২৭ জুন ২০২১, রবিবার, ১:৪২

হঠাৎ বাজারে ভিড়, দামও চড়া

সাতদিন কঠোর লকডাউনের ঘোষণায় রাজধানীর বাজারে হঠাৎ করে ভিড় বেড়েছে। এতে নিত্যপণ্যের দামেও প্রভাব ফেলেছে। সরজমিন রাজধানীর কাওরান বাজার, ফার্মগেট, তেজগাঁও, মিরপুর সহ বিভিন্ন এলাকার বাজার ও সুপারশপে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, লকডাউনের ঘোষণায় ক্রেতারা তুলনামূলক বেশি বাজার করছেন। কেউ কেউ ১০-১৫ দিনের বাজার সদাই একবারে করে নিচ্ছেন। ক্রেতাদের চাহিদা দেখে পণ্যের দামও তুলনামূলক বেশি হাঁকছেন বিক্রেতারা। দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সোমবার থেকে টানা সাতদিন কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। যদিও এতে নিত্যপণ্যের দোকান বা বাজার বন্ধ থাকবে নাকি খোলা থাকবে, সে ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি।

গতকাল সরজমিন কচুক্ষেত বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আগের তুলনায় বাজারে ক্রেতারা ভিড় করছেন বেশি।

পণ্যও কিনছেন বেশি করে। এ সময় বিক্রেতারা জানান, লকডাউনের ঘোষণায় বাজারে ক্রেতাদের আনাগোনা বেশি দেখা যাচ্ছে। মুদি দোকানি আক্তার হোসেন বলেন, সকাল থেকে ক্রেতাদের সমাগম বেশি। কাস্টমাররা চাল, ডাল, তেল, লবণ, মসলা, রসুন, পিয়াজ, আদাসহ বেশিদিন থাকে এমন অপচনশীল পণ্যগুলো বেশি পরিমাণে কিনছেন। এতে আমাদের ব্যস্ততাও বেড়েছে, বিক্রিও বেড়েছে। রোববার ভিড় আরও বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। গত দুইদিনে যা বিক্রি হয়েছে আজ একদিনে সেই পরিমাণে বিক্রি হবে বলে জানান তিনি।

তবে বিক্রি বেশি হওয়ায় চাহিদা বুঝে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বেশি হাঁকছেন বলে অভিযোগ করছেন ক্রেতারা। মিরপুর ১৩ নম্বরে বাজার করতে আসা আবু হানিফ জানান, লকডাউন হলে যেমন বাইরে বের হওয়া সমস্যা। তার থেকে বড় সমস্যা এই সুযোগে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। তাই আগে থেকেই কিছু পণ্য বেশি করে নিয়ে নিচ্ছি। পিয়াজ, আলু, আদা, রসুন, চাল, ডালসহ শুকনো বাজারগুলো বেশি করে নিচ্ছি। এসব পণ্যের দাম কিছুটা বাড়তি দেখা যাচ্ছে। তবে কাঁচাবাজারে নৈরাজ্য শুরু হয়ে গেছে। তিনি বলেন, কাঁচা তরকারির দাম একদিনের ব্যবধানে অনেক বেড়ে গেছে। আগে ৪০ টাকা কেজি দরে কেনা তরকারি আজ ৮০ টাকা পর্যন্ত দেখছি।

ওদিকে বাজার ঘুরে দেখা যায়, ইতিমধ্যেই বাজারে বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়েছে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে মসলার দামও বেড়েছে। তবে কঠোর লকডাউনের গুঞ্জনে বেড়েছে অন্যান্য পণ্যের দামও। ৪-৫ দিনের ব্যবধানে নতুন করে বেড়েছে পিয়াজ, আদা, হলুদ, ডাল, এলাচ, সয়াবিন তেল, মুরগি, আটা, ময়দা ও চিনির দাম। ব্যবসায়ীরা জানান, গত সপ্তাহে আমদানি করা পিয়াজের দাম ছিল ৪৫ টাকা, এখন সেই পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। আর যে পিয়াজের দাম ছিল ৪০ টাকা, এখন সেটি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি দরে। সপ্তাহ ঘুরতেই আরও বেড়েছে সয়াবিন তেলের দাম। গত সপ্তাহে ৬৬০ টাকায় বিক্রি হওয়া ৫ লিটার বোতল এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৬৮০ টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ২০ টাকা। দাম বেড়েছে আটা-ময়দারও। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্যাকেট আটার দাম বেড়েছে কেজিতে ১ থেকে ২ টাকা, আর খোলা ময়দার দাম বেড়েছে কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে মসুর ডালের দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে। বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজি দরে। বেড়েছে আদার দামও। কেজিতে বেড়েছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত। আমদানি করা আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে হলুদের দাম। ২০০ টাকা কেজি দরের হলুদ এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়। এলাচির দামও বেড়েছে কেজিতে ১০০ টাকা। বেড়েছে চিনির দামও। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছিল ৭০ টাকা কেজি দরে। এখন সেই চিনি কেজিতে দুই টাকা বেড়ে ৭২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকার মতো। অপরিবর্তিত রয়েছে পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগি এবং লাল লেয়ার মুরগির দাম। গরুর মাংস এখনো বাড়তি দামেই (৬০০ টাকা কেজিতে) বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের তুলনায় সবজির দামও বেড়েছে।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=280655&cat=2