৪ এপ্রিল ২০১৭, মঙ্গলবার, ১০:১৪

সিবিএ গিলে খাচ্ছে বিমান

কথায় আছে, বিমান (বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস) চালায় নাকি সিবিএ। একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার নয় বিষয়টি। যুগের পর যুগ একই চিত্র। সরকারপক্ষের ‘কার্ড’ দেখিয়ে চলছে এ অনাচার। সরকার বদলে গেলেও দাপট কমে না সিবিএ নামের সিন্ডিকেটটির। নতুন ক্ষমতাসীনদের পক্ষে নাম লিখিয়ে রাতারাতি ভোল পাল্টে ফেলেন নেতারা। তারপর চলে সেই বাধাহীন অপকর্ম। সিবিএ নেতারাই প্রেসক্রিপশন ঠিক করে দেন কিভাবে চলবে বাংলাদেশের পতাকাবাহী সংস্থাটি। বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও চলতে হয় তাঁদের কথামতো। সামান্য স্বার্থহানির ঘটনা ঘটলেই নেতারা বসে যান ধর্মঘটে। বিমানকে লাভজনক করতে সরকার নানা কৌশল হাতে নিলেও দুর্নীতিবাজ সিবিএ নেতাদের কারণে কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না।

বছরের পর বছর বিমান লোকসান গুনে যাচ্ছে অথচ সিবিএ নেতাদের কোটিপতি হওয়া থেমে নেই। নিয়োগ-বদলিতে অযাচিত হস্তক্ষেপ তো আছেই, শ্রমিক কর্মচারীদের ওভারটাইম নিয়েও চলছে অরাজকতা। অভিযোগ আছে, ওভারটাইমের টাকা তুলতেও শ্রমিক নেতাদের দিতে হয় ঘুষ। একজন কর্মচারীর গড়ে প্রতি ঘণ্টার বেতন ৮০ টাকা হলেও তিনি ওভারটাইম পান ১৬০ টাকারও বেশি। এ কারণে বেশির ভাগ কর্মচারী দিনের নির্ধারিত কাজের চেয়ে ওভারটাইম পেতে বেশি আগ্রহী। আর এর ব্যবস্থা করে দেন সিবিএ নেতারা। ২০১৪ সালে বিমানের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেভিন স্টিলের দেওয়া স্বেচ্ছাচারী ১৭ সিবিএ নেতার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারেনি দুদক।
কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে জানা গেছে, সম্প্রতি কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মানুষ ও মুদ্রা পাচারের অভিযোগে বিমানের ট্রাফিক হেলপার আবদুল জলিলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেন একজন উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম)। এরপর ট্রাফিক হেলপার মাসুম বিল্লাহর নেতৃত্বে ওই ডিজিএমকে মারধর করেন সিবিএ নেতারা। এর বিচার দাবি করে গত ৫ মার্চ মোসাদ্দিক আহম্মেদের কাছে নালিশ জানান ওই কর্মকর্তা। মাসুম বিল্লাহ বিমানের ট্রাফিক বিভাগের সিবিএ সভাপতি। এর আগেও তিনি আরেক কর্মকর্তাকে পিটিয়েছিলেন তাঁর এক আত্মীয়কে ফ্লাইটের সামনের সারিতে বসার ব্যবস্থা না করে দেওয়ায়। এ নিয়ে তদন্ত কমিটিও হয়েছিল। কমিটি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করেছিল। কিন্তু সিবিএর দাপটে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
ট্রাফিক হেলপার আবদুল জলিল দীর্ঘদিন ধরে মানব ও মুদ্রাপাচারে জড়িত বলে অভিযোগ আছে। তাঁর বিরুদ্ধে শাহজালালের কয়েকটি সংস্থা প্রতিবেদন দেয়। এর আলোকে বিমান কর্তৃপক্ষ তাঁকে বদলির সিদ্ধান্ত নেয়। এ-সংক্রান্ত ফাইল ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ হয়ে ট্রাফিক বিভাগের এক উপমহাব্যবস্থাপকের কাছে আসে। কিন্তু ২৩ ফেব্রুয়ারি বিমানের সিবিএ সভাপতি মশিকুর রহমান ওই কর্মকর্তাকে টেলিফোনে জলিলের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। এতে রাজি না হওয়ায় ২৪ ফেব্রুয়ারি মাসুম বিল্লাহের নেতৃত্বে চার-পাঁচজন সিবিএ নেতা ওই কর্মকর্তাকে মারধর করেন এবং সংশ্লিষ্ট ফাইলটি ছিঁড়ে ফেলেন। বিষয়টি বিমানের সিকিউরিটি শাখার লগ বইয়ে এন্ট্রি করা হলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একাধিক সক্রিয় সিন্ডিকেট বাংলাদেশ বিমানকে লোকসানের দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। লোক নিয়োগ ও কেনাকাটায় দুর্নীতি, ই-টিকিটে কারসাজি, শিডিউল বিপর্যয়—এসব অপকর্মের মাধ্যমে বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোকে লাভবান হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন এ চক্রের সদস্যরা। বহরে নতুন নতুন উড়োজাহাজ যুক্ত হলেও শিডিউল বিপর্যয় থামছে না। আসন খালি থাকলেও টিকিট বিক্রি করা হয় না। