১৭ জুন ২০২১, বৃহস্পতিবার, ১:১৭

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন

এসপির নেতৃত্বে সাজানো মামলার সিন্ডিকেট!

মানব পাচার ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ৬টিসহ ৯টি ভুয়া মামলার নেপথ্যে এসপি আব্দুল্লাহ আরেফ

ডিআইজি পরিচয় দিয়ে নতুন প্রতারণায় নেমেছেন নৌপুলিশের বিতর্কিত এসপি আব্দুল্লাহ আরেফ। বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের সদস্য হিসাবে ২০ বছর পূর্ণ করায় সম্প্রতি তিনি র‌্যাংক ব্যাজের আরও একটি পিপস পেয়েছেন। এটি দৃশ্যমান পোশাকি অতিরিক্ত ডিআইজির র‌্যাংক ব্যাজ। কিন্তু পদোন্নতি নয়। প্রকৃতপক্ষে পদে তিনি এখনো এসপি। আছেন নৌপুলিশে। ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র কর্মকর্তাদের দিয়ে সেই র‌্যাংক ব্যাজ পরানোর ছবি তুলে বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছেন।

এর আগে তার বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে গরিব কৃষকের জমি রেজিস্ট্রি, অর্থ আত্মসাৎ ও তথ্য পাচারের মতো গুরুতর অভিযোগের সত্যতা পায় পুলিশ সদর দপ্তর। এভাবে প্রতারণার টাকায় গুলশানের মতো অভিজাত এলাকায় কিনেছেন ফ্ল্যাটও। এবার তিনি ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গড়ে তুলেছেন মানব পাচারসহ সাজানো মামলার সিন্ডিকেট।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দুটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এমনকি এবার স্ত্রী ফারজানা আবেদীনকেও নামিয়েছেন প্রতারণার ব্যবসায়। তাকে মতিঝিলে ড্রিম হ্যাভেন হাউজিং লিমিটেড নামে একটি আবাসন কোম্পানির পরিচালকও করেছেন। এরপর জমিসংক্রান্ত বিষয়ে অযৌক্তিক প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেন কোম্পানির চেয়ারম্যানকে। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তিনি।

যুগান্তরের তথ্যানুসন্ধানে একই অভিযোগে দায়ের হওয়া আরও কয়েকটি মামলার নথিপত্র পাওয়া গেছে। এসব মামলার পেছনের কাহিনি অনুসন্ধান করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, এসপি আব্দুল্লাহ আরেফের বিরুদ্ধে উত্থাপিত এসব অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তদন্তে প্রমাণিত হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নৌপুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে জবাবদিহিতা আছে। ব্যক্তির অপরাধের দায় ডিপার্টমেন্ট নেবে না। ব্যক্তিগত দায় ব্যক্তির।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ডিআইজি বললেই হওয়া যায় না। চাকরির ২০ বছর পূর্তিতে তিনি একটি পিপস পেয়েছেন। এটা অতিরিক্ত ডিআইজির পদোন্নতি নয়। তিনি ফরিদপুর নৌপুলিশের এসপি পদে আছেন। তবে আমরা এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি।’

প্রসঙ্গত, ভুয়া মামলা ঠেকাতে যুগান্তকারী আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। মামলার এজাহারে বাদীর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর উল্লেখ করতে আদেশ দেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। ভুয়া বাদীর মামলা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সোমবার রুলসহ এ আদেশ দেন। সংশ্লিষ্ট বিচারিক হাকিম বা সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের এখন থেকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতেও বলা হয়েছে। এছাড়া পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) ৪৯টি মামলা তদন্ত করে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে ইনডেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল্লাহ আল মুনিরের বড় ভাই আব্দুল্লাহ আল হারুনও এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। শফিউল্লাহ আল মুনিরের বিরুদ্ধে ৫টি মানব পাচারসহ ৭টি মামলা করিয়েছেন আব্দুল্লাহ আরেফ। রমনা থানায় দায়ের করা একটি মামলায় রিমান্ডে নিতে প্রভাব বিস্তারও করেছেন তিনি। এমনকি গভীর রাতে সংশ্লিষ্ট থানায় জিজ্ঞাসাবাদের সময় উপস্থিত থেকে ভয়ভীতিও দেখিয়েছেন।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দেওয়া আব্দুল্লাহ আল হারুনের অভিযোগের এক স্থানে বলা হয়, একটি প্রভাবশালী মহলের তদবিরে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে শফিউল্লাহ আল মুনিরকে কারাগারে আটক রাখা হচ্ছে। বাদীরা মামলা দায়ের করতে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করেছেন। বাস্তবে তাদের কোনো অস্তিত্ব নেই। আবদুল্লাহ আরেফ নামে এক ব্যক্তি এই মামলাগুলো করাচ্ছেন।

