৮ জুন ২০২১, মঙ্গলবার, ১:৪৮

রাজধানীতে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশংকা

এক সপ্তাহের ব্যবধানে সিলেটে ফের দুই দফা ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। তাও আবার মাত্র ১০ মিনিটের ব্যবধানে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ২৮ এবং ৬টা ২৯ মিনিটে দুটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রধান আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানান, সিলেট অঞ্চলেই ছিল ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। ভূমিকম্প টের পেয়ে বড় ভবন থেকে মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। শহরের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এর আগে গত ৩০ মে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর দুইটার মধ্যে সিলেটে মোট পাঁচবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। পরের দিন আবারও দুই বার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল সেখানে। বাংলাদেশ ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র জানায়, তারা চার দফা ভূ-কম্পন রেকর্ড পেয়েছে। মাত্রা কম থাকায় দু-একটি পর্যবেক্ষণে আসেনি। তবে এসব ভূ-কম্পনের মধ্যে একটির মাত্রা রিখটার স্কেলে সর্বোচ্চ ৪.১ এবং এর কেন্দ্রস্থল ঢাকা থেকে ১৯২ থেকে ২৩৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব অর্থাৎ সিলেট অঞ্চলে। অল্প সময়ের ব্যবধানে বারবার ভকম্পন হওয়াকে স্বাভাবিকভাবে দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ছোট ছোট ভূকম্পন বড় ধরণের ভূমিকম্পের পূর্বলক্ষণ। ভূমিকম্পনস্থল ঢাকা থেকে বেশী দূরে না হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা রাজধানীকে খুবই স্পর্শকাতর এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তারা বলছেন, যেভাবে সিলেটে ভূমিকম্প হচ্ছে, সেটি রাজধানীতেও হতে পারে। তাই আগে থেকেই পূর্ব প্রস্তুতি নিতে হবে।

সূত্র মতে, গত কয়েকমাসের ব্যবধানে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হচ্ছে। এপ্রিল মাসে সর্বশেষ রাজধানীতে ভূমিম্পকম্প অনুভূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৬। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ঢাকা থেকে ৩৯৭ কিলোমিটার দূরে আসামে ছিল। সম্প্রতি সিলেটে দফায় দফায় ভূমিকম্প হওয়ায় দেশে নতুন করে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। আর্থ অবজারভেটরি সেন্টার বলছে বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার আগে এ ধরনের প্রি-শক হয় বলে জানান সংস্থাটি। বিশেষজ্ঞরা শঙ্কা করছেন উৎপত্তিস্থল সিলেট বা দেশের বাইরে হলেও বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাজধানী ঢাকা। এমন অবস্থায় সরকারকে জরুরি প্রস্তুতি নেওয়ার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।

জানা গেছে, দেশে মাঝারি মাপের ভূমিকম্প হলে যে ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে, তার মোকাবেলারও কোনো প্রস্তুতি নেই। এর মূল কারণ, আমাদের ভবনের সংখ্যা অনেক। ভূমিকম্পের ঝুঁকি কমানোর মূল অস্ত্র হচ্ছে বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করা। তবে কেবল বিল্ডিং কোড থাকলেই হবে না, প্রয়োজন এর সফল ও সঠিক প্রয়োগ। ২০০৬ সালের বিল্ডিং কোডের সঠিক প্রয়োগ হয়নি। বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মিত হচ্ছে কিনা, তা দেখার জন্য তেমন কোনো কর্তৃপক্ষ ছিল না। প্রতিবার বিল্ডিং কোডের নতুন সংস্করণ বের করতে অনেক সময় চলে যাচ্ছে। ভূতত্ত্ববিদ ও সিসমোলজিস্টদের মতে, বাংলাদেশে যে কোনো সময় মাঝারি বা বড় মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে। এ জন্য আমাদের কাঠামোগত ও অকাঠামোগত প্রস্তুতি বাড়ানো দরকার এখনই। এর মধ্য দিয়ে ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।

