২৮ জুন ২০২১, সোমবার, ২:০৫

জনস্রোত আটকানো যাচ্ছে না শিমুলিয়া-পাটুরিয়ায়

কোনোভাবেও আটকানো যাচ্ছে না মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়ার জনস্রোত। দলে দলে এই ঘাটে আসছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলমুখী মানুষ। নানা ভোগান্তির স্বীকার হয়ে ঘাটে এসে তাদের পড়তে হচ্ছে নতুন ভোগান্তিতে। তবে বিপরীত চিত্র মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-আরিচা ঘাটে। সেখানে যাত্রী ও যানবাহনের ফেরিতে উঠতে কোনো বিড়ম্বনার মুখোমুখি পড়তে হচ্ছে না।

মুন্সীগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, সরকার ঘোষিত লকডাউনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাজধানীর কর্মস্থল ছেড়ে দেশের দক্ষিণবঙ্গগামী ২১ জেলার মানুষের যাওয়ার ঢল নেমেছে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে। ঘরমুখো এসব মানুষকে কিছুতেই আটকানো যাচ্ছে না। গতকাল ভোর থেকে ঘাট এলাকায় হাজার হাজার যাত্রীর ভিড় লক্ষ করা গেছে। যাত্রীর চাপে শিমুলিয়া থেকে বাংলাবাজারমুখী ফেরিগুলোতে পণ্যবাহী ও জরুরি যানবাহন পারাপারে বেগ পেতে হচ্ছে। পারাপারের অপেক্ষায় শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় আটকা পড়েছে কয়েক শ’ গাড়ি। কোনো আইনকানুনই আটকাতে পারছে না শিমুলিয়ার জনস্রোত। প্রশাসনের সব কৌশল টপকিয়ে যাত্রীরা ছুটে চলেছেন।

সকাল থেকে দেখা যায়, পুলিশের বসানো চেকপোস্ট উপেক্ষা করে বিভিন্ন পথে ছোট যানবাহনে যাত্রীরা ঘাট এলাকায় উপস্থিত হচ্ছেন। ঘাটে পণ্যবাহী ও ব্যক্তিগত গাড়ির দীর্ঘ সারি। শিমুলিয়া থেকে বাংলাবাজারগামী প্রতিটি ফেরিতে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব। অনেকের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। বিগত সময়েও লকডাউনের ঘোষণার সাথে সাথে মাওয়া-শিমুলিয়া ঘাটে যাত্রীদের ঢলের চিরচেনা দৃশ্য এখন আবার শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সাফায়েত আহমেদ বলেন, ‘নৌরুটে বর্তমানে ১৫টি ফেরি সচল রয়েছে। সকাল থেকে যাত্রীদের কিছুটা ভিড় রয়েছে। লকডাউনের আওতামুক্ত গাড়ি পারাপারের কথা থাকলেও যাত্রীরা ঘাটে আসছে। যাত্রী নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব আমাদের নয়। ঘাট এলাকায় সাড়ে চার শতাধিক গাড়ি পারাপারের অপেক্ষায় আটকা পড়েছে।’ মাওয়া ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ জাকির হোসেন বলেন, ‘লকডাউনের কথা শুনে ঘাটে মানুষের খুব চাপ বেড়েছে। একই সাথে গাড়ির চাপেও আছে। যাত্রীদের ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য যথাসম্ভব চেষ্টা করা হচ্ছে।’ মাওয়া নৌপুলিশ ইনচার্জ সিরাজুল কবির জানান, ট্রলার, লঞ্চ, সি-বোট বন্ধ রয়েছে। কেবল ফেরি দিয়েই পারাপার হচ্ছে যাত্রী ও যানবাহন।

মানিকগঞ্জে মহাসড়কে ভোগান্তি, পাটুরিয়া ঘাটে স্বস্তি
মানিকগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, মানিকগঞ্জে সাত দিনের লকডাউনের গতকাল ছিল ষষ্ঠ দিন। বৃহস্পতিবার থেকে সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হওয়ার আতঙ্কে মানুষজন রাজধানী ঢাকা থেকে ছুটে চলছে গ্রামের বাড়িতে আবার অনেকে গ্রাম হতেও ছুটে চলছে শহরে। দূরপাল্লার বাস ও গণপরিবহন বন্ধ থাকায় নানা ভোগান্তির পরও বিভিন্নভাবে মানুষ তাদের গন্তব্যে ছুটে চলছে।

