১৭ জুন ২০২১, বৃহস্পতিবার, ১:১৯

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

করোনা রোগীর চাপে বিপর্যস্ত চিকিৎসাসেবা

ঈদুল ফিতরের দুদিন পর থেকে এক মাসে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উপসর্গ নিয়ে ও করোনাক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩৫৫ জন, গত দুই সপ্তাহে মৃত্যু হয়েছে ১৬০ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৩ জন। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। রামেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, মৃত ১৩ জনের মধ্যে রাজশাহীর আটজন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের চারজন এবং কুষ্টিয়ার একজন রয়েছেন। মৃতদের মধ্যে পাঁচজন রোগী করোনা পজিটিভ ছিলেন। আর আটজন উপসর্গে মারা গেছেন। বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মোট ৩৪৪ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ৪৮ জন। হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মোট বেডের সংখ্যা ২৭১টি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনায় মৃতদের অধিকাংশই চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী জেলার মানুষ। বাকিরা নওগাঁ, নাটোর, পাবনা ও কুষ্টিয়া জেলার। বুধবার দুপুর পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসাধীন করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৫৫ জন। মঙ্গলবার পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিল ৩০৯ জন। বুধবার দুপুর পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে ৪৬ করোনা রোগী। এর মধ্যে রাজশাহীর নতুন ২৬ জন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন নতুন করে। বাকি দুজনের একজন নওগাঁ ও একজন নাটোরের। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, এক মাস ধরে সংক্রমণ ও মৃত্যুহার কোনোভাবেই কমছে না রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। সংক্রমণের গতিও টেনে ধরা যাচ্ছে না। বরং সম্প্রতি নওগাঁ ও নাটোর জেলাতেও দৈনিক মৃত্যু হচ্ছে গড়ে এক থেকে দুজন করে। আর রোগী ভর্তির তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে এখন করোনার সংক্রমণ গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে গোটা রাজশাহী অঞ্চলের জনজীবন করোনায় বিপর্যস্ত। রোগীর চাপে আমরা হাসপাতালে অব্যাহতভাবে করোনা বেড বাড়িয়ে চলেছি। রাজশাহী মেডিকেলে করোনাক্রান্তদের চিকিৎসা পরিষেবা নিশ্চিতে আরও ৫০ জন অতিরিক্ত চিকিৎসক ছাড়াও নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী চাওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের কাছে। রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আগামী রোববার নাগাদ অতিরিক্ত ২৫ জন চিকিৎসক রাজশাহী মেডিকেলে সাময়িকভাবে যোগদান করবেন। দেওয়া হবে আরও ৮০ জন স্বাস্থ্যকর্মী। রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার বলেন, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করার কারণেই সংক্রমণের গতি কমছে না। বড় সমস্যা হচ্ছে লোকজন মাস্ক পরছেন না। চলমান লকডাউনেও মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রতি চরম অনীহা দেখা গেছে। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার বলেছেন, রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালের ওপর ভীষণ চাপ পড়েছে। এ কারণে আমরা জেলা সদর হাসপাতালগুলোতে করোনা চিকিৎসার সুবিধা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি। এতে যদি রামেক হাসপাতালের ওপর চাপ কিছু কমে।

রাজশাহী মহানগরীতে লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়ল : রাজশাহী মহানগরীতে সর্বাত্মক লকডাউনের সময়সীমা আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে ২৪ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় সার্কিট হাউসে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভায় সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক, জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল, জেলার সিভিল সার্জন ডা. কাইয়ুম তালুকদার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হক প্রমুখ অংশ নেন। সভা শেষে সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, পাড়া-মহল্লায় বাড়িতে বাড়িতে এখন করোনা রোগী। প্রথমে সাতদিন লকডাউন দিয়েও আশাব্যঞ্জক কোনো উন্নতি হয়নি। তাই আরও সাতদিন লকডাউন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২৪ জুন পর্যন্ত রাজশাহী মহানগর লকডাউন থাকবে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/432381/