৪ এপ্রিল ২০১৭, মঙ্গলবার, ১০:২১

বগুড়ায় চালের দাম ৩ বছরে কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা

জনজীবনে নাভিশ^াস

উত্তরাঞ্চলের অন্যতম শস্যভাণ্ডার বগুড়ায় বিগত তিন বছরে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা। জীবনধারণের প্রধান এ খাদ্যের দাম অব্যাহত গতিতে অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধির ফলে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে।
চাল মিল মালিকদের সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া বাজারে ২০১৫ সালে প্রতি কেজি চাল মান অনুযায়ী ২২ থেকে ২৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এর পরের বছর ২০১৬ সালে বিক্রি হয়েছে ৩২ থেকে ৩৪ টাকা কেজি। সেই চাল এ বছরে বিক্রি হচ্ছে ৪১ থেকে ৪২ টাকা কেজি।
মিল মালিকেরা বলছেন, বগুড়ায় এখন কৃষকের গোলায় ধান নেই। তাই ধানের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আমনের মওসুমের শুরুতে প্রতি মণ ধানের দাম ছিল ৬৫০ টাকা। সেই ধানের দাম বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২০ টাকা থেকে শুরু করে এক হাজার ৬০ টাকা মণ। দাম বেশি বলে মিলাররা চাল সরবরাহ করতে গিয়ে বেশি দামেই ধান কিনছেন। বগুড়ার মোকাম বা মিল থেকে মোটা ও চিকন চাল বিক্রি হয়ে থাকে। এখন এই চাল বিক্রি হচ্ছে ৪১ থেকে ৪২ টাকা কেজি। বগুড়ার চালকল মালিকেরা বলছেন, মিল থেকে কোনো দাম বাড়ানো হয়নি। ধানের দামের সাথে তাল মিলিয়ে চালের দাম একটু বেড়েছে। আর সেই বৃদ্ধির ধাক্কায় খোলাবাজারে বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা।
গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ি এলাকার ধানের ব্যবসায়ী আল মামুন জানান, বগুড়ার বাজারে রণজিত জাতের বা মোটা ধান বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৩০ টাকা এবং চিকন ময়নামতি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৬০ টাকা মণ। তবুও ধান মোকামে তেমন আসছে না। আশা করছি, বোরো ধানের সময় আবার ধান কেনাবেচা হবে।
জানা যায়, বাজারে বিআর আটাশ চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৭ টাকা। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে এই চালের দাম প্রতি কেজি ছিল ৪২ থেকে ৪৩ টাকা। আমন-৪৯ চাল প্রতি কেজি ৩৯ থেকে বেড়ে ৪৩ টাকা কেজি, রণজিত ৩৬ থেকে বেড়ে ৪০ টাকা, গুটিস্বর্ণা ৩৬ থেকে বেড়ে ৩৯ টাকা, মিনিকেট ৪৬ থেকে বেড়ে ৫০ টাকা, পাইজাম ৪৭ থেকে বেড়ে ৫০ টাকা, কাটারিভোগ ৪৮ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বগুড়ার চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, চালের মোকামে দাম বেড়েছে। সে কারণে খুচরা বাজারে চালের দাম বেশি।
রাজা বাজারের চাল ব্যবসায়ী ছাবেদ আলী জানান, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে থেকে একটু একটু করে চালের দাম বেড়েছে। প্রতি জাতের চালের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৫ টাকা বেড়েছে কেজিতে। চিকন চালের চেয়ে মোটা চালের দাম বেশি। মোকামগুলোতেই এখন দাম বেশি।
সূত্রাপুর এলাকার বাসিন্দা মনিরা বেগম জানান, গত তিন বছরে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা। এতে আমাদের চার সদস্যের পরিবারে শুধু চালের খরচ বেড়েছে মাসে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। ফলে তিন বেলা মুখে ভাত দেয়াই কঠিন হয়ে পড়েছে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, জেলায় গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে আমন ধান কাটা হয়েছে। এক লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ হেক্টরে আমন ধানের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও প্রায় এক লাখ ৮৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়। এর বিপরীতে চাল আকারে ফলন হয়েছে পাঁচ লাখ ১৬ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন।
এ বছর বগুড়া জেলায় লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ চাল সংগ্রহ করেছে খাদ্য বিভাগ। অভ্যন্তরীণ আমন (চাল) সংগ্রহ অভিযানের মাধ্যমে গত বছরের ১ ডিসম্বের থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত প্রতি কেজি ৩৩ টাকা দরে জেলার সরকারি গুদামে প্রথম দফায় ২২ হাজার ৬৯৬ মেট্রিক টন ও দ্বিতীয় দফায় আরো ২২ হাজার ৮৫ মেট্রিক টন চাল ক্রয় করা হয়।
বগুড়া জেলায় চাল তৈরির জন্য চালকল গড়ে উঠেছে প্রায় তিন হাজার। মিলার মালিকদের সমিতি বগুড়া জেলা অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং বলছে, জেলায় সমিতিভুক্ত হাসকিং মিল রয়েছে এক হাজার ৭০০ আর ধান থেকে চাল তৈরির অটো মেশিন রয়েছে ৪০টি। যার সবগুলোই সরব রয়েছে। সরব থেকে চাল তৈরি করে বাজারে সরবরাহ করছে। পুরোদমে চালু রাখতে প্রতিটি মিলের জন্য দৈনিক ৭০০ থেকে ৮০০ মণ ধানের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই পরিমাণ ধান সংগ্রহ করা যাচ্ছে না।
বগুড়া জেলা অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সভাপতি এ টি এম আমিনুল হক জানান, বগুড়ার মিলাররা ধান পাচ্ছেন না। আবার পাওয়া গেলেও সেই ধান কিনতে হচ্ছে এক হাজার ২০ থেকে এক হাজার ৬০ টাকা মণ। এক মণ ধান থেকে চাল পাওয়া যায় ২৬ কেজি। চাল তৈরির খরচ ও পরিবহন খরচ বাদ দিয়েই মিলের খরচ পড়ছে প্রায় সাড়ে ৪০ টাকা কেজি। এর সাথে চাল তৈরির খরচ ও পরিবহন খরচ যোগ করলে মিলেই দাম পড়বে ৪১ টাকা কেজি। আর বগুড়ার মিলাররা মান অনুযায়ী চাল বিক্রি করছে ৪১ থেকে ৪২ টাকা কেজি। খোলাবাজারে এই চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি। চালের দাম বৃদ্ধির পেছনে ধানের সঙ্কট ও খোলাবাজারকে দায়ী করেন তিনি।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/209342