বরগুনার বেতাগীর ৯৯নং ঝিলবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গরু-ছাগলের দখলে।
১৪ জুন ২০২১, সোমবার, ৩:৩১

সরেজমিন চট্টগ্রাম বিভাগ

স্কুলের জায়গা দখল করে স্থাপনা

করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম বিভাগের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর করুণ দশা। এই সময়ে অনেক প্রতিষ্ঠানের জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। স্থানীয়রা ভবন কিংবা মাঠ নিজেদের বাসা-বাড়ির মতো ব্যবহার করছেন। মাঠকে ফসল মাড়াইয়ের উঠান বানিয়েছেন কেউ। ভাড়া নিয়ে নির্মাণসামগ্রী রেখেছেন কেউ। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের মাঠে অনেক দিন ধরে বৃষ্টির পানি জমে আছে। প্রতিষ্ঠানের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করায় এমনটা হয়েছে। অনেক বিদ্যালয়ের দরজা-জানালা ভেঙে গেছে; শ্রেণিকক্ষে জাল বুনেছে মাকড়সা। বেঞ্চ, টেবিল, চেয়ারে পড়েছে ধুলার আস্তরণ। মাঠে, আঙ্গিনায় ঝোপ-ঝাড়, লতাপাতা জন্মে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান পরিত্যক্ত বলে মনে হচ্ছে। এদিকে করোনায় চট্টগ্রাম বিভাগের অসংখ্য কিন্ডারগার্টেন বন্ধ থাকায় কয়েক লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।

ব্যুরো, স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিরা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার শাহজাদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ দুই মাস ধরে পানি জমে আছে। নাসিরনগর উপজেলার আশুতোষ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের চারপাশ দখল করে রেখেছে অবৈধ দখলদাররা। সামান্য বৃষ্টি হলেই মাঠে হাঁটুপানি জমে। সম্প্রতি কিছু দখলদার মাঠের জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণ করায় পানি নিষ্কাশনের কালভার্টের মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পানি বের হতে পারে না। সীমান্তবর্তী আখাউড়া উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অনেকে অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। কেউ কেউ শিক্ষা থেকে ছিটকে পড়ে ওয়ার্কশপ, মটর মেকানিক্যাল, দর্জি কিংবা ভাঙাড়ি কুড়িয়ে বিক্রি করছে। উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়ন, মোগড়া ইউনিয়ন, মনিয়ন্দ ইউনিয়ন, ধরখার ইউনিয়নের একাধিক মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দরজা-জানালা ভেঙে গেছে। শ্রেণিকক্ষে মাকড়সা জাল বুনেছে। বেঞ্চগুলোতে পড়েছে ধুলাবালুর আস্তরণ। আশুগঞ্জ উপজেলার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দরজা, জানালা বেঞ্চ ভেঙে গেছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা কিন্ডারগার্টেনগুলোর।

কুমিল্লা জেলার তিতাস উপজেলার রতনপুর ভূঁইয়া বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ধানের খড় ও তিল গাছের স্তূপ দেখা গেছে। মাঠে প্লাস্টিকের পলিথিন বিছিয়ে মাড়াই করা হচ্ছে তিল। রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চারপাশে জঙ্গলের সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গল কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে লাকড়ি শুকানো হয়। ৫৬নং খলিলাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় দেখা গেছে লাকড়ির স্তূপ। রঘুনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায়ও লাকড়ি রাখা হয়েছে। কাদির ভূইয়া মেমোরিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভেতরে নতুন ভবন নির্মাণের রড, সিমেন্ট রাখা হয়েছে। শ্রেণিকক্ষে বসবাস করছেন নির্মাণ শ্রমিকরা। দাউদকান্দি উপজেলার দাউদকান্দি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ একাধিক ইউনিয়নের স্কুলগুলোর দরজা-জানালায় মাকড়সার জাল আর বেঞ্চগুলোতে পড়েছে ধুলাবালুর আস্তরণ।

বুড়িচং উপজেলার গণেশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে খড়ের আঁটি রাখা হয়েছে। দয়ারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের আঙ্গিনা জঙ্গলে পরিণতি হয়েছে। শাহদৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভেতর রাখা হয়েছে লাকড়ি। হোমনা উপজেলার হোমনা সরকারি ডিগ্রি কলেজে সকাল-সন্ধ্যা বহিরাগত বখাটেরা গ্রুপে গ্রুপে ভাগ হয়ে আড্ডা বসায়। পৌরসভার বাহের খোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বসে জুয়ার আসর। গোয়ারীভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে গরু-ছাগল চরানো হয়।

চট্টগ্রাম নগরী ও জেলার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থা নাজুক। শ্রেণিকক্ষের বেঞ্চ, চেয়ার-টেবিলে ধুলার আস্তরণ। জানালা-দরজায় মাকড়সা জাল বুনেছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের মাঠে রাখা হয়েছে নির্মাণসামগ্রী। বাঁশখালী উপজেলার শীলকূপ ইউনিয়নের ৮০ নং পশ্চিম মনকিচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের নিচে ও খেলার মাঠে নির্মাণসামগ্রী দেখা গেছে। পশ্চিম চাম্বল ডেপুটি ঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জেলেরা মাছ ধরার জাল রেখেছেন। কেউ কেউ জাল বুননের কাজ করছেন। মনকিচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে ভাঙা বেঞ্চগুলো এলোমেলো পড়ে আছে।

বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার আজিজনগর চাম্বি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের মেইন গেটের সামনে ঠিকাদাররা নির্মাণসামগ্রী রেখেছন। সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতেই চোখে পড়বে মাটি, কংকর এবং বালুর স্তূপ। বিদ্যালয়ের মাঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় লামার অনেক প্রতিষ্ঠানের আঙিনা বখাটেদের নিরাপদ আস্তানায় পরিণত হয়েছে। অধিকাংশ স্কুলের আঙ্গিনা নোংরা আবর্জনায় ভরা। জেলার অন্যান্য উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থাও বেহাল। ফেনী জেলার সোনাগাজী সদর ইউনিয়নের ছাড়াইতকান্দি হোছাইনিয়া দাখিল মাদ্রাসার মাঠটি একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভাড়া নিয়ে নির্মাণসামগ্রী রেখে দখলে রেখেছে। এর ফলে মাঠে বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের মাঠে বা আঙ্গিনায় রাখা হয়েছে ইট-বালু, খোয়া। ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৭৪ নং চরমথুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ কয়েকদিনের বৃষ্টিতে পানি জমে আছে। মাঠ ভরে গেছে কচুপাতাসহ বিভিন্ন লতাপাতায়।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/431190/