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িয়ে পড়েছেন চোরাকারবারিতে। অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তে ধরা পড়লেও ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। যাত্রীসেবার মানও যাচ্ছেতাই। এসব কারণে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না বিমান।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সিবিএ পুরো সংস্থাটিকে জিম্মি করে ফেলেছে। কার্গো বিভাগের রপ্তানি শাখার স্পেস কন্ট্রোল, ওয়েট চেকিং, আমদানি শাখার মেইন ওয়্যার হাউস, ডেলিভারি গেটে শ্রমিকদের ডিউটি রোস্টারের নামে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হচ্ছে। সিবিএর কতিপয় নেতা এসব শাখায় নিজেদের নামে ডিউটি নিয়ে সেই কাজ সাধারণ শ্রমিকদের কাছে বিক্রি করছেন। কার্গো বিভাগের শাখাগুলোতে ডিউটি পেতে একজন শ্রমিককে প্রতিদিন পাঁচ শ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। শুধু ওভারটাইম খাতে বিমানকে গুনতে হচ্ছে বছরে কয়েক কোটি টাকা। অভিযোগ আছে, বছরে অন্তত ১৫ কোটি টাকা চাঁদা হিসেবে দিতে হয় বিমান শ্রমিক লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের। লোকসান এড়াতে একাধিকবার ওভারটাইম বন্ধ করতে চেয়েছিল বিমান কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সিবিএ নেতাদের কারণে তা সম্ভব হয়নি।
একাধিক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, বিমানের অধিকাংশ চালকের নিজস্ব মোটরসাইকেল আছে। কিন্তু তাঁরা অফিসের গাড়ি ব্যবহার করেন। এয়ারপোর্ট ট্রাফিক শাখার পাসপোর্ট চেকিং ইউনিট (পিসিইউ) শাখায় পোস্টিং নিতে প্রত্যেক স্টাফকে প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে তিন হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয় সিবিএকে। তার পরও তাঁরা তা দেন। কারণ এ শাখায় প্রত্যেক স্টাফ গড়ে বাড়তি ছয় হাজার টাকা আয় করেন। তা ছাড়া বিমান শ্রমিক লীগ নিজেদের মনোনীত কর্মী নিয়োগ দিয়ে ইমিগ্রেশন শাখাতেও প্রভাব খাটাচ্ছে।
বিমান সূত্র জানায়, চেকিং কাউন্টারে অতিরিক্ত ব্যাগেজ মাসুল আদায়ের নামেও চাঁদাবাজি করে সিবিএ। হারানো ও প্রাপ্তি শাখায় ব্যাগেজের টাকা আদায় করা হয়। সিট রিজারভেশনের জন্যও টাকা নেন কতিপয় নেতা। বিমানের ভাড়া গাড়ির ঠিকাদার ও মালিকদের কাছ থেকেও মাসিক ভিত্তিতে টাকা নেওয়া হয়। বিমানের প্রতিটি নিয়োগের জন্য এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে হয় সিবিএকে। পদোন্নতির জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়।
সিবিএর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তদন্তে চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশন বলাকা ভবনে যায়। দুদক কর্মকর্তারা সিবিএর একাধিক নেতার বিষয়ে খোঁজখবর নেন। বিশেষ করে বছরের পর বছর কাজ না করেই কোটি কোটি টাকার ওভারটাইম উত্তোলন, ইমিগ্রেশন ও লাউঞ্জ এরিয়ায় পছন্দের লোকজনকে ডিউটি করানো, লাগেজ সার্ভিস দিয়ে বিদেশি এয়ারলাইনসের কাছ থেকে ঘুষ আদায়ের অভিযোগ সম্পর্কে তথ্য জানতে চায় দুদক। ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন মোসাদ্দিক আহমেদ সিবিএ নেতাদের প্রভাবের কারণে কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি। তবে তিনি লিখিত আকারে সব তথ্য পরে জানাবেন বলে আশ্বাস দেন দুদক কর্মকর্তাদের।
বছরখানেক আগে শাহজালালের ব্যাগেজ এরিয়ায় দায়িত্ব পালন না করায় বিমানের এক কর্মকর্তা দুই কর্মচারীকে কেবল কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দিয়েছিলেন। এতেই ক্ষুব্ধ সিবিএ নেতাদের অসহযোগিতার কারণে তিন দিন ধরে বিমানের সব ফ্লাইট দেরিতে ছেড়েছে। হুমকি দেওয়া হয়েছিল শোকজ প্রত্যাহার করা না হলে তাঁরা বিমান ও বিমানবন্দর অচল করে দেবেন। পরে বাধ্য হয়ে কর্তৃপক্ষ তা প্রত্যাহার করে নেয়।
