৮ জুন ২০২১, মঙ্গলবার, ১:৪৯

সরকার নির্ধারিত মূল্যে খুলনায় এলপি গ্যাস বিক্রি হচ্ছে না

লিকুফাইড পেট্টোলিয়াম গ্যাস বা তরলীকৃত গ্যাস বা এলপি গ্যাস। বর্তমানে শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছেও একটি অতি প্রয়োজনীয় জ্বালানী। আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃত এক কেজি গ্যাস পোড়ানোর মানে ১৮ কেজি কাঠ পোড়ানোর হাত থেকে রক্ষা। এজন্য জ্বালানী গ্যাস পরিবেশবান্ধবও বটে। রাধুনীদের কাছে এর কদরতো রয়েছেই। সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়ে গ্যাসের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা সরকারের দায়িত্ব। এজন্য সরকারেরই সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বা বিইআরসির মাধ্যমে প্রতি মাসে গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। চলতি মাসের (জুন) জন্য বিইআরসি খুচরা পর্যায়ে এলপি গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ করেছে ৮৪২ টাকা। গত পয়লা জুন থেকে যেটি বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। খুলনার বাজারে বিইআরসির ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না এমন প্রশ্ন অনেকের। ওই প্রশ্নের জবাব খুঁজতেই গত কয়েকদিন ধরে খুলনার গ্যাসের বাজার ঘুরে দেখা গেলো উল্টো চিত্র। ব্যবসায়ীদের বক্তব্য ‘সরকার গ্যাসের দাম কমায় আর কোম্পানীগুলো বাড়ায়’। পয়লা জুন থেকে যেখানে গ্যাসের পূর্বমূল্যের চেয়ে ৬৪ টাকা কমেছে সেখানে কোম্পানীগুলো থেকে উল্টো সিলিন্ডার প্রতি ৫০ টাকা করে বেশি নেয়া হচ্ছে বলেও জানান এলপি গ্যাস ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে খুলনার বাজারে ১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে সাড়ে নয়শ’ টাকা। অথচ সরকার বা বিইআরসি নির্ধারণ করেছে ৮৪২টাকা। অর্থাৎ প্রতি সিলিন্ডারেই বেশি নেয়া হচ্ছে ১০৮টাকা করে।

নগরীর বয়রাস্থ সাকিল সুপার মার্কেটের আয়ান ট্রেডার্সে গিয়ে দেখা যায়, একমাত্র ওমেরা ছাড়া অন্যান্য সকল কোম্পানীর ১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে সাড়ে নয়শ’ টাকা করে। আর ওমেরা কোম্পানীর সিলিন্ডার দাবি করা হয় এক হাজার টাকা। গ্যাসের দাম কমলেও বেশি কেন চাওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে ট্রেডার্সের মালিক সৈয়দ নাজমুল হুদা ত্বোহা বললেন, ‘সরকার টিভিতে দাম কমায়, কিন্তু কোম্পানীগুলোতে বাড়িয়ে দিয়েছে’।

খুচরা পর্যায়ে দাম যেমন বেশি চাওয়া হয় তেমনি কোম্পানীর ওপর দোষ চাপিয়ে পরিবেশকরাও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে রেখেছেন বলে বাজার ঘুরে দেখা গেছে। নগরীর জোড়াগেটের মেসার্স মাসুম ব্রাদার্সে গিয়ে এলপি গ্যাসের দাম জানতে চাইলে বলা হয়, গ্যাস নেই। সামনেই সারি সারি সিলিন্ডার মজুদ থাকার পরও গ্যাস না থাকার কারণ জানতে চাইলে সেখানকার পরিবেশক জানান, কোম্পানী থেকে দাম বাড়িয়ে দেয়ার কারণে তিনি গ্যাস তুলছেন না। সরকার যেখানে দাম কমিয়েছে সেখানে কোম্পানী কেন বাড়ালো জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটি কোম্পানীর ব্যাপার।
খুলনার গ্যাসে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ক্রেতা বসুন্ধরা কোম্পানীর। এরপর পর্যায়ক্রমে ওমেরা, বিএম, সেনা কল্যান, যমুনা, লাফস ও বেক্সিমকো কোম্পানীর গ্যাস বাজারে চলছে। কিন্তু সাধারণ ভোক্তাদের জন্য মিলছে না সরকারি এলপি গ্যাস।