এই অভিযোগের সূত্র ধরে কয়েকটি মামলা অনুসন্ধান করা হয়। এ সময় জানা যায়, চলমান এই মামলা প্রক্রিয়ার মধ্যেই আকস্মিকভাবে মানব পাচারের অভিযোগে দায়ের করা মামলাগুলো আপস-নিষ্পত্তি করতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এগিয়ে আসেন আব্দুল্লাহ আরেফ। তিনি মুনিরের নিকটাত্মীয়দের গুলশানের একটি অভিজাত হোটেলে ডেকে নিয়ে টাকার বিনিময়ে মামলাগুলো আপস-নিষ্পত্তি করার প্রস্তাবও দেন। বাস্তবে বাদী ভুয়া।

একমাত্র আব্দুল্লাহ আরেফই একাধিক বাদীকে গুলশানের একটি হোটেলে ডেকে এনে শফিউল্লাহ আল মুনিরের ঘনিষ্ঠজনদের সামনাসামনি কথা বলার ব্যবস্থা করেন। এ বিষয়ে বেশ কয়েক দফায় ০১৭১৬৮৮০৭৬১ নম্বর থেকে ফোনও করেন আব্দুল্লাহ আরেফ। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, নম্বরটি আব্দুল্লাহ আরেফ নিজেই ব্যবহার করছেন। এই সাজানো মামলা সিন্ডিকেটে আরও কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার নাম এসেছে।

আবাসন ব্যবসায়ীর সর্বনাশ : আব্দুল্লাহ আরেফ এসপি হওয়া সত্ত্বে¡ও নিজেকে ডিআইজি পরিচয় দিয়ে রাজধানীর পূর্ব জুরাইনের বাসিন্দা ড্রিন হ্যাভেন হাউজিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। এরপরই মতিঝিলের টিকাটুলিতে হাউজিংয়ের অফিসে আসা-যাওয়ার এক পর্যায়ে প্লট বিক্রি ও মার্কেটিং করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। সরল বিশ্বাসে তাকে সুযোগ করে দেন। এভাবে একদিন তার স্ত্রী ফারজানা আবেদীনকে প্রকৌশলী হিসাবে পরিচয় করে দেন। এরপর কোম্পানির উন্নয়ন পরিচালক পদে নিয়োগের একটি চিঠিও ইস্যু করে নেন।

এর কিছুদিনের মধ্যেই গভীর ষড়যন্ত্র শুরু করে। গুলশানে করপোরেট অফিস খোলার কথা বলে ২৪ জানুয়ারি চাপ সৃষ্টি করে যমুনা ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে চেকের মাধ্যমে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা তুলে নেন। ফারজানা আবেদীন গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কোম্পানির নিজস্ব প্যাডে অফিস পরিচালনার জন্য শর্তসাপেক্ষে কিছু সুবিধা নেন। ১০ জানুয়ারি জোর করে ১০ লাখ টাকার মানি রিসিটও নিয়ে যান আব্দুল্লাহ আরেফ। প্লট বিক্রির সুবিধার্থে অফিস কক্ষের জন্য এসি, কম্পিউটারসহ প্রায় দুই লাখ টাকা আসবাবপত্রও কেনেন। প্রতারণার মাধ্যমে বিয়েবার্ষিকী উপলক্ষে পরিবারের সবার জন্য জারা ফ্যাশন হাউজ থেকে ৬৮ হাজার টাকার পোশাকও ভাগিয়ে নেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

৭ জানুয়ারি ছেলেমেয়ের স্কুলের বেতন দেওয়ার কথা বলে নিয়েছেন ৯৭ হাজার টাকা। এ সময় তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে একটি টিভিও কিনে নিয়ে যান। করপোরেট অফিস ভাড়া দেওয়ার কোনো কথা ছিল না। তারপরও ভয়ভীতি দেখিয়ে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে গেছেন আব্দুল্লাহ আরেফ। ওই করপোরেট অফিস থেকে ১১টি প্লট বুকিং হয়। ওই প্লট বুকিং বাবদ গ্রাহকের কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা আদায় করা হলেও একটি টাকাও কোম্পানিকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।

সর্বশেষ গত ১ জুন লেনদেন সংক্রান্ত জরুরি কথা বলে তার গুলশানের বাসায় মোহাম্মদ আলীকে ডেকে নেন আব্দুল্লাহ আরেফ। সেখানে অযৌক্তিক কিছু প্রস্তাব দেন। তার এই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেন বলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দেওয়া অভিযোগে উল্লেখ করেছেন। এমনকি মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়। পরদিন সকালেই ওয়ারী থানায় মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে মামলা হয়। সেখানে আনোয়ার নামে একজনকে বাদী করা হয়েছে।

