১৩ জুন ২০২১, রবিবার, ২:৪১

সুদ পরিশোধের চাপও ক্রমাগত বাড়ছে

সরকার ক্রমাগত ঋণে জড়িয়ে পড়ছে। পরোক্ষভাবে ঋণের জালে আটকে পড়ছে দেশের জনগন। এতে করে ঋণের সুদ পরিশোধের দায়ও ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। সরকার বলছে সহজেই ঋণ এবং ধার পাওয়া যাচ্ছে। আর এ কারণে বড় ঘাটতি বাজেট তৈরিতে সরকার সক্ষমতা দেখাচ্ছেন। ফলে ঋণের সুদ পরিশোধের চাপও বাড়ছে। যার দায়ভার চাপছে জনগণের ঘাড়ে।

করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের রপ্তানি কমে যাওয়া, রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার কারণে সরকারের আয় বহুলাংশে কমে গেছে। এদিকে করোনা মোকাবিলা এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে ফলে ঋণের সুদ পরিশোধের চাপও বাড়ছে।

সরকার বড় বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে মোটা দাগে ঋণ গ্রহণ করছে। এবারেও বাজেটে শুধু দেশি ঋণ পরিশোধে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬২ হাজার কোটি টাকা। আর বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬,৫৮৯ কোটি টাকা। ঋণ পরিশোধে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। যা মূল বাজেটের ১১.৪ শতাংশ। আসলসহ এ টাকার পরিমাণ কয়েক গুণ।

সরকার এখন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে দেশের রির্জাভ থেকে টাকা বিনিয়োগ করছে। এতে করে জনগনের সঞ্চয় কমছে। বিনিয়োগ ঝুকিতেও পড়ছে। অন্যদিকে দেশের জনগণের ঘাড়ে ঋণের বোঝাও বাড়ছে। দেশে যত উন্নয়ন হচ্ছে ঋণ ততো বাড়ছে। যা সাধারণ মানুষকে ভাবিয়ে তুলছে।

এ অবস্থায় আগামী তিন অর্থ বছরে ঋণের সুদ পরিশোধ করতেই প্রয়োজন হবে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকার মত। অর্থ বিভাগের প্রকাশিত মধ্য মেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।অর্থ বিভাগের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধেই প্রয়োজন হবে ২ লাখ ৫ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। বাকি সুদ ব্যয় করা হবে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য।
আর্থিক বিৃবতিতে বলা হয়েছে, আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে ৬৮ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। তার পরের দুই অর্থবছর অর্থাৎ ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৭৭ হাজার ৫৫ কোটি ও ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে এখাতে ব্যয় হবে ৮৮ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। এর মধ্যে তিন বছরে শুধু অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৬২ হাজার কোটি, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৬৯ হাজার ৮০০ কোটি এবং ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৭১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা।

অর্থায়নের ব্যয় বিষয়ে নীতি বিবৃতি বলা হয়েছে, মোট অর্থায়নের একটি বড় অংশ বাইরের উৎস থেকে রেয়াতি সুবিধা সম্পূর্ণ ঋণ হিসেবে পাওয়ায় সরকার অতীতে সামগ্রিক অর্থায়ন ব্যয় তুলনামূলকভাবে কমিয়ে রাখতে পেরেছে। বিগত পাঁচ বছরে (২০১৫-২০১৬ হতে ২০১৯-২০২০ অর্থবছর) বহিঃঅর্থায়নের বিপরীতে সুদ বাবদ ব্যয় ছিল সরকারি ব্যয়ের শূণ্য দশমিক ৯ শতাংশ এবং বহিঃঅর্থায়নের বিপরীতে অন্তনির্হিত সুদ হার ছিল গড়ে মাত্র এক দশমিক ১ শতাংশ।

এতে বলা হয়েছে, বাইরের উৎস থেকে ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া বহিঃঋণের বিপরীতে সুদ বাবদ ব্যয় সামান্য বেড়েছে। অন্যদিকে, যেহেতু নিকট অতীতে সরকার প্রায়শই ব্যয়বহুল ব্যাংক বহির্ভূত উৎস থেকে ঋণ নিয়ে অর্থায়নের চাহিদা মেটাতে হয়েছে, তাই অভ্যন্তরীণ ঋণের বিপরীতে পরিশোধিত সুদ সরকারের মোট সুদ ব্যয়ের প্রধানতম অংশ ছিল। বিগত পাঁচ বছরে অভ্যন্তরীণ ঋণের বিপরীতে সুদ বাবদ গড় ব্যয় ছিল বাজেট ব্যয়ের ১২ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং গড় অন্তর্নিহিত সুদ হার ছিল মাত্র ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ।

এদিকে, আট বছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় ৭ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত বছরগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় প্রতিবছর সরকারের সুদ ব্যয় বেড়েই চলেছে। চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে সুদখাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৩ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। মূল বাজেটে যা ছিল ৬৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা। সুদ ব্যয়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সুদখাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় ধরা আছে ৫ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা।

একইভাবে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সুদখাতে ব্যয় করা হয়েছে ৫৭ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণখাতে সুদ ব্যয় হয়েছে ৫২ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা। বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ৪ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। এর আগের ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণখাতে সুদ ব্যয় ছিল ৪৫ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। বিদেশি সুদ ব্যয় ৩ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ সুদ ব্যয় ৩৮ হাজার ১৬০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা।

একইভাবে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে এই ব্যয় যথাক্রমে ৩৮ হাজার ২৪০ কোটি টাকা এবং এক হাজার ৭১১ কোটি টাকা। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ৩০ হাজার ৪৪ কোটি টাকা ও এক হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ সুদ ব্যয় ছিল ২৯ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা।

সরকার বলছে,আমাদের জাতীয় সম্পদ যে পরিমান আছে এবং মাথা পিছু আয় যা রয়েছে তাতে ঋণ গ্রহণে কোন সমস্যা নেই। আর আমাদের অর্থনীতির অবস্থা ভালো হওয়ার কারণেই দাতারা আমাদের ঋণ দিচ্ছে। একইভাবে ঋণের সুদ পরিশোধের রেকর্ডও ভালো। অর্থনীতিতে পিছিয়ে রয়েছে এমন অনেক দেশই আমাদের চেয়ে অনেক বেশি ঋণ নিচ্ছে। আমাদের অর্থনীতির গতি প্রকৃতি ভালো হওয়ার কারণেই আমাদের দাতার ধারও দিচ্ছে। যা উন্নয়নে সহায়তা করছে। আর এতে করে বিনিয়োগও বাড়ছে। যার ফলে দেশে ব্যাপক হারে কর্মসংস্থানও হচ্ছে।