৪ এপ্রিল ২০১৭, মঙ্গলবার, ১০:২৩

আমিরাতের শ্রমবাজার ৪ বছর ধরে বন্ধ

রাষ্ট্রদূতকে শুধু আশ্বাস দেয়া হচ্ছে ; চলতি মাসে প্রবাসী মন্ত্রীর সফর

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) চার বছর ধরে পুরুষ শ্রমিক রফতানি পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। তবে নারীশ্রমিক যাওয়ার গতি আগের মতোই আছে। তবে কী কারণে দেশটির সরকার বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না, তা নিয়ে দেশ-বিদেশে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
এ দিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) শ্রমবাজার শিগগিরই খুলে যাবে বলে জাতীয় সংসদের সর্বশেষ অধিবেশনে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
তবে মন্ত্রীর এমন বক্তব্যের সাথে মন্ত্রণালয়ের কোনো কোনো কর্মকর্তা একমত হতে পারছেন না। ওই সব কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বলেন, ইউএই সরকারের সাথে দীর্ঘ দিন ধরেই তো শ্রমবাজার খোলা নিয়ে আলোচনা চলছে, তার পরও দেখছি অচলাবস্থা কাটছেই না। তারা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, শ্রমিক নেয়ার ব্যাপারে তারা বাংলাদেশে এসে বৈঠক করে পজিটিভ রিপোর্ট দিয়েছেন। এমন আশ্বাসের পরও কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ও আরব আমিরাতে অবস্থানরত বাংলাদেশী ব্যবসায়ী ও কর্মীরা মনে করছেন, ডিপ্লোমেটিক তৎপরতা ঠিকমতো না চলার কারণে গুরুত্বপূর্ণ এ শ্রমবাজারে এখনো বাংলাদেশ প্রবেশ করতে পারছে না। আর এ সুযোগে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণ, কন্সট্রাকশন, ফ্যাক্টরিসহ বিভিন্ন সেক্টরে ভারত ও নেপালের শ্রমিকের দখলে চলে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে শুধু সরকার নয়, পাশাপাশি জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার সদস্যদেরও কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তারা।
গত সপ্তাহে দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অদূরে একটি ফার্নিচার ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন এমন একাধিক বাংলাদেশী শ্রমিক নয়া দিগন্তকে টেলিফোনে বলেন, আমাদের কোম্পানিতে পাকিস্তান, ভারত ও নেপালসহ বিভিন্ন দেশের বিদেশী শ্রমিক কাজ করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে কম শ্রমিক বাংলাদেশের। মাত্র চারজন। তারা বলেন, দীর্ঘ ৪-৫ বছর ধরেই আমাদের দেশ থেকে শ্রমিক আসছে না। কেন, কী কারণে ইউএই সরকার আমাদের কর্মীদের ভিসা দিচ্ছে না তা আমরা ঠিকভাবে বলতে পারব না। তবে দুবাইয়ের জাবেল আলী এলাকায় বিশাল এয়ারপোর্ট নির্মাণ হচ্ছে। সেখানে হাজার হাজার কর্মীর চাহিদা। ভারত ও নেপাল থেকে প্রচুর শ্রমিক আসছেন। শুধু নেই বাংলাদেশীরা। এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বৈধ শ্রমিকেরা এ দেশে ঠিকমতো কাজ পাচ্ছেন না। অবৈধ লোক এসে কিভাবে কাজ করবে? পুলিশি অভিযানে ধরা পড়ে অনেক বাংলাদেশী অবৈধ শ্রমিক দেশে চলে গেছেন, আবার অনেকে কাজ না পেয়ে স্বেচ্ছায় চলে গেছেন। এখন ৫-১০ শতাংশ শ্রমিক অবৈধ থাকতে পারে। বাংলাদেশী