মামলার নথিপত্র ঘেঁটে জানা যায়, বাদী আনোয়ার হোসেনের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে পশ্চিম কাফরুলের ২২৪/১ রোকেয়া সরণি। এজাহারে দেওয়া মোবাইল (০১৭১১৩৩৪৯১৫) নম্বর সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায়, নম্বরটি গত চার মাস ধরে বন্ধ আছে। রোকেয়া সরণির ওই ঠিকানায় গিয়ে আনোয়ার নামে কাউকে পাওয়া যায়নি। ভুয়া ঠিকানা ও মোবাইল নম্বরে কীভাবে মামলা দায়ের করা হলো জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, এসপি আব্দুল্লাহ আরেফ নিজেই এই মামলা নিয়ে এসেছিলেন। সিনিয়র একজন পুলিশ কর্মকর্তা এমন মিথ্যা মামলার জন্য সুপারিশ করবেন বুঝতেই পারিনি।

মামলার নমুনা : শিক্ষক জেড এম রানা মিরপুরে এভেরুশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। এই স্কুলটির আর্থিক হিসাব-নিকাশ নিয়ে আনিসুর রহমান সোহাগ নামে আরেক উদ্যোক্তার সঙ্গে তার বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নেয়। এক পর্যায়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় দায়ের করা টাকা আত্মসাতের মামলা রেকর্ড হওয়ার ৩ ঘণ্টার মধ্যেই তাকে গ্রেফতার করা হয়।

এরপর এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে রাজধানীর দুটি থানায় মানব পাচার ধারায় দুটি মামলা করা হয়। চাঞ্চল্যকর বিষয় হচ্ছে-এই দুটি মামলায় যে দুজনকে বাদী করা হয়েছে তাদের মধ্যে একজন এজাহারে ঘটনার যে সময় ও তারিখ উল্লেখ করেছেন তখন তিনি নিজেই মাদকের একটি মামলায় কারাগারে ছিলেন। আর অপরজন হলফনামা দিয়ে বলেছেন, সম্পূর্ণ ঘটনাই মিথ্যা। চাকরির প্রলোভনে তাকে দিয়ে এই মিথ্যা মামলা করানো হয়েছে। অথচ তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন উল্লেখ করে আদালতে আবেদন করে শিক্ষক রানাকে রিমান্ডেও নিয়েছেন।

হলফনামা দিয়ে সত্য প্রকাশ : শেরেবাংলা নগর থানার মামলা নম্বর-১৬। ২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সোহেল আকনকে বাদী করে শিক্ষক রানার বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়। মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ হচ্ছে, সোহেল আকনকে ইতালি পাঠানোর কথা বলে ১২ লাখ টাকার চুক্তি করেন জেএম রানা। চুক্তি অনুযায়ী ৮ লাখ টাকাও পরিশোধ দেখানো হয়। ইতালিতে গিয়ে ৪ লাখ টাকা পরিশোধের বিষয়টি সাজানো হয়েছে। এভাবে চুক্তি অনুযায়ী কাজ না হওয়ায় মামলাটি দায়ের করেছেন। এই মামলায় রানাকে রিমান্ডেও নেয় শেরেবাংলা নগর থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাহেরা খানম।

এদিকে গত ৩১ জানুয়ারি সোহেল আকন নোটারি পাবলিকের সাহায্যে হলফনামা দিয়ে প্রকৃত সত্য প্রকাশ করেন। স্কুল নিয়ে বিরোধের মূল হোতা আনিসুর রহমানের শ্যালক সোহেল হাওলাদার চাকরির প্রলোভন দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ সাজিয়ে রানার বিরুদ্ধে মামলাটি করার কথা প্রকাশ করেন। মামলায় পশ্চিম আগারগাঁওয়ের যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছে সেটিও মিথ্যা।

এজাহারে যে মোবাইল নম্বরটি দেওয়া হয়েছে সেটিও সঠিক নয়। হলফনামার এক স্থানে বলা হয়, ‘ঘটনা সাজাতে ইতালি পাঠানোর কথা বলে স্বাক্ষর জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া চুক্তিপত্র দিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। আসলে চাকরির প্রলোভনে পড়ে আরিফুর রহমান সাগর আমাকে দিয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় নিয়ে এই মামলাটি দায়ের করেন। এরপর আমি জানতে পারি ব্যবসায়িক শত্রুতার কারণে আমাকে দিয়ে আনিসুর রহমান সোহাগ মামলাটি করিয়েছেন। এই মামলায় জেডএম রানা এক মাস কারাগারেও ছিলেন। তাকে রিমান্ডেও আনা হয়। রানার সঙ্গে তার পরিচয়ও নেই। বিবেকের তাড়নায় হলফনামা দিয়ে এই সত্য প্রকাশের কথা বলেন সোহেল।