এদিকে, চলতি মাসের জন্য ১২ কেজির এলপি গ্যাসের মূল্য ৮৪২ টাকা করলেও রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির এলপিজির দাম পরিবর্তন করা হয়নি। সরকারি সাড়ে ১২ কেজি এলপিজির দাম আগের ৫৯১ টাকাই বহাল রাখা হয়।

এর আগে গত ১২ এপ্রিল দেশে প্রথমবারের মতো এলপিজির দাম নির্ধারণ করেছিল বিইআরসি। ওই সময় বলা হয়েছিল, বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিল রেখে প্রতি মাসে দাম সমন্বয় করা হবে। এরপর ২৯ এপ্রিল একদফা দাম সমন্বয় করা হয়। সর্বশেষ গত ৩১ মে দাম নির্ধারণ করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এলপিজি তৈরির মূল উপাদান প্রপেন ও বিউটেন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। প্রতি মাসে এলপিজির এই দুই উপাদানের মূল্য প্রকাশ করে সৌদি আরামকো। এটি কার্গো মূল্য (সিপি) বা সৌদি সিপি নামে পরিচিত। এই সৌদি সিপিকে ভিত্তি মূল্য ধরে দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় করে বিইআরসি। বিগত চার মাস ধরে বিশ্ববাজারে এলপিজির দাম কমছে বলেই আগের মাসের চেয়ে সিলিন্ডারপ্রতি ৬৪ টাকা কমিয়ে এ মাসের জন্য দাম নির্ধারণ করা হয় ৮৪২টা।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শিকদার শাহীনুর আলম বলেন, খুলনায় গ্যাসের মূল্য বেশি নেয়ার অভিযোগ তাদের কাছেও এসেছে। শীঘ্রই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।

গ্যাসের মূল্য বেশি নেয়ার কারণ জানতে চাইলে খুলনা এল,পি গ্যাস ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি তোবারেক হোসেন তপু বলেন, বিষয়টি নিয়ে তারাও বিব্রত। একদিকে সরকার দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছে অপরদিকে পরিবেশকরা তাদের কাছ থেকে বেশি দাম নিচ্ছেন। কোম্পানী গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে এমনটি জানিয়ে পরিবেশকরা মূল্য বেশি নিচ্ছেন বলেও তিনি জানান। বিষয়টি সমিতির পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের সাথে আলোচনা করবেন বলেও জানান। তবে করোনা পরিস্থিতিতে ব্যস্ত থাকার কারনে খুলনার জেলা প্রশাসকের সাথে এখনও সাক্ষাৎ মেলেনি। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা কেনা দামের ওপরই গ্যাস বিক্রি করে থাকেন। সে ক্ষেত্রে তাদের কেনা দাম যদি কম পড়ে প্রয়োজনে তারা সাড়ে নয়শ’ কেনো সাতশ’ টাকায়ও বিক্রিতে প্রস্তুত। এজন্য কোম্পানী ও পরিবেশক পর্যায়ে আগে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত বলেও তিনি মনে করেন।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য মো. মকবুল-এ-ইলাহী চৌধুরী বলেন, প্রতিবার মূল্যবৃদ্ধির সাথে সাথেই বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মূল্য নির্ধারণ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের কথা জেলা প্রশাসকদের জানিয়ে দেয়া হয়। স্থানীয় পর্যায়ে জেলা প্রশাসকদেরই বাজার মনিটরিং ও তদারকি করার কথা। পাশাপাশি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ন্যায্য মূল্যে গ্যাস বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত করে থাকে।

https://dailysangram.com/post/454791