সূত্র জানায়, বিমানের ক্যাডেট পাইলট ও আটটি শাখায় অস্থায়ী পদে নিয়োগ নিয়ে নানা অনিয়ম ধরা পড়ে। সেই সূত্র ধরে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে দুদক অনুসন্ধান চালায়। এরই মধ্যে বিমানের এমডির কাছে নথি চাওয়া হয়েছে। অভিযোগ আছে, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের নাম ভাঙিয়ে জাল ও ভুয়া ডিও লেটার দিয়ে একটি চক্র নিয়োগ বাণিজ্যে লিপ্ত। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দুদক আমাদের চিঠি দিয়েছে। সংস্থার প্রতিটি শাখাতেই অনিয়ম হচ্ছে। ২০১৩ সালে সিঙ্গাপুরে এয়ারবাস মেরামতের নামে দুই শ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় সিন্ডিকেট। ২০১৪ সালেও আরেকটি বিমান মেরামতে এক শ কোটি টাকার অনিয়ম পাওয়া যায়। ওই ঘটনায় বিমান কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। কিন্তু রাজনৈতিক তদবিরের কারণে তদন্ত কমিটি নিজেই চাপা পড়ে।
সোনা পাচারে জড়িত সিন্ডিকেট : বিমানের একাধিক কর্মকর্তা সোনা পাচারের সঙ্গে জড়িত। তাঁদের মধ্যে জুনিয়র সিকিউরিটি অফিসার এস এম কামরুল হাসান অন্যতম। এ ছাড়া সুইপিং সুপারভাইজার আবু জাফর, এয়ারক্রাফট মেকানিক মাসুদুর রহমান, মেকানিক অ্যাসিসট্যান্ট আনিস উদ্দিন ভূঁইয়া, মেকানিক মুজিবর রহমান, শাহজাহান সিরাজ ওরফে বাবুল, ইঞ্জিনিয়ারিং অফিসার সালেহ উদ্দিন, বিমানের ঠিকাদার পলাশসহ কয়েকজন ক্রু আছেন। এই চোরাকারবারিরাও বিমানকে নিয়ে খেলছে।
হ্যান্ডেলিং শাখায় ভয়াবহ গাফিলতি : বিমানের সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হচ্ছে হ্যান্ডেলিং শাখায়। প্রতিবছরই অন্তত দেড় শ কোটি টাকারও বেশি লুটপাট করছে সিন্ডিকেট। এদের চিহ্নিত করতে বিভিন্ন সময় একাধিক তদন্ত কমিটি হয়েছে। তাদের রিপোর্ট আমলেই নেওয়া হয়নি। বিমানের এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শাহজালালে গড়ে প্রতিদিন এক শ ফ্লাইট অবতরণ করে। তা ছাড়া সপ্তাহে ১৫ থেকে ২০টি কার্গো ফ্লাইট আসা-যাওয়া করে। একটি বিদেশি উজোড়াহাজে এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ সার্ভিস দিলে বিমানকে গ্রাউন্ড পাওয়ার ইউনিট (জিপিইউ) বাবদ ভাড়া দিতে হয় ১৫ হাজার ৯০০ টাকা। প্রতিটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজে গড়ে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা ও কার্গো ফ্লাইটে গড়ে তিন-চার ঘণ্টা জিপিইউ প্রয়োজন হয়। সে হিসাবে প্রতিদিন ৩৩০ ঘণ্টা জিপিইউ থেকে বিমানের আয় হওয়ার কথা মাসে ১৫ কোটি টাকা। অথচ দেখানো হয় সাত কোটি টাকারও কম। এয়ারকন্ডিশন ইউনিট থেকে মাসে ২৭ কোটি টাকার বদলে আয় দেখানো হয় আট কোটি টাকার মতো। বাকিটা আত্মসাৎ করছেন সিন্ডিকেট সদস্যরা। তাঁদের বিরুদ্ধে কথা বললেই আমাদের বদলি করে দেওয়া হয়। ’
দুদকও পারেনি ব্যবস্থা নিতে : বছর দুয়েক আগে বিমানের সাবেক এমডি কেভিন স্টিল সিবিএ প্রেসিডেন্ট মশিকুর রহমান, ভাইস প্রেসিডেন্ট আজহারুল ইসলাম মজুমদার, ভাইস প্রেসিডেন্ট-১ আনোয়ার হোসেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট-২ ইউনুস খান, জেনারেল সেক্রেটারি মোনতাসার রহমান, অ্যাসিসট্যান্ট জেনারেল সেক্রেটারি রুবেল চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল আলম, মো. আবুল কালাম, সেক্রেটারি মো. আতিকুর রহমান, হারুন অর রশিদ, পাবলিক সেক্রেটারি আবদুল বারী লাবলু, স্পোর্টস অ্যান্ড কালচারাল সেক্রেটারি ফিরোজুল ইসলাম, ওয়েলফেয়ার সেক্রেটারি আবদুস সোবহান, উইমেন অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি আসমা খানম বানু, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি মো. গোলাম কায়সার আহমেদ, এক্সিকিউটিভ মেম্বার মো. আবদুল জব্বার ও বিএফসিসি মো. আবদুল আজাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ এনে নামের তালিকা পাঠিয়েছিলেন দুদকে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। দুদক কার্যালয়ে তলব করা হলেও তাঁদের কেউ সেখানে যাননি।
