৪ এপ্রিল ২০১৭, মঙ্গলবার, ১০:০৮

হজের ব্যাগ নিয়ে এবারও টানাটানি

চলতি বছরের হজযাত্রীদের নিবন্ধন প্রক্রিয়াই শেষ হয়নি। তার আগেই চলছে হজযাত্রীদের জন্য ট্রলিব্যাগ কেনার তোড়জোড়। এবারও ব্যাগ কেনা নিয়ে রশি টানাটানি চলছে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হজ এজেন্সিগুলোর সংগঠন হাবের মধ্যে। হাব নেতাদের মধ্যেও চলছে নানামুখী তৎপরতা। সংগঠনের কয়েক নেতা ব্যাগ কিনতে অনুমতি চেয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে তাগাদা দিচ্ছেন। অন্যদিকে, কয়েক নেতা হাবের মাধ্যমে ব্যাগ সরবরাহের বিরোধিতা করে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন। মন্ত্রণালয় বলছে, হজযাত্রীদের ভালো মানের ব্যাগ সরবরাহ করতে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বান করা হবে।

বিগত বছরগুলোতেও ব্যাগ নিয়ে এমন 'টানাহেঁচড়া' হয়েছে। অতীতে নিম্নমানের ট্রলিব্যাগ সরবরাহ করায় হজের সময় ভোগান্তিতে পড়েন হজযাত্রীরা। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হাজিরা সবাই জাতীয় পতাকা সংবলিত একই ধরনের ব্যাগ ব্যবহার করেন। হাব নেতাদের একাংশ এবারও ব্যাগ সরবরাহের কাজ পেতে চায়। কমিশন বাণিজ্য ও দুর্নীতির সুযোগ থাকায় তারা ট্রলিব্যাগ কিনতে বিভিন্ন মহল থেকে চাপ সৃষ্টি করছে বলে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে।

তবে হাব নেতারা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। সংগঠনের মহাসচিব শেখ মো. আবদুল্লাহ বলেন, প্রচলিত হজনীতি অনুযায়ী ট্রলিব্যাগ তৈরির দায়িত্ব হাবের। প্রতি বছরই সরকার নির্ধারিত মূল্যের মধ্যেই হাব মানসম্মত ব্যাগ কেনার কাজটি করে থাকে। অনেক সময় ব্যাগের জন্য বরাদ্দ অর্থের কারণে সরবরাহকারী সংস্থাগুলো নিম্নমানের ব্যাগ দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে এবার সরকার অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে। আশা করছি, এখন থেকে ভালো মানের ব্যাগ সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই ব্যাগ তৈরির অনুমোদন চাওয়ার কারণ জানতে চাইলে আবদুল্লাহ বলেন, তারা এখনও এমন কোনো অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেননি।

১১ এপ্রিল নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরই ব্যাগ তৈরির অনুমোদন চাওয়া হবে। তবে মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ২০ এপ্রিল হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) নির্বাচন। এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান মহাসচিব শেখ আবদুল্লাহ। গত চার বছর কমিটিতে থাকা আবদুল্লাহ ও তার অনুসারীরা হাজিদের ট্রলি সরবরাহের কাজটি করেছেন। এ জন্য হাবের নেতাদের মোটা অঙ্কের কমিশন দিতে হয়েছে। ২০ এপ্রিলের নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী ব্যয়ের অর্থ তুলতেই হাব নেতারা আগাম ব্যাগ কেনার প্রক্রিয়া শুরুর অনুমোদন চেয়েছেন বলে জানিয়েছে ওই সূত্র।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি ২০টি হজ এজেন্সির মালিকের পক্ষ থেকে হাবকে ব্যাগ তৈরির আগাম অনুমোদন না দিতে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। এতে সরকারি ব্যবস্থাপনা অথবা এজেন্সিগুলোকেই সরকারি নমুনা অনুসারে নিজ প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধিত হাজির ব্যাগ তৈরির অনুমতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে ধর্ম সচিব আবদুল জলিল সমকালকে বলেন, অনুমতি চাইলেও এখনই কাউকে ব্যাগ তৈরির অনুমতি দেওয়া হবে না। আগে হজযাত্রীদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। তারপরই বিধি অনুযায়ী ব্যাগ তৈরি করতে দেওয়া হবে। কয়েক এজেন্সির মালিকের আবেদন বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্ম সচিব বলেন, এ জন্য প্রয়োজনে হজনীতি সংশোধন করা হবে, যাতে কোনোভাবেই নিম্নমানের ব্যাগ দেওয়া না হয়।

ট্রলিব্যাগ তৈরির প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত একাধিক কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী জানান, ট্রলিব্যাগের জন্য প্রতি বছর যে বরাদ্দ থাকে, তার একটি বড় অংশই হাব নেতাদের পকেটে চলে যায়। ফলে হজযাত্রীরা টাকা দিয়েও মানসম্মত ব্যাগ পান না। সরকারি তত্ত্বাবধানে তৈরি হলে, মানসম্মত ব্যাগ দেওয়া সম্ভব হবে।

তারা জানান, আগে সরকার ট্রলিব্যাগের জন্য ব্যাগপ্রতি ১ হাজার ৭০০ টাকা বরাদ্দ রাখলেও নির্মাতারা পেতেন ১ হাজার ৬০০ টাকা। ব্যাগপ্রতি তাদের আরও ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা খরচ হতো। শেষ পর্যন্ত ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় ব্যাগ তৈরি করতে হতো।

http://bangla.samakal.net/2017/04/04/282505#sthash.oOnxe569.dpuf