বিগত ২০০ বছরের ইতিহাসে দেখা যায়, ভূতাত্ত্বিক ও ভূমির গঠন অনুসারে বাংলাদেশ ভূ-কম্পনপ্রবণ অঞ্চল। দেশে আটটি বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছে। এর মধ্যে একটি হয়েছিল ১৮৬৯ সালে সিলেট অঞ্চলের কাছার এলাকায়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৬। ১৮৮৫ সালের বেঙ্গল ভূমিকম্প, ১৯১৮ সালের শ্রীমঙ্গল, ১৯২৩ সালের দুর্গাপুর ভূমিকম্পের কারণে সিলেট অঞ্চল আগে থেকেই রয়েছে ঝুঁকিতে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের ঘনবসতিপূর্ণ রাজধানীর কাছে ভূমিকম্প হলে তা সাম্প্রতিককালের অন্য সব বিপর্যয়কে ম্লান করে দেবে। বড় ধরনের ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে ঢাকার অবস্থান ভূমিকম্পের উৎসস্থল থেকে ৫০ থেকে ৪০০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভূমিকম্প মোকাবিলায় দেশের না আছে সচেতনতা, না আছে প্রস্তুতি। বাড়িঘর তৈরিতে নিয়ম-নীতি মানা হয় না। এমন অনেক বহুতল ভবন তৈরি হয়, যেগুলো ভূমিকম্প ছাড়াই হেলে বা ধসে পড়ে। ভূমিকম্প হলে এসব ভবনের অবস্থা কী হবে, তা ভাবতেও কষ্ট হয়। ডোবা-নালা ভরাট করে প্রয়োজনীয় ভিত্তি ছাড়াই ভবন তৈরি করা হচ্ছে। ভূমিকম্প হলে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর মতো প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই বললেই চলে। বড় বড় শহরে অপরিকল্পিতভাবে এমন সব অলিগলিতে বহুতল ভবন তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে উদ্ধারের যন্ত্রপাতি পৌঁছানোই কঠিন। যাদের এসব তদারকি করার কথা, তারা কিছুই করে না। এর ওপর রয়েছে গ্যাস সরবরাহের পাইপলাইন এবং মাথার উপর বিদ্যুতের জঞ্জাল। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে ভবন ধসে যত মানুষ মারা যাবে, তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ মারা যাবে বিদ্যুৎ ও গ্যাসলাইন থেকে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে।

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন গত ভূমিকম্পে যে কম্পন অনুভূত হলো এতে ভূকম্পনের জন্য দায়ী চ্যুতিশক্তির খুবই সামান্য শক্তি বের হয়েছে। এ অঞ্চলে স্থানচ্যুতির পুরো শক্তি ভেতর থেকে বের হয়নি। যা আরো বড় ধরনের ভূমিকম্পের হওয়ায় আশঙ্কা তৈরি করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন। ভূমিকম্প নিয়ে বাংলাদেশের প্রস্তুতি খুবই দুর্বল। তাদের মতে বাংলাদেশে ভূমিকম্প হলে ক্ষতিগ্রস্ত ৭০ হাজার ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরানোর মতো প্রশিক্ষিত জনবল নেই। ২০০৫ সালে সেনাবাহিনীর এজন্য ৪শ’ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনার সুপারিশ করা হয়েছিল। তা কাটছাট করে ১২০ কোটিতে নামিয়ে আনা হয়। অনুসন্ধানে দেখা যায়, সরকার ভূমিকম্পের দুর্যোগ মোকাবেলায় আরও তিন বছর আগে প্রায় ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকার একাধিক প্রকল্প নিলেও সেগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে ধীরগতিতে। এসব প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও যথার্থতা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। অবশ্য গণপূর্ত মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম বলেছেন, ভূমিকম্পের ঝুঁকি নিরসনে বহুতল ভবনের ত্রুটি-বিচ্যুতি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এরপর চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারকে সব উন্নয়ন পরিকল্পনার মধ্যে দুর্যোগ মোকাবিলার বিষয়টিকে যুক্ত করতে হবে। সময় বদলে যাচ্ছে। জীবন বাঁচাতে এখনই বড় আকারের উদ্যোগ হাতে নিতে হবে। সম্প্রতি ভূমিকম্পে এ ব্যাপারে আমাদের সজাগ না করলে এ আশঙ্কা দিন দিন বাড়বে। তাই এখনই নগরদুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে আরও সমন্বিত এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী গতিশীল করা সময়ের দাবি।

আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ঝুঁকি বেশি। একই কারণে রাজধানী ঢাকা থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে রিখটার স্কেলে সাড়ে ৭ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তা যদি হয়, তাহলে সব লণ্ডভণ্ড হয়ে ঢাকা হবে কংক্রিকেটর স্তূপ। কারণ, ৭০ শতাংশ বহুতল ভবনই ভূমিকম্পসহনীয় নয়। এতে করে ধসে যেতে পারে ৭২ হাজার ভবন। বিশেষজ্ঞ এবং নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, ঢাকায় অনিয়ন্ত্রিত, অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ ও বিপজ্জনক গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগের কারণে বড় ভূমিকম্পে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ ইনস্টিটিউটের ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ কেভিন ক্রাজিকের নিবন্ধে দক্ষিণ এশিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্প ঝুঁকির তালিকায় বাংলাদেশকে রাখা হয়েছে। নিবন্ধে বাংলাদেশ অংশে তিনি লিখেছেন, উত্তর-পূর্ব অঞ্চল থেকে দেশের মধ্যবর্তী অংশের মধ্য দিয়ে উত্তর দিকে ভূমির গভীরে বহুদিন আগে বিলীন হয়ে যাওয়া একটি ‘ফল্টস’ আবারও সক্রিয় হচ্ছে। এটি বর্তমানে শক্তি সঞ্চয়ের অবস্থায় রয়েছে। একটি সময় পরে সঞ্চিত শক্তি উন্মুক্ত হতে শুরু করলে তখন যে কোনো মুহূর্তে ভয়াবহ ভূমিকম্প হতে পারে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম নদী অববাহিকা ও সমুদ্র উচ্চতার খুব কাছাকাছি হওয়ায় সুনামির হুমকিতেও রয়েছে। বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে একদিকে যেমন অবিন্যস্ত বহুতল ভবনগুলো ধসে পড়বে, অন্যদিকে নদীগুলোর গতিপথে পাল্টে যেতে পারে। এতে করে ভূমি বিন্যাসেও বড় পরিবর্তন ঘটতে পারে।
কেভিন ক্রাজিকের এই মতামতের বিষয়ে জানতে চাইলে আবহাওয়া দপ্তরে ভূমিকম্পের কেন্দ্র নির্ণয়ের দায়িত্বে থাকা বিশেষজ্ঞ মমিনুল হক বলেন, বাংলাদেশ ভারতীয়, ইউরোশীয় ও বার্মা এই তিন গতিশীল বা সম্প্রসারণশীল আন্তঃমহাদেশীয় প্লেটের সংযোগ স্থলে অবস্থিত। এর মধ্যে ইউরোশীয় প্লেটের মধ্যে আছে নেপাল। সেখানে ভূমিকম্প হলে বাংলাদেশ কেঁপে ওঠে। তবে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল অনেক দূরে হওয়ায় এর প্রবল প্রভাব পড়ে না। অন্যদিকে, ভারতীয় প্লেটের মধ্যে আসাম সীমান্তে ভূমিকম্প হলে তার প্রভাব বড় আকারে হতে পারে। বিশেষ করে উত্তর-পূর্বের সিলেট অঞ্চলে ডাউকি ফল্টের অবস্থান ঢাকা থেকে মাত্র ১৫০ কিলোমিটার দূরে। আর বার্মা ফল্টের অবস্থান চট্টগ্রামের কাছে পাহাড়ি অঞ্চলে। মমিনুল হক বলেন, ১৯১৮ সালের পর ঢাকার খুব কাছাকাছি কেন্দ্রস্থলের মধ্যে বড় ধরনের কোনো ভূমিকম্প হয়নি। এখন যে সময়টা যাচ্ছে সেটা আসলে গতিশীল প্লেটের শক্তি সঞ্চয়ের সময়। সঞ্চিত শক্তি যখনই উন্মুক্ত হওয়া শুরু করবে তখনই বড় মাত্রায় ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। তবে কতদিন শক্তি সঞ্চিত হতে থাকবে আর কবে উন্মুক্ত হবে, তা কোনো প্রযুক্তি দিয়ে কারও পক্ষে জানা সম্ভব নয়।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, কেভিন ক্রাজিক তার নিবন্ধে যে আশঙ্কা করেছেন তা অনেকটা অতিরঞ্জিত। কারণ, তার ব্যাখ্যা অনুযায়ী বাংলাদেশের মাঝ বরাবর কোনো ফল্ট চলে যাওয়ার তথ্য পাওয়া যায় না। বরং দুই দিকে দুটি ফল্ট আছে। তা ছাড়া বঙ্গোপসাগারের তলদেশ অপেক্ষাকৃত কম গভীর হওয়ায় এবং সমুদ্রসীমার খুব কাছে মহীসোপান থাকায় এ অঞ্চলে সুনামির আশঙ্কাও অনেক কম। মহীসোপান সুনামি প্রতিরোধে খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখে। তাই বলে বাংলাদেশ ভূমিকম্পের বড় ঝুঁকিতে নেই- এটা বলা যাবে না।

নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবীব দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় বহুতল ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত ঝুঁকি নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ভূমিকম্পের বড় ঝুঁকিতে আছে- এটি একাধিক গবেষণা থেকে বারবার প্রমাণিত হয়েছে। এ ধরনের ঝুঁকিতে যে সব দেশ থাকে, সেসব দেশকে ঝুঁকি মোকাবেলায় অনেক বেশি সচেতন থাকতে হয় বহুতল ভবন নির্মাণ এবং নগর ব্যবস্থাপনা বিষয়ে। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য বাংলাদেশে বিশেষত ঢাকার ক্ষেত্রে এটি একেবারেই গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, এখন যদি ঢাকা বড় মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তাহলে তিনটি বড় বিপর্যয় ঘটবে। প্রথমত, ঢাকার অবিন্যস্ত, অপরিকল্পিত ও অপরিবীক্ষণকৃত ভবনগুলো বিধ্বস্ত হবে।

রাজউক ও বুয়েটের গবেষণায় দেখা গেছে, রাজউকের এলাকায় থাকা ১২ লাখ এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের এলাকায় থাকা প্রায় চার লাখ ভবনের ৭০ শতাংশই ভূমিকম্প সহনীয় নয়। অর্থাৎ বড় মাত্রায় ভূমিকম্প হলে এগুলো বিধ্বস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। সরকারের সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির সমীক্ষাতেই বলা হয়েছে, ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হলে রাজধানীতে প্রায় ৭২ হাজার ভবন ধসে পড়বে। এর অর্থ বড় ভূমিকম্প হলে মুহূর্তেই ঢাকা কংক্রিটের স্তূপে পরিণত হবে।

সূত্র মতে, ২০১৬ সালে দেশে দুটি ভূ-কম্পন অনুভূত হওয়ার পর সরকারি পর্যায়ে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় দুটি বড় প্রকল্প নেওয়া হয়। এর মধ্যে জাইকার অর্থায়নে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘আরবান বিল্ডিং সেফটি’ নামে একটি প্রকল্প নেয় গণপূর্ত অধিদপ্তর। এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ঢাকার ভবনগুলো ভূমিকম্প সহনীয় করে তোলা। প্রায় একই সময়ে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ১ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশ আরবান রেজিলিয়েন্স’ নামে আরও একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, রাজউক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ও পরিকল্পনা কমিশনের যৌথভাবে বাস্তবায়ন করা এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ঢাকা ও সিলেটে ভূমিকম্পের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ভবনগুলোকে ভূমিকম্প সহনীয় করে তোলা। গৃহায়ন অধিপ্তরের প্রকল্পের অগ্রগতি খুব আশাপ্রদ নয় বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির অগ্রগতি খুব বেশি হয়েছে, এটা বলা যাবে না। তবে এ প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

https://dailysangram.com/post/454836