বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ পরিচালিত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সেবা নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সাধারণ যাত্রী থেকে শুরু করে ভিআইপিদের সেবা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
ব্যবহারকারীরা জানিয়েছেন, সাধারণ যাত্রীদের টয়লেট দুর্গন্ধময়। মুখে রুমাল না চেপে যাওয়ার উপায় নেই। আবার ভিআইপিদের টয়লেটেও উত্কট গন্ধ। তা ছাড়া বিমানবন্দরের সর্বত্র মশার উৎপাত। মালপত্র হারানোর নৈমিত্তিক ঘটনা তো রয়েছেই।
অভ্যন্তরীণ রুটের এয়ারক্রাফট দিয়ে আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইট পরিচালনা করার অভিযোগ তো রয়েছেই। আর সময়মতো ফ্লাইট ছাড়ার সূচি বিমান করতে পারেনি কখনোই।
বিমানবন্দরের এই অব্যবস্থাপনা নিয়ে এমনকি প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামও গত ১ মার্চ বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের কাছে চিঠি লিখেছেন। তাঁর ওই চিঠিতে বিমান ও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সেবার পুরো চিত্র ফুটে উঠেছে।
এইচ টি ইমামের চিঠিতে বলা হয়, বোর্ডিং ব্রিজের পাশে টয়লেটগুলোর দরজা প্রায়ই বন্ধ হয় না এবং তা থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। বিমানবন্দরের সার্বিক পরিচ্ছন্নতার মান অত্যন্ত নিম্ন। এ কারণে টার্মিনাল ভবনের সর্বত্র মশার উপদ্রব প্রকট আকার ধারণ করেছে। সৌন্দর্যবর্ধন কাজে রুচির অভাব রয়েছে। লাগেজ পেতে বিলম্ব ও লাগেজ হারিয়ে যাওয়ার অভিযোগ অনেক পুরনো। ওভারহেড লাগেজ কম্পার্টমেন্টে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাল্কহেডের সামনে লাগেজ রাখতে দায়িত্বরত ক্রুরাই সহায়তা করেন, যা বিমানের নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি এবং ফ্লাইট চলাচল নিয়মের পরিপন্থী।
চিঠিতে এইচ টি ইমাম বলেন, ‘খোলা জায়গায় অসংখ্য কার্গো পড়ে থাকতে আমি নিজেই দেখেছি। অথচ বিমান ও বিমানবন্দরের সেবার মান দিয়েই একটি দেশ সম্পর্কে বিদেশি অতিথিদের প্রাথমিক ধারণা তৈরি হয়। ’
এইচ টি ইমাম গত ১৯ ডিসেম্বর রাতের ফ্লাইটে কলকাতা থেকে ঢাকায় ফেরেন। ওই সময় তিনি বিমান ও বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপনার যে চিত্র দেখেন তাতে হতাশ হন। এর কয়েক দিন পর ২৩ জানুয়ারি তাঁর এক আত্মীয় কলকাতা থেকে ফেরার সময় ফ্লাইট বিলম্বসহ নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়েন। এই দুটি ঘটনায় হতাশ হয়ে তিনি ওই চিঠি লেখেন।
শুধু এইচ টি ইমাম নন, বিমান ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সেবা নিয়ে সন্তুষ্ট নন সংসদ সদস্যরাও। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সংসদের সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে সংসদ সদস্যরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি আবদুর রউফ বৈঠকে জানান, লাগেজ পেতে দেড়-দুই ঘণ্টা সময় লেগে যায়, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে যাত্রীদের কাছে লাগেজ পৌঁছানো দরকার। শাহজালাল বিমানবন্দরে বেসরকারি বিভিন্ন বিমান সংস্থার গাড়ি, এমনকি হেলিকপ্টার পর্যন্ত যাত্রী আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভিআইপি নন, এমন লোকও ভিআইপি লাউঞ্জ বা ভিআইপি অপেক্ষা কক্ষ (ওয়েটিং রুম) ব্যবহার করেন। টয়লেটেও উত্কট গন্ধ বলে তিনি অভিযোগ করেন। একই বৈঠকে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি নাভানা আক্তার বলেন, বিমানবন্দরে লাগেজ নিয়ে নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়। কয়েক দিন আগে একজন এমপি লাগেজের জন্য তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলেন।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানান, ভিআইপিদের চেয়ে বেশি অভিযোগ প্রবাসী বাংলাদেশিদের। বিশেষ করে রেমিট্যান্স পাঠানো প্রবাসী শ্রমিকদের শুধু বিমানের কর্মচারীরাই অসহযোগিতা করেন তা-ই নয়, বিমানবন্দরের নিরাপত্তারক্ষী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সুযোগ পেলেই নাজেহাল করেন কিংবা টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেন। বিমানের আন্তর্জাতিক রুট এবং অভ্যন্তরীণ রুটের এয়ারক্রাফট নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। বিমানের ঢাকা-কলকাতা রুটে ছোট পরিসরের ড্যাশ-৮ বিমান দিয়ে দৈনিক দুটি ফ্লাইট চালানো হয়। এই রুটে বিজনেস ক্লাসের ব্যাপক চাহিদা থাকার পরও ড্যাশ-৮ দিয়ে ফ্লাইট চালায় বিমান। ড্যাশ-৮-এ কোনো বিজনেস ক্লাস নেই। এতে বিমান একদিকে বাড়তি আয়ের সুযোগ হারাচ্ছে; অন্যদিকে দৈনিক দুটি ফ্লাইট পরিচালনার কারণে ল্যান্ডিং ফি, হ্যান্ডলিং চার্জ, বিমানবন্দর ব্যবহারের ফি দ্বিগুণ হারে পরিশোধ করতে হচ্ছে।