তবে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও অরিচা ঘাটে জরুরি পরিষেবার আওতায় যানবাহন পারাপার হলেও গতকাল তেমন কোনো যাত্রী চাপ ছিল না। স্বাভাবিক সময়ে পাটুরিয়া ট্রাক টার্মিনালে সাড়ে চার শ’ ট্রাক পারাপারের অপেক্ষায় থাকে। তবে লকডাউনে সে টার্মিনাল গতকাল একদম ফাঁকা ছিল। যেসব জরুরি পণ্যবাহী ট্রাক ঘাট এলাকায় এসেছে সেগুলো সরাসরি ফেরিতে উঠেছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক দিয়ে যেসব যাত্রী ঘাটে এসেছে তারাও এসব ফেরিতে নির্বিঘেœ পারাপার হয়েছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় মহাসড়কে যাত্রীদের ভোগান্তি হলেও ফেরিগুলোতে স্বস্তিতে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুট পাড়ি দিয়েছে। এ দিকে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে যেসব যাত্রীরা পাটুরিয়ায় এসেছে তারা কয়েক গুণ ভাড়া দিয়ে প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেলে তাদের গন্তব্যে ছুটতে হচ্ছে। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ও পাটুরিয়া ঘাট এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

দৌলতদিয়া থেকে পাটুরিয়া ঘাটে আসা যাত্রী আবুল কালাম বলেন, জরুরি কাজে ঢাকা যাবো। গোপালগঞ্জ থেকে দৌলতদিয়া ঘাটে আসতে কয়েকবার গাড়ি পরিবর্তন করতে হয়েছে। ফেরিতে কোনো সমস্যা হয়নি। তবে পাটুরিয়া ঘাট থেকে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় প্রাইভেট কারে ৫০০ টাকা দিয়ে গাবতলী যাচ্ছি।

ট্রাকচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, পাটুরিয়া ঘাটে দিনের পর দিন লাগে ফেরিতে উঠতে। তবে আজ কোনো চাপ না থাকায় সরাসরি পন্টুন পর্যন্ত চলে আসছি। প্রাইভেট কার চালক মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে কয়েকটি জায়গায় চেকপোস্ট রয়েছে। ঝুঁকি ও যাত্রী কম থাকায় ভাড়া একটু বেশি নিচ্ছি। অনেক সময় গন্তব্যের আগে পুলিশি চেক পোস্ট থাকলে যাত্রীদের নামিয়ে দিতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের ডিজিএম জিল্লুর রহমান বলেন, এ নৌরুটে জরুরি পরিষেবার আওতাধীন যানবাহন ১৪টি ফেরি দিয়ে পারাপার হচ্ছে। এসব যানবাহন পারাপারের সময় সাধারণ যাত্রীরাও পারাপার হচ্ছে। তবে ঘাট এলাকায় কোনো চাপ নেই।

বগুড়ায় কঠোর বিধিনিষেধ আরো বাড়ল
বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়া সদরে করোনা সংক্রমণরোধে চলমান কঠোর বিধিনিষেধ আবারো বাড়ানো হয়েছে। এর আগে সাত দিনব্যাপী কঠোর বিধিনিষেধ চলাকালে গত শনিবার ঘোষণা দেয়া হয়, রোববার রাত পর্যন্ত অর্থাৎ সোমবার থেকে দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন শুরু পর্যন্ত চলবে। কিন্তু রোববার সন্ধ্যায় জেলার অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) সালাহ উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক সরকারি আদেশে বলা হয়, দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন শুরু পর্যন্ত বগুড়া পৌরসভা ও সদর উপজেলা এলাকায় কঠোর বিধিনিষেধ বলবৎ থাকবে। তবে একই সময়ে অত্র এলাকার ২৪টি হাটবাজার উন্মুক্ত জায়গায় স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত থাকলেও তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/591108