সালে দেশে বিদেশী বিনিয়োগ কমেছে ১১%

২০২০ সালে বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ ১১ শতাংশ কমেছে। এই নিয়ে পর পর দুই বছর বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ কমেছে। এর আগে ২০১৯ সালে বিদেশী বিনিয়োগ কমেছিল ২০ শতাংশ।
জাতিসঙ্ঘ বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার (আঙ্কটাড) ‘ওয়ার্ল্ড ইনভেস্টমেন্ট রিপোর্ট-২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বিশ্বব্যাপী প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, করোনার প্রভাবে গত বছর বিশ্বব্যাপী বিদেশী বিনিয়োগ কমেছে ৩৫ শতাংশ। এক দশকেরও বেশি সময় পরে এ প্রবাহ এক ট্রিলিয়ন (লাখ কোটি) ডলারের নিচে নেমে গেছে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে।
২০২০ সালে বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণ ১০.৮ শতাংশ কমে প্রায় ২৬০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে।
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে কেবল ভারতেই গেল বছর এফডিআই প্রবাহ ২৭ শতাংশ বেড়ে ৬৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। ভারতের এই বৃদ্ধির কারণে এ অঞ্চলের সামষ্টিক বিদেশি বিনিয়োগ ২০.১ শতাংশ বেড়ে ৭১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়।
সামষ্টিক হিসাব বাদ দিলে নেতিবাচক প্রবণতাই দেখেছে সমগ্র অঞ্চল। বাংলাদেশে টানা দ্বিতীয় বছরের ন্যায় এফডিআই কমেছে। এর আগে ২০১৯ সালে ২০.৪৭ শতাংশ কমেছিল এফডিআই।
২০২০ সালে এফডিআই ৬ শতাংশ কমেছে পাকিস্তানে। তবে আঙ্কটাডের বিনিয়োগ রিপোর্ট অনুসারে, দেশটির বিদ্যুৎ উৎপাদন ও টেলিকম খাতে অব্যাহত বিনিয়োগের কারণে এফডিআই’র পরিমাণ আরো কমতে পারেনি। সবচেয়ে বেশি এফডিআই কমেছে আফগানিস্তানে, যুদ্ধবিধস্ত দেশটিতে যা ৬৭ শতাংশ কমে ০.০০১৩ বিলিয়নে নেমে আসে। এ ছাড়া মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ভুটানে যথাক্রমে ৬৪, ৪৩, ৩২, ৭ শতাংশ হারে কমেছে।
২০১৯ সালের কোভিড-১৯ মহামারীপূর্ব সময়ের তুলনায় চলতি বছর বিশ্বব্যাপী এফডিআই প্রবাহ ২৫ শতাংশ কমার প্রাক্কলন করেছে আঙ্কটাড।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ২০২০ সালের পঞ্জিকা বছরে দেশে দেশে নিট এফডিআই এসেছে ২৫৬ কোটি ৩৫ লাখ ৮০ হাজার ডলার। এর মধ্যে ইক্যুইটি মূলধন বিনিয়োগ ৮৪ কোটি ২২ লাখ ৯০ হাজার ডলার, পুনঃবিনিয়োগ ১৫৬ কোটি ৬১ লাখ ২০ হাজার ডলার ও আন্তঃকোম্পানি ঋণ ১৫ কোটি ৫১ লাখ ৭০ হাজার ডলার। এর আগের বছর (২০১৯) দেশে নিট এফডিআই প্রবাহের পরিমাণ ছিল ২৮৭ কোটি ৩৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার। সে হিসাবে গত পঞ্জিকা বছরে নিট এফডিআই প্রবাহ কমেছে ১০ দশমিক ৮ শতাংশ।
অন্য দিকে ২০২০ সাল শেষে বাংলাদেশে মোট বিদেশী বিনিয়োগের স্থিতি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৯৩৯ কোটি ডলার, যা এর আগের বছর (২০১৯) শেষে ছিল এক হাজার ৭৭৮ কোটি ডলার।
বিশ্বব্যাপী এফডিআই প্রবাহ কমে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটি একটি বড় উদ্বেগ, বিশ্বের দরিদ্র অঞ্চলে টেকসই উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের প্রবাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহামারী থেকে একটি টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তি পুনরুদ্ধারের সমর্থনে বিনিয়োগ বাড়ানো এখন একটি বৈশ্বিক নীতি অগ্রাধিকার। তবে এফডিআই প্রবাহ আগের অবস্থানে ফিরে আসতে সময় লাগবে। কারণ বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি এখনো দুর্বল। তৈরী পোশাক উৎপাদনে বিনিয়োগে আগ্রহ কম বলে মনে করছে আঙ্কটাড।
প্রসঙ্গত, গত বছর আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের রফতানি আদেশ বাতিল করে দিয়েছিল। এ কারণেও বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ কমতে পারে বলে মনে করছে আঙ্কটাড।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে এফডিআই প্রবাহ সবচেয়ে বেশি বেড়েছিল ২০১৮ সালে। ওই বছর বাংলাদেশে এফডিআই প্রবাহ ৬৮ শতাংশ বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ৩৬১ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। কিন্তু এ ধারা স্থায়ী হয়নি। এরপর টানা দুই বছর ধরে বিদেশী বিনিয়োগ কমছে। জানা যায়, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ অধিক বৃদ্ধির অন্যতম কারণ ছিল ঢাকা টোব্যাকো অধিগ্রহণ। জাপান টোব্যাকো’র ওই অধিগ্রহণের আর্থিক মূল্য ছিল ১৫০ কোটি ডলারের বেশি।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/589794/