ফাইল ছবি
২৮ জুন ২০২১, সোমবার, ২:০৭

চট্টগ্রামে গণপরিবহনে নৈরাজ্য

করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার গত এপ্রিল মাসে গণপরিবহনের প্রতি সিটে অর্ধেক যাত্রী নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময় পর পর জীবাণুনাশক স্প্রে করারও দেয়া হয়েছিল নির্দেশনা। বিনিময়ে যাত্রী প্রতি ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তবে চালকরা এখন ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়ে প্রতি সিটে ঠিকই ২ জন করে যাত্রী নিচ্ছেন। পাশাপাশি সিট ছাড়াও গাড়িতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যাত্রীরা আসা-যাওয়া করছেন। এক্ষেত্রে যাত্রীদের কোনো অভিযোগ, অনুনয়ের তোয়াক্কা করছেন না গাড়ির চালকরা। এ নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে গণপরিবহনের চালক- সহকারীদের প্রতিনিয়ত বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটছে। শহরের কয়েক জায়গায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ে যাত্রীদের গাড়ি থেকে নামিয়ে হেনস্তার ঘটনাও ঘটেছে।


সরজমিন দেখা যায়, নগরীতে সবধরনের গণপরিবহণে দ্বিগুণ ভাড়া আদায়ের পাশাপাশি আসন সংখ্যার অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া হচ্ছে। আর এসবরের প্রতিবাদ করলেই চালক- হেল্পারদের হাতে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে নিয়মিত। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রতিবাদ করায় গত বুধবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের এক ছাত্রী হেনস্তার শিকার হয়েছেন। বাসের চালক ও সহকারী মিলে ওই ছাত্রীকে সে সময় বাস থেকে নামিয়ে দেয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে। নগরীর অক্সিজেন মোড় থেকে গ্রামের বাড়ি নাজিরহাট যাবেন ব্যবসায়ী জমির উদ্দিন। বাসে এক সিটে একজন বসার কথা থাকলে পাশে আরেকজন বসানো হয়। গাড়ি ছাড়ার পর সহকারী ভাড়া চাইলো ৬৫ টাকা। পাশে একজন বসানোর পরও ৩৫ টাকার ভাড়া কেন এতো জানতে চাইলে এই সহকারীর সাফ কথা, পোষাইলে বসেন না হয় নেমে যান। ব্যবসায়ী জমির উদ্দিন বলেন, প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার বাড়ি যাই। সবমিলিয়ে আগে আসা-যাওয়াতে একশ’ টাকার বেশি লাগতো না। এখন প্রায় আড়াইশ’ টাকা খরচ হচ্ছে। আর স্বাস্থ্যবিধি নামের যেটা বলা হচ্ছে সেটার কিছুই নেই। সত্যি বলতে কি এখানে নৈরাজ্য চলছে।

ব্যাংকার ইয়াসিন উদ্দিন বলেন, ‘গাড়িতে প্রতি সিটে একজন বসার নিয়মটা যখন মানা হচ্ছে না, তাহলে ভাড়াও আগের মতো করে দিক। তখন অন্তত যাত্রীদের বিড়ম্বনা একটু কমতো।

নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ে সিটি বাস চালক আব্দুল বাসেত বলেন, এখন ভাড়া দ্বিগুণ নিচ্ছি আপনারা শুধু সেটা দেখতেছেন। এতোদিন যে না খেয়ে ছিলাম সেটা তো দেখেননি। আমাদের সন্তানেরা যে না খেয়ে ছিল সেটা নিয়ে তো কথা বলেননি। প্রণোদনা দিচ্ছে, এই দিচ্ছে বললো। কই এই পর্যন্ত সরকার থেকে এক পয়সাও পাইনি। করোনা আসার পর কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন বাস মালিক সমিতির সভাপতি বেলাল হোসেন বলেন, চালকরা অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন এ রকম কিছু কথা আমাদের কানে আসতেছে। অনেকে মালিকদের নাম বিক্রি করে যাত্রীদের হয়রানি করছে। কাজেই যাদের নামে ঘোরতর অভিযোগ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে মালিক সমিতি ব্যবস্থা নেবে।

এদিকে গণপরিবহনে নৈরাজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথ মানবজমিনকে বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও হয়রানির বিষয়ে যাত্রীদের অভিযোগ পাওয়া মাত্রই আমরা সেখানে অভিযান পরিচালনা করছি। এই একমাসে নিয়ম ভঙ্গকারী চালকদের বিরুদ্ধে প্রায় ৫০০টি মামলাও দায়ের করা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=280815&cat=3