শ্রমিকেরা এখন কী ধরনের সমস্যায় ভুগছেন জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা যারা বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করি সেখান থেকে ইচ্ছে করলেই কেউ বেশি বেতনে অন্য কোম্পানিতে যেতে চাইলেও পারবে না। কিন্তু অন্য দেশের শ্রমিকের জন্য এটি প্রযোজ্য নয়। তবে তারা বাংলাদেশ থেকে আসা নারীশ্রমিকদের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি না হয়ে বলেন, ইউএই সরকার নারীশ্রমিকের ভিসা দিচ্ছে অহরহ।
এর আগে গত ১ মার্চ বুধবার জাতীয় সংসদে উত্থাপিত বেগম উম্মে রাজিয়া কাজলের (মহিলা আসন-৪৩) এক লিখিত প্রশ্নের উত্তরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, ‘বাংলাদেশী কর্মী পাঠানোর বিষয়ে গত বছরের ১৭ অক্টোবর সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল ঢাকা সফরকালে দ্বিপীয় শ্রমবাজার উন্মুক্তের বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন। সেই মোতাবেক আশা করা যাচ্ছে, শিগগির দেশটিতে কর্মী প্রেরণ শুরু হবে।’
এ প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে গত সপ্তাহে নয়া দিগন্তকে বলেন, আমিরাতের শ্রমবাজার এখন পর্যন্ত অচলাবস্থার মধ্যেই আছে। তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, মাঝে ওদের অনেক আগ্রহ দেখেছি। ৪-৫ মাস আগে ওরা বাংলাদেশ এসে বৈঠক করে আমাদের সামর্থ্য সম্পর্কে ধারণা নিয়ে যায়। এরপর তারা আমাদের ধারণা দেয়ার চেষ্টা করছিল, বাংলাদেশ ভিজিটের পরই মার্কেটটা খুলে যাবে। তারা ফিরে পজিটিভ রিপোর্টও দিলো। ওই প্রতিবেদনের পর দেশটির লেবার মিনিস্ট্রি, হোম মিনিস্ট্রি ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ প্রতিনিধিদল এসে দেখে গেল। এর পরও মার্কেট না খোলার পেছনে আমি কোনো যুক্তি দেখি না। তিনি বলেন, এ নিয়ে আমাদের অ্যাম্বেসেডর ইমরান সাহেব প্রতিদিন তাদের লেবার মিনিস্টির কর্মকর্তাদের ফোন করে কবে বাজার খুলবে জানতে চাচ্ছেন। উত্তরে তাকে তারা শুধু বলছেন, তোমাদের ম্যানেজমেন্ট অনেক ভালো, টেনিং ক্যাপাসিটিও বেড়েছে। তোমাদের কার্যক্রমে আমরা খুশি। এভাবে শুধু বলে। কিন্তু ফাইনালি কেন আটকে আছে তা তো আর বুঝি না। তার পরও আমরা এখন আশাবাদী, ইনশা আল্লাহ শ্রমবাজারটা খুলে যাবে। পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের চলতি মাসেই ভিজিট করার কথা রয়েছে। আমরা আমাদের অ্যাম্বেসেডরের মাধ্যমে ওই দেশের একটা কিয়ারেন্স চেয়েছি। পাওয়া গেলে এপ্রিল মাসে ভিজিট হতে পারে। মার্কেটটি ২০১২ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে দুই লাখ ৭২ হাজার ৯৭৩ জন শ্রমিক বিদেশে গেছেন। তার মধ্যে আরব আমিরাতে গেছেন মাত্র এক হাজার ৮৩ জন শ্রমিক। তবে সেটি পুরুষ না মহিলা কর্মীÑ সে ব্যাপারে পরিসংখ্যানের কোথাও কিছু উল্লেখ নেই।
এর আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান নয়া দিগন্তকে বলেছেন, শ্রমবাজার খোলার ব্যাপারে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত তারা তো পজিটিভ কথাই বলছেন। দেখা যাক শেষমেশ কী হয়?

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/209412