২৭ জুন ২০২১, রবিবার, ১:৪২

মৃত্যু ছাড়াল ১৪ হাজার

দেশে করোনা সাত দিনে নিল ৫৮৭ প্রাণ

দেশে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। কিছুতেই থামছে না সংক্রমণ ও মৃত্যু। অনেকটা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। সীমান্ত এলাকায় দিন দিন জটিল হয়ে পড়েছে পরিস্থিতি। রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকায়ও করোনা থাবা বসাচ্ছে। সবমিলিয়ে দেশে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ১৪ হাজার ছাড়িয়েছে। গত এক সপ্তাহে দেশে করোনা কেড়ে নিয়েছে ৫৮৭ প্রাণ। আগের সপ্তাহে মারা যায় ৩৯৫ জন। এক সপ্তাহে মৃত্যু বেড়েছে ৪৮ দশমিক ৬১ শতাংশ। এ সময়ে ১৮ দশমিক ৬০ শতাংশ নমুনা পরীক্ষা বাড়লেও শনাক্ত বেড়েছে ৪৯ দশমিক ১৫ শতাংশ। এক সপ্তাহে সুস্থতার হার বেড়েছে ২৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু সংক্রমণ কমলেও বেড়েছে শনাক্তের হার। তবে আগের দিনের তুলনায় প্রায় আট হাজার নমুনা পরীক্ষা কম হয়েছে। একদিনে দেশে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে মারা যায় ৭৭ জন। এদিনে আরও ৪৩৩৪ জনের মধ্যে নতুন করে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। করোনায় দেশে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৪০৫৩। সবমিলিয়ে করোনা শনাক্তের সংখ্যা হয়েছে ৮ লাখ ৮৩ হাজার ১৩৮। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২১ দশমিক ২২ শতাংশ। সরকারি হিসাবে ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৩২৯৫ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হলেন ৮ লাখ ৮৫৪ জন।

এক সপ্তাহের মৃত্যু ও শনাক্ত পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আগের দিন শুক্রবার দেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০৮ জন মারা যায়। এদিন শনাক্ত হয় ৫৮৬৯ জন। আগের দিন বৃহস্পতিবার শনাক্ত হয়েছিল ৬০৫৮ এবং মারা যায় ৮১ জন। বুধবার মারা যায় ৮৫ জন এবং নতুন সংক্রমণ হয়েছিল ৫৭২৭। মঙ্গলবার শনাক্ত হয় ৪৮৪৬ এবং মারা যায় ৭৬ জন। সোমবার শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৪৬৩৬ এবং মৃত্যুবরণ করেন ৭৮ জন। এর আগের দিন রোববার সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে কম ৩৬৪১ জন করোনা শনাক্ত হয়। ওইদিন মারা যায় ৮২ জন। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত বছর ৮ মার্চ। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ১৫ দিনেই এক হাজার রোগীর মৃত্যু হয়। ১১ জুন ১৩ হাজার কোভিড-১৯ রোগীর মৃত্যুর খবর জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

২৬ জুন রোববার এই সংখ্যা ১৪ হাজার ৫৩ জনে পৌঁছায়। মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে এপ্রিলে পরিস্থিতি নাজুক হওয়ার পর ১০ দিনে ১ হাজার কোভিড-১৯ রোগীর মৃত্যু হয়েছিল। অথচ প্রথম মৃত্যুর আড়াই মাস পর গত বছরের ১০ জুন মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ছাড়ায়। এরপর ৫ জুলাই ২ হাজার, ২৮ জুলাই ৩ হাজার, ২৫ আগস্ট ৪ হাজার, ২২ সেপ্টেম্বর ৫ হাজার ছাড়ায় মৃতের সংখ্যা। ৪ নভেম্বর ৬ হাজার, ১২ ডিসেম্বর ৭ হাজারের ঘর ছাড়ায় মৃত্যুর সংখ্যা। এ বছরের ২৩ জানুয়ারি ৮ হাজার এবং ৩১ মার্চ মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৯ হাজার ছাড়ায়। মোট মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়ে যায় ২৫ এপ্রিল। তার ১৬ দিন পর ১১ মে করোনাভাইরাসে মৃত্যু ১২ হাজার ছাড়িয়ে যায়। তার এক মাস পর ১১ জুন তা ১৩ হাজার ছাড়িয়েছিল।

এদিকে সীমান্তবর্তী এলাকা ছাড়া ঢাকা ও দেশের মধ্যবর্তী অঞ্চলে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা জেলায় (মহানগরসহ) শনাক্তের হার ১৭ দশমিক ১৪ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ১২ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় ফরিদপুরে করোনা শনাক্তের হার ৮৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। শুক্রবার এ জেলায় সংক্রমণ হার ছিল ৫১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। রাজবাড়ীতেও একদিনে তিন শতাংশ বেড়েছে শনাক্তের হার।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সারা দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫৫৪টি ল্যাবে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে আরটি-পিসিআর ল্যাব ১২৬টি, জিন এক্সপার্ট ৪৬টি, র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন ৩৮২টি। এসব ল্যাবে ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ১৯ হাজার ৮৪৪টি। মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৯ হাজার ২৬২টি। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৬৪ লাখ ৮২ হাজার ৩৮১টি। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬২ শতাংশ।

শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯০ দশমিক ৬৮ এবং মৃত্যুহার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। মৃতদের মধ্যে পুরুষ ৪৮ ও নারী ২৯ জন। এদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ৬৫ জন, বেসরকারি হাসপাতালে সাতজন ও বাড়িতে চারজন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ২০ জন, রাজশাহী বিভাগে নয়জন, খুলনা বিভাগে ১৯ জন, বরিশাল বিভাগে একজন, সিলেট বিভাগে চারজন, রংপুর বিভাগে চারজন ও ময়মনসিংহ বিভাগে তিনজন রয়েছেন। তাদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে ৩৮ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১৭ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১৩ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে পাঁচজন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে তিনজন এবং ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে একজন রয়েছেন।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/436158