এ প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিমানকে লাভজনক করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে কেউ যদি বিমানকে জিম্মি করে ফায়দা লোটার চেষ্টা করে তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স দেখানো হবে। সিন্ডিকেট বলে কিছুই থাকবে না। ’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসাদ্দিক আহমেদ বলেন, ‘সিবিএসহ কোনো সংগঠনই বিমানকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। কাউকে রাষ্ট্রের সম্পদ নষ্ট করতে দেওয়া হবে না। কিছুদিন আগে সিবিএর কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে বিমানের এক কর্মকর্তাকে নাজেহাল করার অভিযোগ পাওয়া যায়। বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। রাষ্ট্রের পতাকাবাহী বিমানে কোনো সিন্ডিকেট থাকবে না। তাদের নেটওয়ার্ক ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হবে। ’ তিনি বলেন, ‘জানুয়ারি মাসে বলাকা ভবনে দুদক এসেছিল। আমরা তাদের সব ধরনের সহায়তা দেব বলে জানিয়েছি। ’
বিমানের শ্রমিক লীগের সভাপতি মশিকুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সিবিএ শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আদায়ে কাজ করে। বিমানকে আমরা কখনো জিম্মি করি না। সংস্থাটিকে লাভজনক করতে কর্তৃপক্ষকে সব সময় সহায়তা করি। সংগঠনের কেউ যদি অপরাধে জড়িত থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’ তিনি আরো বলেন, ‘বিমানের কোনো কর্মকর্তা যদি বলে থাকেন, সিবিএ নেতারা সংস্থাকে জিম্মি করে রাখেন তাহলে সেটা ভুল। আমার বিশ্বাস তাঁরা এমন কথা বলতে পারেন না। ’
ছয় মাসের জন্য বিমানের শ্রমিক সংগঠনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ : বেপরোয়া হয়ে ওঠা বিমানের শ্রমিক সংগঠনগুলোর সব ধরনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করেছে সরকার। গত রবিবার শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে জানিয়ে দেয়, কথায় কথায় বিমানে আর কেউ আন্দোলন, মিছিল-মিটিং বা সমাবেশ করতে পারবে না।
এ প্রসঙ্গে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘প্রজ্ঞাপন আমরা হাতে পেয়েছি। ১৯৫৮ সালের এসেনশিয়াল অ্যাক্টে যা যা আছে, আমরা তার সবটাই বাস্তবায়ন করব। ’ তিনি জানান, প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ১৯৫৮ সালের এসেনশিয়াল সার্ভিসেস অর্ডিন্যান্সের ক্ষমতাবলে বিমানের কর্মীদের চাকরিকে জরুরি সেবার আওতায় আনা হলো। কোনো কর্মী যদি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দেওয়া দায়িত্ব পালনে অস্বীকৃতি জানান, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, বর্তমানে বিমানে দুটি ট্রেড ইউনিয়ন আছে। এর একটি হলো বিমান শ্রমিক লীগ, অন্যটি বিমান ১৯১৭ এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন। তা ছাড়া পাইলট, কেবিন ক্রু, ইঞ্জিনিয়ার ও অফিসারদের নামে আছে আরো চারটি সংগঠন। দীর্ঘদিন ধরে বিমান কর্তৃপক্ষ এসব সংগঠনের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। মাসখানেক আগে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় শ্রমিক সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করতে শ্রম মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করে। তার আলোকেই এ সিদ্ধান্ত, জানান শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মিকাইল শিপার। তিনি বলেন, বিমান কর্মীদের ‘অত্যাবশ্যকীয় শ্রমিক’ ঘোষণা করে আগামী ছয় মাসের জন্য এ খাতের সেবায় সব ধরনের আন্দোলনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে বিমানে দাবি-দাওয়া উত্থাপনের নামে কেউ কোনো আন্দোলন করতে পারবে না।


http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2017/04/04/482457