তখন বাদীই জেলে : সোহেল আকনকে বাদী করে দায়ের করা মামলার ৭ দিন পরই হাতিরঝিল থানায় আরেকটি মামলা করা হয় ২০২০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর। মামলা নং-২৭। এই মামলার বাদীর নাম সাইফুল ইসলাম। যিনি ঘটনার মূল হোতা আনিসুর রহমান সোহাগের আরেক শ্যালক সৈয়দ মামুনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। দায়েরকৃত এই মামলার অভিযোগ ও বিষয়বস্তু শেরেবাংলা নগর থানার মামলার মতোই। এজাহারে বলা হয়, বাদী নিজে পর্তুগাল যাওয়ার জন্য জেডএম রানার সঙ্গে ১২ লাখ টাকার চুক্তি করেন। এর মধ্যে ৭ লাখ টাকা নগদ পরিশোধ করেন। বাকি ৫ লাখ টাকা পর্তুগাল পৌঁছে পরিশোধ করবেন।

এই মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে শেরেবাংলা নগর থানার বাদী সোহেল আকনের চাচাতো ভাই মামুন আকনকে। এই মামুন আকন যুগান্তরকে জানান, তাকে না জানিয়ে মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে। আরও বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে-২০২০ সালের ৩০ জুন যে তারিখ দিয়ে টাকা লেনদেনের কথা বলা হয়েছে ওইদিন বাদী সাইফুল ইসলাম মাদকের মামলায় বরিশাল কারাগারে ছিলেন। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সচিব সোলায়মান মিয়া জানান, ‘৩৫৭, মধুবাগ নামে এ এলাকায় কোনো হোল্ডিং বা ঠিকানাই নেই।’ এই মামলা দায়ের করতে গিয়ে এ রকম ভুয়া ঠিকানাও ব্যবহার করা হয়েছে।

সন্দেহের তালিকায় যারা : কদমতলী থানার ওসি জালাল উদ্দিন মীরের আপন ভাই আরিফুল হাসান মীর সাগর। তিনি লালমাটিয়ার এভেরুশ স্কুলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তিনিই প্রথম মোহাম্মদপুর থানায় মালিকানা বিরোধকে আড়াল করে রানার বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের মামলা করেন। কোনোরকম তদন্ত ছাড়া ৫ ঘণ্টার মধ্যে রানাকে এই মামলায় গ্রেফতার করা হয়। পরদিন রিমান্ডের আবেদনও করা হয়। সেখানে আমার কোনো বক্তব্যই শোনেনি পুলিশ। তদবির ছাড়া কিছুতেই এত দ্রুত গ্রেফতার করা হয়নি।

এ বিষয়ে অভিযোগ করে জেডএম রানা যুগান্তরকে বলেন, হাতিরঝিল থানার বাদী সাইফুল ইসলামের মামলাটি যদি তদন্তকারী কর্মকর্তা বিন্দুমাত্র তদন্ত করতেন তাহলে সব সত্য বের হয়ে আসত। আরিফুল হাসান সাগরের দায়ের করা মামলায় জেলে থাকাবস্থায় মানব পাচারের দুটি মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর কারণে জামিন পেতে অনেক সময় চলে যায়। এরপর জেল থেকে বের হয়ে পুলিশের আইজি ও ডিএমপি কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করি। বর্তমানে এই মামলা ডিবিতে তদন্তাধীন।

এক প্রশ্নের জবাবে রানা বলেন, ‘জেল থেকে বের হয়ে হাতিরঝিল থানার ওসি (তদন্ত) মহিউদ্দিনের সঙ্গে থানায় সাক্ষাৎ করে মামলাটি যে মিথ্যা সে বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু তিনি আমাকে দেখেই তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন। এ সংক্রান্ত কাগজপত্র তো দিতে পারিইনি বরং উলটো আমাকে মহিউদ্দিন বলেন, এভেরুশ স্কুলের টাকা কেন আমি ফেরত দিচ্ছি না। তার এ কথায় আমার আর বুঝতে বাকি নেই কোথা থেকে কী হচ্ছে!’ আমাকে স্কুলের অংশীদার থেকে বিতাড়িত করতেই সাজানো অর্থ আত্মসাতের মামলাটি করা হয়। এ বিষয়ে মামলাও করেছি।’

অভিযোগের বিষয়ে আব্দুল্লাহ আরেফের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। তার দুটি মুঠোফোন নম্বরে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে মেসেজ দেওয়া হলেও কোনো জবাব দেননি।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/432377/