২৮ জুন ২০২১, সোমবার, ২:০৯

লকডাউনে তছনছ আম চাষির স্বপ্ন

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানও এতটা ক্ষতি করতে পারেনি

আম চাষিরা গত বছর লোকসানের মুখে পড়েন ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের কারণে। এবার বড় কোনো ঝড় কিংবা তেমন শিলাবৃষ্টি হয়নি। ফলনও হয়েছে ভালো। সব মিলিয়ে এই মহামারির মধ্যে আম বিক্রি করে লাভের আশা করেছিলেন চাষিরা। কিন্তু করোনা মোকাবেলায় সরকারের বিভিন্ন বিধি-নিষেধ আম চাষিদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ‘লকডাউন’ করোনা নিয়ন্ত্রণে কতটা ভূমিকা রাখে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও এটা প্রমাণিত যে কয়েক দফার লকডাউন লাখো মানুষকে পথে বসিয়েছে। আম চাষিদেরও একই দশা।

নিজস্ব প্রতিবেদক (রাজশাহী) জানান, টানা লকডাউনে এবার মাথায় হাত পড়েছে আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের। ফজলি আমের যেন ক্রেতাই মিলছে না। ‘সর্বোচ্চ চাহিদার’ আম্রপালিরও বিক্রি নেই। ল্যাংড়া বিক্রি হচ্ছে একেবারে সস্তায়। ভ্যানচালকরা পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে প্রতি কেজি আম বিক্রি করছেন ১০ থেকে ২০ টাকায়। চাষিরা বলছেন, এত অল্প দামে এর আগে তাঁরা কখনোই আম বিক্রি করেননি।

রাজশাহীর পারিলা গ্রামের আকবর আলী বলেন, ‘যে বাগানের দাম কিছুদিন আগেও এক লাখ টাকা বলে গেছেন ব্যবসায়ীরা, এখন সেটি কেনার লোকই নেই। বাগান থেকে আম পেড়ে বাজারে গিয়ে বিক্রি করলে সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা মিলবে। কিন্তু তাতে খরচ হবে আরো ২৫ হাজার টাকা। ফলে এক লাখ টাকার বাগানে এখন আম বিক্রি করে একজন চাষির পকেটে উঠবে ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু এই সারা বছর বাগানের জমিতে অন্য ফসল চাষ করলেও এর চেয়ে বেশি টাকা আসত।’

গতকাল রাজশাহীর বানেশ্বর বাজারে এক মণ ফজলি আম বিক্রি হয়েছে ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা দরে। এর আগে কখনোই ৮০০ টাকার নিচে ফজলি আম বিক্রি হয়নি।

আম চাষি মকবুল হোসেন বলেন, ‘অন্যবার এই সময়ে বাজারে এলে আমের ঝুড়ি নিয়ে ব্যবসায়ীরা টানাটানি শুরু করতেন। এবার বসে থেকেও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না।’

সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি জানান, দেশে যতগুলো বড় আমের বাজার রয়েছে, সাপাহার সেগুলোর একটি। কিন্তু ক্রেতা কিংবা ব্যাপারী না থাকায় এই আমের বাজারে কোনো ধরনের হাঁকডাকই শোনা যায় না। আম চাষিরা বলছেন, কঠোর লকডাউনের কারণেই বাজারে ক্রেতা নেই। পাইকাররা আম কেনার সাহস পাচ্ছেন না।

আঞ্চলিক প্রতিনিধি (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) জানান, এবার আমের বাম্পার ফলন হলেও ‘লকডাউন আতঙ্কে’ বাজারে ধস নেমেছে। আম নিয়ে চরম উৎকণ্ঠা ও বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। গত বছরের তুলনায় বাজারে এবার আমের দাম অর্ধেকেরও কম।

আঞ্চলিক প্রতিনিধি (রংপুর) জানান, লকডাউন ঘোষণায় মাথায় হাত পড়েছে ‘হাঁড়িভাঙ্গা’ আম ব্যবসায়ীদের। দূরপাল্লার বাস, ট্রেনসহ বেশির ভাগ যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রংপুরের মিঠাপুকুর ও বদরগঞ্জে হাঁড়িভাঙ্গার বাজারে ধস নেমেছে। পাইকারি গ্রাহক না থাকায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন আম চাষিরা। গত মৌসুমের শুরুতে যেখানে এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকা এক মণ আম বিক্রি হয়েছিল, এবার অর্ধেক দামেও নেওয়ার মানুষ নেই।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, আম বিক্রি করতে না পেরে লোকসানের মুখে পড়েছেন হাজার হাজার চাষি। বাগানের আম বাগানেই নষ্ট হচ্ছে। বর্তমানে এলাকায় ১০ থেকে ২৫ টাকা দরে প্রতি কেজি আম বিক্রি হচ্ছে। আমের ন্যায্য মূল্যের দাবিতে গতকাল ঝিনাইদহে মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগীরা।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2021/06/28/1047670